ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের নিবন্ধ, মৃদুভাষী এই ভদ্রলোকের (ইউনূসের) ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সর্বশেষ প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে এটিও একটি।

ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে আজ (বৃহস্পতিবার) দুর্নীতির মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তকারীরা। প্রফেসর ইউনূস বলেছেন, তিনি কোন অন্যায় করেননি, তাই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার অগ্রদূত হিসেবে স্বীকৃত প্রফেসর ইউনূসের বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে।

ত্রিপুরাভিত্তিক ভারতীয় নিউজ ওয়েবসাইট ত্রিপুরাইনফো ডট কম এ ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক নাভা ঠাকুরিয়া আরো লিখেছেনঃ বলাবাহুল্য যে, মৃদুভাষী এই ভদ্রলোকের (ইউনূসের) ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সর্বশেষ প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে এটিও একটি। নোবেলজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ সহ ১৭৫ জনেরও বেশি বিশ্বনেতা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে সব আইনি কার্যক্রম স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে ৪০ জন বিশ্ব ব্যক্তিত্ব পৃথক চিঠিতে তাকে নিয়ে সরকারের খারাপ আচরণের বিষয়ে শেখ হাসিনাকে লিখেছিলেন। এমনকি ৩৪ জন বিশিষ্ট বাংলাদেশি  নাগরিকও প্রফেসর ইউনূসের পক্ষে কথা বলেছিলেন।  আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে তিনি (শেখ হাসিনা) টানা চতুর্থ মেয়াদের জন্য ভোটারদের ম্যান্ডেট চাইবেন। সর্বাধিক পুরস্কৃত বাংলাদেশি ভদ্রলোকের (ইউনূসের) বিরুদ্ধে তিনি তার শত্রুতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ও প্রফেসর ইউনূসকে সমর্থন করে এক বিবৃতি জারি করে বলেছে যে, তারা তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এরপর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও একটি বিবৃতি দিয়েছিল। সেখানে তারা জোর দিয়ে বলেছিল যে, হাসিনা প্রফেসর ইউনূসকে হয়রানি ও ভয় দেখানোর জন্য 'শ্রম আইনকে অস্ত্র' হিসেবে ব্যবহার করছেন।

এখানে প্রশ্ন উঠে যে, দারিদ্রমুক্ত বিশ্বের জন্য বিশ্বব্যাপী যিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন (ইউনূসের) তার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা কেন এতো আগ্রাসী? জবাব দিয়েছেন নাভা ঠাকুরিয়া নিজেইঃ এক্ষেত্রে, প্রথম অনুমান, শেখ হাসিনা নিজেই ২০০৮ সাল থেকে তার 'অসাধারণ' কাজের জন্য স্বীকৃতি চাচ্ছেন (সম্ভবত নোবেল পুরস্কারের মাধ্যমে)। ইদানিং, সুশীল সমাজ এমন জল্পনাকে স্বাগত জানাচ্ছে যে, আসন্ন নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী দলগুলো (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে) প্রফেসর ইউনূসকে তাদের নেতা হিসেবে সামনে আনতে পারে।

এখানে উল্লেখ করা বাহুল্য যে, প্রফেসর ইউনূস ২০০৭ সালে একটি রাজনৈতিক দল (নাগরিক শক্তি) গঠনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, দ্রুতই তিনি ওই ধারণাটি ত্যাগ করেছিলেন। যাই হোক, শেখ হাসিনা এবং তার সমর্থকরা এখনও প্রফেসর ইউনূসকে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধরে থাকে। আর তাই তিনি সম্ভাব্য প্রতিটি সুযোগে প্রফেসর ইউনূসকে অপমান করে চলেছেন।

আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। বিরোধী জোট এখনও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করছে বলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অব্যাহত রয়েছে। তারা আগামী নির্বাচন পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের দাবি করছে, যাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কারচুপি না করতে পারে; অন্যথায়, আগের মতো তারা জাতীয় নির্বাচন বয়কট করতে পারে। শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে তিনি পদত্যাগ করবেন না। আর এভাবেই অনাগত দিনে সারা বাংলাদেশে বিরোধী দলগুলোর ধারাবাহিক বিক্ষোভের (প্রায়ই যা সহিংস রূপ নেয়) পথ প্রশস্ত হচ্ছে।