বান্দরবানে বন্যা: ঘুরে দাঁড়াতে সরকারি সহায়তা চান পর্যটন ব্যবসায়ীরা
সবমিলে এবারের বন্যায় বান্দরবানে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই হিসাবে জেলার পর্যটনখাতেও ক্ষতির পরিমাণ নেহাত কম নয়।
প্রথম নিউজ, বান্দরবান: বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পুরো বান্দরবান। বন্যার ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে জেলার প্রতিটি উপজেলার সড়ক, কৃষি থেকে শুরু করে বসতঘর পর্যন্ত। সবমিলে এবারের বন্যায় বান্দরবানে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই হিসাবে জেলার পর্যটনখাতেও ক্ষতির পরিমাণ নেহাত কম নয়।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বান্দরবানে কুকিচিন সমস্যার কারণে পর্যটন তাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এবারের বন্যায় আর্থিক সেই ক্ষতি আরও বেড়েছে। এই ক্ষতি পোষাতে সরকারি সহায়তা কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বান্দরবান জিপ-মাইক্রোবাস চালক সমিতির সদস্য আব্দুর রাজ্জাক জানান, সম্প্রতি বন্যা ও পাহাড় ধসে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সড়ক ভেঙে যাওয়ার ফলে সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সামান্য কিছু পর্যটক এলেও তাদের নিয়ে সদর এলাকার পর্যটন স্পটগুলো ছাড়া বাকি জায়গায় যাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এই পেশায় সম্পৃক্ত প্রায় ৭০০ চালক-শ্রমিক অর্থাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জিপ-মাইক্রোবাস মালিক সমিতির আরেক সদস্য মো. জাফর আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জেলায় কুকিচিন ইস্যুতে পর্যটন ব্যবসা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি বন্যা ও পাহাড় ধসে জেলায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ধসে পড়ায় গাড়ি নিয়ে দূরের কোনো স্পটে যাওয়া যাচ্ছে না। ফলে শ্রমিকদের পাশাপাশি চারশর বেশি মালিকরাও চরম অর্থ সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া পরিবহন মালিকরা এ পর্যন্ত কোনো সহায়তাও পাননি।
হিলভিউ হোটেলের ম্যানেজার মো. আবদুর রহিম বলেন, বন্যায় হোটেলের নিচতলা ডুবে গিয়েছিল। এতে বৈদ্যুতিক জেনারেটর, আসবাবপত্রসহ প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বন্যা পরবর্তী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে গত ১৯ আগস্ট হোটেলের গ্রাহক সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই পাঁচদিনে ১০টি কক্ষও বুকিং হয়নি।
বান্দরবান হিলভিউ হোটেলের ম্যানেজার মো. আক্কাস উদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, বছরেরও বেশি সময় ধরে কুকিচিন সমস্যার কারণে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে তেমন পর্যটকের আগমন না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি বন্যায় এই ক্ষতি বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। তিনি বলেন, বন্যায় হোটেলের জেনারেটর, আসবাবপত্রসহ হোটেলের এক কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠতে সরকারি সহায়তা কামনা করছি।
বান্দরবান হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমল দাশ বলেন, বন্যায় পর্যটন ব্যবসায়ীদের ১০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে সেজন্য পর্যটন করপোরেশনের মাধ্যমে সরকারি সহায়তা কামনা করেন তিনি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, এবারের বন্যায় জেলায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ চলমান আছে। এছাড়া পর্যটনখাত থেকে এখনো পর্যন্ত কেউ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানায়নি। এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ জানালে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।