যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী সড়কে নিয়ম ভাঙার মহোৎসব, ট্রাফিক পুলিশকে ‘থোড়াই কেয়ার’

 যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী সড়কে নিয়ম ভাঙার মহোৎসব, ট্রাফিক পুলিশকে ‘থোড়াই কেয়ার’

প্রথম নিউজ, ঢাকা : ৫ সেপ্টেম্বর দুপুর দুইটা। রাজধানীর মেরুল বাড্ডা ইউলুপ এলাকায় তীব্র যানজট। প্রায় ৪০ মিনিট স্থির দাঁড়িয়ে থাকার পর গাড়ি চলা শুরু হলো। দুই মিনিট গাড়ি চলার পরে ফাঁকা রাস্তা। মানে সেখানে কোনো যানজট নয়, পাবলিক বাস সার্ভিসের সঙ্গে ব্যাটারিচলিত রিকশার মধ্যে বিবাদ লেগেছিল। মাঝ রাস্তা দিয়েই চলছে ব্যাটারিচলিত রিকশা! আবার পাবলিক বাসগুলোও যেখানে-সেখানে থামাচ্ছে।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের এসময় বিশেষ কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি। বাইকার, রিকশাচালক যে যেভাবে পারছে সেভাবে যানজট সৃষ্টি করছে। কড়া হতে পারছেন না সড়কে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সদস্যরা। উল্টো তারা বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ।

রাজধানীর আসাদগেট, মহাখালী, শাহবাগ, গুলিস্তান, প্রগতি সরণিসহ অধিকাংশ এলাকায় দিনে কিংবা রাতে সড়কের চিত্র এমন। কোথাও একবার যানজট লেগে গেলে তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও কমছে না। প্রগতি সরণির নতুনবাজার থেকে কুড়িল বিশ্বরোড যেতেই প্রতিদিন দেড় ঘণ্টা পার হয়ে যায়। অথচ এটি সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের পথ। রাত ১১টার পরও এ সড়কে যানজট লেগেই থাকে। এ অবস্থায় ঢাকার সড়কে চলাচলকারীদের রীতিমতো নাভিশ্বাস উঠছে।

    তিন থেকে চারদিন কিছু অল্পবয়সী ছেলে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় তাকে খুব বাজেভাবে বকাবকি করে। এতে তার মন খারাপ হলেও দায়িত্বে অবহেলা করছেন না।–ট্রাফিক পুলিশ সদস্য

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। টানা ছয়দিন সড়কে ছিল না ট্রাফিক পুলিশ, এসময় রাজধানীর প্রতিটি সড়কে দিন-রাত পুরোদমে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা ফিরলেও সড়কে ফেরেনি শৃঙ্খলা। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অব্দি যানজটে নাকাল হচ্ছে নগরবাসীর।
ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, প্রতিদিন যারা সড়ক ব্যবহার করছেন তারাই নিয়ম ভঙ্গ করছেন। এক শ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত আমাদের উদ্দেশ্যে বুলিং করছে। যত্রতত্র পার্কিং, সড়কের পাশে হকার, উল্টোপথে গাড়ি চালানো ও সিগন্যাল অমান্য করে আগে যেতে চাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে নিয়ম ভঙ্গ করছেন মানুষ। শিক্ষার্থীরা যে ছয়দিন সড়কে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছিল তখন ভয়ে কেউ নিয়ম ভাঙতো না। সেই ভয়টা কেন যেন মানুষের মনে কাজ করছে না! এজন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সড়কে যানজট লেগে থাকছে।

গত ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরে উল্টো পথে প্রাডো গাড়ি চলতে বাধা দেওয়ায় এক ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলকে মারধর করেন সোহরাব হোসেন নামে এক ব্যক্তি। এ ঘটনায় রফিকুল আলম নামে এক গাড়িচালককে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আর সড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় সড়কে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করেছিল এখন সেভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। বেশিরভাগ সময় তারা খোশগল্পে মত্ত থাকেন। সিগন্যাল অমান্য করলেও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। আগে দুপুরে দিকে যানজট হতো খুব কম, কিন্তু এখন দুপুর বেলাতেও কিছু কিছু সড়কের যানজট লেগেই থাকছে।ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ধাক্কায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বদলি ও রদবদল হয়েছে। এই রদবদলে ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। বদলি করা হয় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মুনিবুর রহমানকে। এছাড়া ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার এস এম মেহেদী হাসানসহ ডিএমপির ৮ বিভাগের ডিসিদেরও বদলি করা হয়।

    ঢাকা শহরে রাস্তার চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেশি। এরপর যদি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলে আসে ঢাকার সড়কে তখন যানজটে পড়তে হয় নগরবাসীকে। আমরা চেষ্টা করছি সমস্যা সমাধানের। তবে কিছুটা সময় লাগবে।- ট্রাফিক-লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সালমা সৈয়দ পলি

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের কেউ বদলি করা হয়নি। আগে যে অভিজ্ঞ ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সড়কে ডিউটি করতেন বর্তমানেও তারাই ডিউটি করছেন। তবে কী কারণে যানজট হচ্ছে সেই কারণ খুঁজছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, রামপুরা বাজারে সড়কের কাটা স্থানে একজন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করেই চলছে যানবাহন। তিন রাস্তার লেন যেন পুরোটাই রিকশার দখলে। এর মধ্যে শহরে চলাচলরত পাবলিক বাস সার্ভিসগুলো যেখানে-সেখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠাচ্ছে আবার নামাচ্ছে। রামপুরা বাজারের পরে আবুল হোটেল মোড়ে দুজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য দেখা যায়। তারা সড়কে দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনের কাজ করছিলেন। বাড্ডা লিংরোড থেকে আবুল হোটেল, এখানে গাড়ির রাস্তা ২০ মিনিট। কিন্তু যানজটে ও রিকশার কারণে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা।

একই চিত্র দেখা যায় রাজধানীর পল্টন মোড়ে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসনে হিমশিম খাচ্ছেন। রাস্তার এক পাশে অনেকটা জায়গা জুড়ে প্রাইভেটকার পার্কিং, এরপর যাত্রী নেওয়ার জন্য ফাঁকা রিকশা দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা তাদের সরিয়ে দিলেও তারা যাচ্ছে না। কেউ যেন তোয়াক্কাই করছে না ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের।

রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ান বাজারে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন অটোরিকশাচালক জামাল মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আসাদগেট থেকে যাত্রী নিয়ে কারওয়ান বাজার এসেছি ১২০ টাকায়। এখন যাত্রীও পাচ্ছি পাশাপাশি পুলিশও আটকাচ্ছে না। আগে মূল সড়কে উঠতে দিতো না পুলিশ। তবে শিক্ষার্থীরা যখন ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন শুরু করে তখন থেকেই মূল সড়কে আমরা উঠতে পারি।আলতাফ হোসেন নামে এক প্রাইভেটকারচালক জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় এক মাস ধরে ঢাকা শহরে গাড়ি চালিয়ে কোনো শান্তি পাচ্ছি না। সব রাস্তায় দেদারছে চলছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকরা মাঝ দিয়ে চলাচল করছে। হর্ন দিলেও সরে না। এতে গাড়ির চাপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অটোরিকশা চালকরা যে যেভাবে পারছে যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। যাত্রী নিয়ে উল্টো পথে চলাচলে অন্য গাড়িগুলো স্বাভাবিকভাবে যেতে পারছে না। এতে একবার যানজটের সৃষ্টি হলে সেটি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত থাকছে
রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে গুলশান-বনানীতে সিটি করপোরেশনের নির্দিষ্ট ইউনিফর্ম ও রেজিস্ট্রেশন করা রিকশা রয়েছে। তবে ৫ আগস্টের পর বেশি ভাড়ার লোভে ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গুলশান-বনানীতে ঢুকে পড়েছে বাইরের রিকশা। বর্তমানে গুলশান-বনানী এলাকায় বেশি সংখ্যক রিকশার কারণে স্বাভাবিক গাড়িগুলো যাতায়াতে বেগ পেতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও ১৫ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সিগন্যালে আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের।

মামলা ভয় না থাকায় আরও বেশি বেপরোয়া চালকরা
৫ আগস্টের আগে স্বাভাবিকভাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিদিন ট্রাফিক আইনে মামলা হতো গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০টি। সেখানে বর্তমানে ট্রাফিক আইনে মামলার সংখ্যা হাতে গোনা। মামলার ভয়ে বেশিরভাগ চালক সড়কে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করতেন না। কিন্তু ইদানীং ট্রাফিক পুলিশ মামলা দিচ্ছে কম। এজন্য বেশিরভাগ চালক বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাচ্ছে।

সড়কে কাজ করা কয়েকজন ট্রাফিক সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আইন ভঙ্গকারী কাউকে মামলা দিতে গেলে যদি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করে কিংবা আরও বেশি লোক জড়ো হয়ে ভয়ভীতি দেখায় সেই দায়ভার আসলে এই মুহূর্তে কেউ নিতে চায় না। এজন্য আমরা সচেতনতা তৈরির জন্য চালকদের নিয়ম মানতে অনুরোধ করছি।রাত ১০টার পর রাজধানী ঢাকায় ভারী গাড়ি প্রবেশের নিয়ম থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বালু-মাটি এবং পণ্যবাহী ট্রাক ও লরি। এসব ট্রাকের কারণে রাজধানীর সড়কে চলাচলকারীরাও থাকেন চরম আতঙ্কে। সম্প্রতি ঢাকার সড়কে যানজট বাড়ার অন্যতম কারণ এসব যানবাহন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় নিবন্ধিত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ রয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৩৬টি। এর মধ্যে ট্রাক ৮৩ হাজার ৭৮৫, পিকআপ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৪ ও কাভার্ডভ্যান ৩৮ হাজার ৮০৭টি। নিবন্ধন ছাড়া রয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুণ। এছাড়াও ঢাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢোকে পণ্যবাহী কয়েক হাজার ট্রাক।শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে উঠে যাওয়ার পর পুলিশ যখন দায়িত্ব পালন শুরু করে তখন থেকেই মোটরসাইকেল আরোহীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। অধিকাংশ বাইকার যত্রতত্র মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন এবং সিগন্যাল অমান্য করছেন। পুলিশ দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন অনেকটা। এছাড়া অতিরিক্ত যানজটে কিছু বাইকার ফুটপাত দিয়েও মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। পথচারীরা প্রতিবাদ করলেও একরোখা বাইকাররা কারও তোয়াক্কা করছে না। খাবার ডেলিভারিম্যানরা নিয়মিতই ফুটপাতে সাইকেল তুলে দিচ্ছেন। তারাও কারও বাধা মানেন না।ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, ট্রাফিকের যে আইন রয়েছে, সেই আইন অনুযায়ী বর্তমানে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ গায়ের জোরে উল্টো রাস্তা দিয়ে চলছেন, অনেকেই মানছেন না ট্রাফিক সিগন্যাল। দিনের বেলায় চলছে ভারী যানবাহন। আবার রাস্তায় উঠে পড়ছে ব্যাটারিচলিত অটোরিকশা। এসবের কারণেই শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে ট্রাফিকের সব সদস্য উপস্থিত। তারা নিরাপদে দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজধানীর মহাখালী ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন মধ্যবয়সী একজন পুলিশ সদস্য। তিনি জাগো নিউজকে জানান, তিন থেকে চারদিন কিছু অল্পবয়সী ছেলে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় তাকে খুব বাজেভাবে বকাবকি করে। এতে তার মন খারাপ হলেও দায়িত্বে অবহেলা করছেন না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্টন এলাকায় দায়িত্বরত এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা সড়কে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তাদের বসার মতো কোনো স্থান নেই। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এবং ২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। তাদের ওয়াশরুমে যাওয়ার মতোও স্থান নেই। তারপরও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন রাস্তার যানজট নিরসনে। একটানা দায়িত্ব পালনে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে।

    আমাদের দেশে আইন মানার সংস্কৃতি কম। একজন যাত্রীরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। যেখানে রিকশা চলাচল করা উচিত নয় আর যেখানে করা উচিত বিষয়টি একজন সাধারণ নাগরিক খুব ভালোভাবেই জানেন। কিন্তু এটা মানতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।- খোন্দকার নজমুল হাসান

ট্রাফিকের আরেক সদস্য বলেন, যানজট নিরসনের জন্য আইন প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে সবাই স্বাধীন। আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিতে গেলে পুলিশের ওপরেই হামলা চালায় কি না এমন আতঙ্ক বিরাজ করছে অনেক ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের মধ্যে। তাই অনেকেই সচেতন হয়ে রাস্তায় দায়িত্ব পালন করছেন।ট্রাফিক-মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইয়াসিনা ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, ‘মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করার কথা নয়। তবে এসব রিকশা মূল সড়কে চলাচল ও পার্কিং করে অন্য যানবাহনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। একজন যাত্রীরও দায়িত্ব রয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। বর্তমানে স্কুলকেন্দ্রিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান। এক থেকে দুই সপ্তাহ পর আইনগত ব্যবস্থা কিংবা মামলা করা হবে।’

ট্রাফিক-গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আব্দুল মোমেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাই প্রথম রাস্তায় নেমে কাজ শুরু করে। একটা সময় গুলশান-বনানী এলাকায় নির্ধারিত পোশাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক রিকশা চলাচল করতো। এই রিকশাগুলোর অনুমোদন দিতো সিটি করপোরেশন। কিন্তু ৫ তারিখের পর অন্য জায়গা থেকে অটোরিকশা ঢাকায় চলে আসছে। তারা জানে না কোন সড়কে কীভাবে চলাচল করতে হবে। ফলে তাদের সঙ্গে প্রায়ই আমাদের কনফ্লিক্ট হয়। এসব রিকশাচালকরা প্রায়ই আমাদের পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করে বুলিং করে।’

যানজটে অতিষ্ঠ নগরবাসী, সড়কে নিয়ম ভাঙার মহোৎসব, ট্রাফিক পুলিশকে ‘থোড়াই কেয়ারতিনি জানান, হয়তো অনেকক্ষণ ডিউটির পর একজন পুলিশ সদস্য পানি খেতে গেলো কিংবা প্রকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে গেলো তখন হয়তো কেউ মনে করতে পারে ট্রাফিক পুলিশ ডিউটি করছে না। তবে ৫ তারিখের পর যেভাবে সড়কের অবস্থা ছিল গত কয়েকদিন কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে।

ট্রাফিক-লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সালমা সৈয়দ পলি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে রাস্তার চেয়ে যানবাহনের সংখ্যা বেশি। এরপর যদি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলে আসে ঢাকার সড়কে তখন যানজটে পড়তে হয় নগরবাসীকে। আমরা চেষ্টা করছি সমস্যা সমাধানের। তবে কিছুটা সময় লাগবে। কারও ওপর বল প্রয়োগ করা যায় না। সাধারণভাবে বুঝিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।’

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বড় ধরনের রদবদল হয়েছে পুলিশে। ট্রাফিকে যারা নতুন কিছুটা সময় নিচ্ছেন বুঝে উঠতে। তবে সড়কে আমাদের সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্য থেকে কর্মকর্তা পর্যন্ত সবাই যানজট কমাতে স্পটে থেকে কাজ করছেন।

শুধু পুলিশের চেষ্টায় সড়কে যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় উল্লেখ করে খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দেশে আইন মানার সংস্কৃতি অনেক কম। একজন যাত্রীরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। যেখানে রিকশা চলাচল করা উচিত নয় আর যেখানে করা উচিত বিষয়টি একজন সাধারণ নাগরিক খুব ভালোভাবেই জানেন। কিন্তু এটা মানতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রধান বলেন, ‘সব সমস্যার সমাধান মামলা দিয়ে সম্ভব নয়। এজন্য মামলার বিষয়ে আমরা ধীরে এগোচ্ছি। সবার সচেতনতায় ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা ভালো হবে।’

জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘যানজট এই মহানগরীর অন্যতম প্রধান সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে একদিকে দরকার সমন্বিত পরিকল্পনা, কার্যকরী উদ্যোগ ও অন্যদিকে নগরবাসীর অকুণ্ঠ সহযোগিতা, সচেতনতা ও সতর্কতা।’

তিনি বলেন, ‘রোদ-বৃষ্টিতে দায়িত্ব পালন করা পুলিশ সদস্যদের অন্তত হাসিমুখে ধন্যবাদটুকু দিলে তারা আরও উজ্জীবিত হবে। সাংবাদিক বন্ধুরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে যানজটের কারণগুলো ও সমাধানের পরামর্শ দিলে আমরা সাদরে গ্রহণ করবো।’