মৃত্যুদণ্ড লঘু করায় বাইডেনের কড়া সমালোচনা রিপাবলিকানদের
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ফুরিয়ে আসছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতার মেয়াদ। প্রায় তিন সপ্তাহ আছেন তিনি ক্ষমতায়। এরপরই ২০শে জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা দিয়ে তাকে সরে যেতে হবে। তাই শেষ সময়ে এসে অনেক কাজ করছেন দ্রুততার সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি নিয়ে জেলে আছেন ৪০ জন আসামি। কিন্তু বাইডেন তার মধ্যে ৩৭ জনের শাস্তি লঘু করেছেন। মৃত্যুদণ্ডকে রহিত করে তাদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।
ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের এসব মৃত্যুদণ্ড কার্যকর সম্পন্ন করতে গতি বাড়াতে পারেন। এ জন্য তার সেই পরিকল্পনাকে আটকে দিতে বাইডেন এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। ফলে তার এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে নিন্দা জানিয়েছেন রিপাবলিকানরা। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে, আইন মেনে চলতে বাধ্য এমন ক্রিমিনালদের পক্ষ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার আগে যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মৃত্যুদণ্ড তুলনামূলক বিরল। তার প্রথম মেয়াদে বেশ কয়েকটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে ১৩০ বছর ধরে মৃত্যুদণ্ড মুলতবি রাখার যে রীতি ছিল তা ভেঙে বেরিয়ে আসেন তিনি। এবার ২০শে জানুয়ারিতে আবার হোয়াইট হাউসে ফিরে তিনি এই শাস্তি শুরু করার অঙ্গীকার করেছেন। এর ফলে তার প্রশাসন শুরুর দিকেই সম্ভাব্য আইনি লড়াইয়ে পড়তে পারে। সোমবার বাইডেন ৩৭ আসামির মৃত্যুদণ্ড রহিত করলেও তিন আসামির ভাগ্যে তা জোটেনি। কারণ, তারা সন্ত্রাস ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত। এর মধ্যে আছে জোখার সারনায়েভ এবং রবার্ট বোয়ার্স। বোস্টন ম্যারাথনে বোমা হামলার জন্য অভিযুক্ত প্রথম জন। দ্বিতীয় জনকে ১১ জন প্রার্থনাকারীকে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তৃতীয় জন দিলান রুফ’কে ২০১৫ সালে সাউথ ক্যারোলাইনাতে ৯ জন কৃষ্ণাঙ্গকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। গুলি করে সে তাদেরকে হত্যা করেছিল। এ জন্য ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মৃত্যুদণ্ডকে লঘু করে শাস্তি দেয়াকে সাধুবাদ জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন। কিন্তু কিছু রিপাবলিকান দ্রুততার সঙ্গে এর নিন্দা জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক স্টিভেন চেউং বলেছেন- ওরা বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত খুনিদের অন্যতম। জো বাইডেনের এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত ভিকটিম, তাদের পরিবার ও প্রিয়জনের মুখে চপেটাঘাতের মতো। তিনি আরও বলেন, নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আইনের শাসনের পক্ষে। তিনি হোয়াইট হাউসে ফিরলে এই ধারা বদলে দেবেন। টেক্সাসের রিপাবলিকান চিপ রয় এক্সে লিখেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত অবিবেচনাসুলভ। একই সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহারও। আরেকজন রিপাবলিকান আরকানসাসের সিনেটর টম কটন বলেছেন, আইন মেনে চলা মার্কিনি অথবা ক্রিমিনালদের কাউকে যদি বেছে নিতে সুযোগ দেয়া হয় তাহলে জো বাইডেন এবং ডেমোক্রেটরা সব সময়ই ক্রিমিনালদের বেছে নেবেন। ওদিকে বাইডেনের সিদ্ধান্তে ভিকটিমদের পরিবারের কিছু সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ফেসবুকে তাদের একজন হিদার টার্নার একে বাইডেনের ক্ষমতার অপব্যবহার বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ভিকটিমদের বিষয় বিবেচনাই করেননি। তিনি এবং তার সমর্থকদের হাতে রক্তের দাগ। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন রাজ্যের আদালতে অভিযুক্ত হয়ে মৃতুদণ্ডের অপেক্ষায় আছেন ২২০০ মানুষ। বাইডেনের সিদ্ধান্ত তাদের ওপর প্রয়োগ হবে না। কারণ, এসব ঘটনা রাজ্যের হওয়ায় সেখানে প্রেসিডেন্টের কোনো কর্তৃত্ব নেই।