বেড়েছে সবজি-মুরগি-ডিমের দাম: অর্ধেক গরুর মাংসও বিক্রি করতে পারছে না বিক্রেতারা
নিত্যপণ্যের বাজার আবারও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। সরবরাহ ঠিক থাকলেও সাত দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার ও দেশি মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: নিত্যপণ্যের বাজার আবারও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। সরবরাহ ঠিক থাকলেও সাত দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার ও দেশি মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া নতুন করে না বাড়লেও উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়েছে সব ধরনের সবজি ও মাছ।
বাজারে বাড়তি গরু ও মুরগির মাংসের দাম। তাই সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও অলস সময় পার করছেন মাংস বিক্রেতারা। তারা বলছেন, দাম বেশি হওয়ায় মানুষ মাংসের বাজার খুব বেশি ভিড় করছে না। বিক্রিও আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মাংসের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় নেই বললেই চলে। আজ বাজারে এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। প্রতি কেজি খাসির মাংসের দাম ৮০০ টাকা। এদিকে, ব্রয়লার মুরগি কোথাও ১৭০ টাকা, আবার কোথাও ১৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, সোনালি ৩০০ টাকা, লেয়ার ২৮০-৩০০ টাকা এবং কক ৩০০-৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে মহাখালী বাজারে গরুর মাংস বিক্রি করেন সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, আগে এমনো সময় গেছে- দিনে দুইটি গরু বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। সারাদিনে অর্ধেক গরুর মাংসও বিক্রি হয় না। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ এত দাম দিয়ে গরুর মাংস কেনে না। তিনি বলেন, আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও মাংসের বাজারে ক্রেতা নেই। যতগুলো গরু-খাসির মাংসের দোকান আছে, সবগুলোই ফাঁকা। ব্যবসায় মন্দার কারণে ঢাকা শহরে অনেক মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। তারা এখন অন্য ব্যবসা করছে।
রাজধানীর মালিবাগ বাজারে মুরগি বিক্রি করেন জামাল উদ্দিন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, একটা সময় ব্রয়লার মুরগি খুব বিক্রি হতো। কিন্তু মুরগির খাবারের দাম ও পরিবহনের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় মুরগির বাজার বাড়তি যাচ্ছে। এখন আর আগের মতো ক্রেতা নেই। মানুষ খুব দরকার ছাড়া মুরগি কিনছে না। পাইকারি বাজার থেকে আগের চেয়ে বেশি দামে আমাদের মুরগি কিনতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজার। দাম বাড়তির কারণে ক্রেতা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
গুলশানের ঝিলপাড় বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছেন মোজাম্মেল হক নামে এক বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি বলেন, সর্বশেষ গত কোরবানি ঈদের আগে গরু ও খাসির মাংস কিনেছিলাম। এরপর আর কেনা হয়নি। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এত দাম দিয়ে মাংস কেনা সম্ভব না। খুব প্রয়োজন ছাড়া এই বাড়তি দামে মানুষ গরু-খাসির মাংস কিনতে পারে না। তিনি বলেন, আগে নিম্ন আয়ের মানুষ ব্রয়লার খেয়ে মাংসের স্বাদ পূরণ করতো। বর্তমানে এই ব্রয়লারও মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এখন সবাই চাইলেই মুরগি কিনতে পারছে না। যারা কিনছেন, তারা বাধ্য হয়ে। সব মিলিয়ে বর্তমান বাজার অবস্থায় সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় আছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের সাধারণ মানুষরা।
নিউমার্কেটের খুচরা বিক্রেতা সজিব হোসেন বলেন, গত মাসের প্রথমদিকে পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের দাম বাড়ে। যে কারণে সেসময় প্রতি ডজন ডিম ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। এজন্য গত সপ্তাহেও প্রতি ডজন ডিম ১২০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন পাইকারি বাজারে আবারও দাম বাড়ায় ১৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। বহুমুখী ডিম ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, প্রশাসনের অভিযানের পর ডিমের দাম অযৌক্তিকভাবে কমে যায়। এখন দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা চলছে। কয়েকদিন আগে দাম অনেক বেড়েছিল।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি সিম, টম্যাটো ও গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা। প্রতি কেজি বরবটি ৮০-৯০, করলা ৮০, বেগুন ৬০-৭০, পটোল ৪০-৫০, ধুন্দল ৬০, ঝিঙা ৪০-৫০, ঢেঁড়শ ৪০ এবং প্রতি কেজি শসা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা।
এদিকে মাছবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি রুইমাছ বিক্রি হয়েছে ৩২০-৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৬০-২০০ টাকায়। প্রতি কেজি শিংমাছ ৩৫০-৪৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি কইমাছ বিক্রি হয়েছে ২০০-২৫০ টাকা। আর পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩৫০-৫০০ টাকা।
সরকারি সংস্থা টিসিবি বলছে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর গত এক মাসের ব্যবধানে চাল, চিনি, মসুর ডাল, শুকনা মরিচ, আদা, জিরা, লবঙ্গ, এলাচ, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, গুঁড়াদুধ, লবণসহ ফার্মের ডিমের দাম বেড়েছে।
সাবান, টুথপেস্ট, নারিকেল তেলসহ বিভিন্ন প্রসাধনীর দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত। আগে আধা কেজির যে ডিটারজেন্টের দাম ছিল ৬০ টাকা, সেটি এখন ৯০ টাকা। ৫২ টাকার সাবানের দামও এখন ৭৫ টাকা হয়েছে। যদিও এসব পণ্যের দামের ওঠা-নামার হিসাব টিসিবির কাছে থাকে না।
টিসিবি বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে শুকনা মরিচের দাম। গত মাসে যে মরিচের দাম ছিল ৩০০-৩৩০ টাকা, সেটা এখন ৩৫০-৪৫০ টাকা। অন্যদিকে একই সময়ে খোলা আটার দাম বেড়েছে ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আগে ৪০-৪২ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৪৭-৫২ টাকায় ঠেকেছে। যদিও এ সময়ে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩১ শতাংশ।
যেসব পণ্যের দাম বেড়েছে সেগুলো ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি হলেও কমার তালিকায় থাকা তিনটি পণ্যের (আলু, মুগডাল, মুরগি) দাম কমার হার যথাক্রমে ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, ৬ দশমিক ১২ এবং ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে সে হারে কমছে না।
এসব বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, দেশে কোনো পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ে সেটি পরবর্তীসময়ে সেভাবে সমন্বয় হয় না। দাম কমলেও সেটা বাজারে বাস্তবায়ন করতে চান না কোম্পানি বা বিক্রেতা কেউই।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews