শেখ হাসিনার প্রেসক্রিপশনে এবার কোন নির্বাচন হবে না: রিজভী

 শেখ হাসিনার প্রেসক্রিপশনে এবার কোন নির্বাচন হবে না: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার:শেখ হাসিনার প্রেসক্রিপশনে এবার কোন নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব যাই বলুন না কেন, অবৈধভাবে সশস্ত্র শক্তি প্রয়োগ করে আর ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। দেশের জনগন এবং বিশ^বাসীর কাছে এটা স্বীকৃত যে অবৈধ সরকার গোটা দেশ অবৈধভাবে দখল করেছে। গত চৌদ্দ বছর ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতের মৃত্যুর ঘটনা ছিলো হাড়-হিম করা আতঙ্কের শিহরণ, জোরপূর্বক গুম, নারীর প্রতি সহিংসতা অত্যুগ্র মাত্রায় বৃদ্ধি, সাংবাদিক হত্যা, বেআইনী আটকের ও রহস্যজণক নিখোঁজের হিড়িকের মধ্য দিয়ে যেখাবে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা দেশ চালিয়েছেন সেই প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দেশ শাসনের অবসান ঘটাতে এবার জনগণ সর্বাত্মক প্রস্তুত আছে। 
মঙ্গলবার (০৪ জুলাই) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 
রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশটা আওয়ামী নেতাদের বাপ-দাদার জমিদারী নয়। এরা আক্রমণাত্মক ভাষায় শিষ্টাচার ও বিনয়কে বিদায় দিয়েছে। যখন যা ইচ্ছে সেটা করবেন এবং বলবেন সেই দিন শেষ হয়ে আসছে। দেশের জনগণকে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর কাছে কৃপাপ্রার্থী বানানোর চেষ্টার অবসান ঘটিয়ে নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। 
তিনি বলেন, টুঙ্গিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার লক্ষ্য দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করা’- চৌদ্দ বছর ধরে অবৈধভাবে পুলিশের ডা-াতন্ত্রের শাসনের পর আর কবে আপনি মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করবেন। আপনার আসল লক্ষ্য আপনি বাস্তবায়ন করেছেন মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে, মানবাধিকার কেড়ে নিয়ে, ন্যায় বিচার কেড়ে নিয়ে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ দেশের সম্পদ লুট করে ফোকলা করে দিয়ে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, আপনি ৫-১০ টাকা কেজি কাচা মরিচকে এখন ১ হাজার টাকায় উন্নীত করেছেন। সাধারণ মানুষকে আধপেটা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আপনার মনের ইচ্ছানুযায়ী রায় লিখিয়ে সেটি আদালতের মাধ্যমে বিএনপি’র চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছেন। বিএনপি’র অর্ধকোটি নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীকে বাড়ি ছাড়া, ঘর ছাড়া ও এলাকা ছাড়া করেছেন। আর যিনি ন্যায় বিচার করে রায় দিয়েছেন সেই বিচারককে আপনি দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছেন। নিজেদের আদর্শে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তুলে বিরোধী দল দমনে লক্ষ্য পূরণ করে যাচ্ছেন। তবে এবার জনগণ অপশাসনের দিনের অবসান ঘটাবে। মানুষ গনতন্ত্র অর্জনের জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবে। 
ঈদের আগে ও পরে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার তথ্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিজ নিজ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সশস্ত্র সহিংসতায় এক বিভীষিকাময় পরিবেশ তৈরি করেছে। তাদের উগ্রতা, নিমর্মতা ও হিং¯্রতার এক পৈশাচিক প্রকাশে ফলশ্রুতিতে রক্তাক্ত হয়েছে এলাকার পর এলাকা। বিরোধী দলের অস্তিত্ব মুছে দেয়ার জন্য মনে হয় তারা শপথ করে মাঠে নেমেছে। সন্ত্রাসকে তারা অমোঘ অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। বহুদলীয় গণতন্ত্র যাতে ফিরে না আসে সেই জন্য সন্ত্রাস তাদের রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। 
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিকে লুটপাট করে বিদেশে সুখে-শান্তিতে থাকার জন্য আবাসস্থল বানিয়ে চিরদিন আরাম-আয়েশে থাকার জন্য গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে গোটা জাতিকে বন্দি করেছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার এখন চরম দুর্দশাগ্রস্থ যেহেতু তাদের আগ্রহ দুর্নীতি আর টাকা পাচার সে কারণে লুটপাট ও বেপরোয়া দুর্বিনীত কর্মকা-ের অব্যাহত রাখতেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গনতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ও জনগণের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। মানুষের সম্পদ ও সম্পত্তির নিরাপত্তা সম্পূর্ণরূপে আওয়ামী ক্যাডারদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। কায়েমি স্বার্থে আঘাত লেগেছে বলেই গত পরশু থেকে গতকাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া, নড়াইল ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর সশন্ত্র আক্রমণ চালিয়ে রক্ত ঝরিয়েছে। এই সরকারি মদদপৃষ্ট সন্ত্রাসীদের হাতে এখন বৈধ-অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। 
হামলা ও মামলার বিবরণ: সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার চিত্র তুলে ধরে জানান, গত ১ জুলাই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার বিএনপি নেতা হারুন শেখ এবং আওলাদ শেখ, ছাত্রদল সহ-সভাপতি ওমর ফারুক সহ ১৪ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মোট ৪টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। গত ২ জুলাই রাত ৮টায় জাসদ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আল হোসাইন সোহাগ গুরুতর আহত হয়। জাসদ ইনু কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম স্বপনের নির্দেশে ভেড়ামারা উপজেলা জাসদ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিম হোসেন শেবুল, জাসদ যুব জোটের নেতা তুষার, রাহুল, সুমন সহ প্রায় ১০/১২ জন সন্ত্রাসী আল হোসাইন সোহাগকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। 
গত ৩ জুলাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক সরওয়ার আলমগীর বিএনপি নেতকর্মীদের নিয়ে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে বাড়ি ফেরার পথে ফটিকছড়ির হেঁয়াকু বাজারে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা তার গাড়ী বহরে হামলা চালায়। হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপি নেতা আবুল খায়ের, আবুল হাসেম, যুবদল নেতা সামশু, ভূঁজপুর থানা যুবদল নেতা শামসুল আলম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জসিম উদ্দিন, আরিফ, ইউসুফ, হানিফ, ছাত্রদল নেতা মীর মোঃ আলী আকবর, আনিচুর রহমান টিটু, ইয়াকুব, জয়নাল আবেদিন, জামশেদ আলম, আরিফ হোসেন ফারহান সহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী এবং তাদের প্রায় শতাধিক মটর সাইকেল ভাংচুর করে। 
একই দিনে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা চত্ত্বরে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয়েছেন ফুলবাড়ী উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক হাসানুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। যে সকল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছাত্রদল নেতাদের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় তারা হলেন-ফুলবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রতন পোদ্দার, যুবলীগ নেতা মোঃ সুজন পোদ্দার, ছাত্রলীগ নেতা বাবু, ছাত্রলীগ নেতা রুবেল সহ প্রায় ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী। 
ওইদিনই সকাল ৭টায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় গুরুতর আহত হয় নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার লহ্মীপাশা ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি কাজী রেজাউল করিম পারভেজ। যে সকল আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়, তারা হলেন-ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মোঃ ওহিদ কাজী, মোঃ নাহিদ কাজী, মোঃ ওয়ালিদ কাজী সহ বেশ কয়েকজন ।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, আমিনুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, তারিকুল আলম তেনজিং,স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা ইমতিয়াজ বকুল, জাকির হোসেন প্রমুখ।