যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে কমছে পোশাক রপ্তানি
চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে এক-তৃতীয়াংশ ও ইউরোপের বাজারে কমেছে ১৪.৫০ শতাংশ।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: বাংলাদেশের প্রধান দুই বাজার উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে সামগ্রিক পোশাক রপ্তানি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে এক-তৃতীয়াংশ ও ইউরোপের বাজারে কমেছে ১৪.৫০ শতাংশ। দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ যায় এ দুই বাজারে। এ দুটি বাজারে যেকোনো কারণে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তার বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পড়ে। মঙ্গলবার তৈরি পোশাক খাতের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
বাংলাদেশের প্রধান দুটি বাজার- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পোশাক রপ্তানি কমার বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক পোশাক আমদানি আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ভ্যালুতে কমেছে ২২.২৮ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে পরিমাণের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক আমদানি ২৮ শতাংশ কমেছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে কমেছে ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ পরিমাণের দিক থেকে এই ৭ মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। একই সময়ে ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৭.৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। পাশাপাশি পরিমাণ অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্ব থেকে আমদানি কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৪.৫০ শতাংশ। সংগঠনটি জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান দুটি বাজার- উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ যায়।
এ দুটি বাজারে যেকোনো কারণে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তার বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পড়ে। তবে বিজিএমইএ নতুন বাজারগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে কাজ করছে বলেও জানান তিনি। ফারুক হাসান বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পও চাপে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে চলতি বছর ন্যূনতম মজুরি বোর্ড তথা নতুন মজুরি কার্যকর হলে আরও চাপে পড়বে পোশাক শিল্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রভাব ফেলবে না: সমপ্রতি বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল এবার তা বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। তবে এ কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আমেরিকার ভিসা নীতি আগেও ছিল, এখনো আছে। পোশাক খাতের যেকোনো সমস্যা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেভাবে যোগাযোগ রয়েছে, তাতে ভিসা নীতির কারণে বর্তমানে দেশের পোশাক খাতে কোনো সমস্যা হবে না।
ফারুক হাসান বলেন, ব্যবসায়ীদের কারও ভিসা বাতিল হলেও তিনি ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন। আমরা কোভিডের সময়ে কোনো দেশে যেতে পারিনি, এরপরও আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়নি। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, (কারও) ভিসা বাতিল হলেও বিকল্প ভাবে সে তার ব্যবসা চালিয়ে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, সমপ্রতি গণমাধ্যমে ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩০০ কোটি টাকা পাচারের যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা সত্য নয়। ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি বিজিএমইএ’র সদস্য, দুটি বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্য এবং এ দুই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়। পোশাক কারখানার মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তে পৃথক টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানান ফারুক হাসান।
পশ্চিমা ভোক্তাদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে পোশাকের খুচরা বিক্রি কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি শহিদুল্লা আজিম, সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শিদী, সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ উদ্যোক্তারা।