বিএনপির ত্রাণ বিতরণেও ক্ষমতাসীনরা বাধা দিচ্ছে: রিজভী

তিনি বলেন, এই কমিশন ভোটারদের সাথে নির্মম প্রবঞ্চনা আর কপোটতা ছাড়া কিছুই করবে না। এরা ভোট-নির্বাচনকে বিপজ্জনক চোরগর্তের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের মিথ্যার বাড়াবাড়ি কোন বিজয় আনতে পারে না।

বিএনপির ত্রাণ বিতরণেও ক্ষমতাসীনরা বাধা দিচ্ছে: রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপি নেতাকর্মীদের বানভাসিদের সাহায্য সহযোগিতা ও ত্রাণ বিতরণেও  ক্ষমতাসীনরা বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। 

রুহুল কবির রিজভী  বলেন, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট কিংবা ভোট ডাকাতি, এমপিরা যেভাবেই সংসদে প্রবেশ করুক, বাস্তবতা হচ্ছে সংসদ অধিবেশন চলাকালে প্রতি মিনিটে রাষ্ট্রের ব্যয় প্রায় দুই লক্ষ টাকা। সুতরাং যেখানে বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যাপীড়িত মানুষ যখন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে, বেঁচে থাকার লড়াই করছে সেখানে রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে সংসদে বসে বসে কো এক শিল্পীর গান শোনা রীতিমতো মানবতার প্রতি অবমাননার শামিল। জনগণের দুঃখ-দুর্দশার দিকে নজর না দিয়ে সংসদে সেই শিল্পীর মুখে নিজের বন্দনা শুনে নিশিরাতের সরকারের প্রধানমন্ত্রী পুলকিত হলেও জনগণ লজ্জিত হয়েছে। শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত নিশিরাতের গর্ভে যে সংসদের জন্ম দেয়া হয়েছে সেই সংসদকে এখন নতুন করে রঙ্গশালায় পরিবর্তন করেছেন। যে যার ইচ্ছেমতো গান, কবিতা, খিস্তিখেউড় আর মিথ্যাচার চালিয়ে জনম্যান্ডেটহীন সংসদকে ইতোমধ্যেই রঙ্গশালায় পরিণত করা হয়েছে। সুতরাং, সংসদ অধিবেশনের নামে গান, নাটক, কবিতা আর খিস্তিখেউর শোনার জন্য রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা খরচ না করে সেই টাকা বরং বন্যার্তদের পেছনে খরচ করা এখন সময়ের দাবি। 

তিনি বলেন,  রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে আওয়ামী লীগ এখন লুটেরা আর টাকা পাচারকারীদের দলে পরিণত হয়েছে। বিএনপি  এবং স্বাধীনতার ঘোষকের পরিবার সম্পর্কে প্রতিনিয়ত মিথ্যাচার করাই এই দলটির নেতা মন্ত্রীদের এখন একমাত্র কাজ। এই দলটির সাধারণ সম্পাদক, আত্মীয়স্বজনদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি সম্পর্কে খোদ ওবায়দুল কাদের সাহেবের আপন ছোট ভাই সাক্ষ্য দিচ্ছেন। প্রকাশ্যেই বারবার দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। অথচ ওবায়দুল কাদের সাহেব যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি সম্পর্কে কিছু না বলে তিনি নিত্য নিয়মিত বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যাচার করেন। ফলে এটি প্রমাণিত, বিএনপি এবং বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সম্পর্কে মিথ্যাচারই, নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রী-এমপি হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা। বিনাভোটে বছরের পর বছর ধরে এমপি পদবী উপভোগ করার পর মমতাজ-নিক্সনদের মনে হয়তো নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রী হওয়ার খায়েশ জেগেছে। কিন্তু তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বেশি লোভ ভালো নয়। রাষ্ট্রীয় টাকা খরচ করে সংসদে বসে এমন পাগলামি-খিস্তিখেউর অব্যাহত থাকলে সেদিন আর বেশি দূরে নয়, জনরোষ থেকে বাঁচতে পুরো নিশিরাতের সরকারকেই জনচক্ষুর অন্তরালে চলে যেতে হতে পারে।
তিনি আরো বলেন,  দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা বন্যা কবলিত। সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জসহ ১৫টি জেলার ৯৫টি উপজেলা এবারের প্রলয়ংকারী বন্যায় ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। বন্যা কবলিত মানুষরা চরম দুর্ভোগের আবর্তে হাবুডুবু খাচ্ছেন। বন্যার করাল গ্রাসে তাদের সর্বস্ব-সবকিছু ভেঙে-চুরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কোন কোন এলাকায় কিছুটা পানি নামতেই মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে পেটের পীড়া-ডায়ারিয়া-কলেরা-রোগ বালাই। নিজেদের বাড়িঘরের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকে। কেউ কেউ এলাকায় ফিরে বিধ্বস্ত ও শূণ্য ভিটা দেখে অনেকে ডুকরে কেঁদে উঠছেন। চারদিকে ত্রানের জন্য হাহাকার করছে মানুষ। সেদিকে সরকারের ভ্রুক্ষেপ নেই। ত্রাণ শিবিরগুলোতে এবং ডুবন্ত ভিটেমাটিতে, বাড়ির ছাদে, উঁচু স্থানে, নৌকা বা ভেলায় আশ্রয় নেয়া বন্যার্ত মানুষের কাছে সুপেয় পানি, শুকনো ও রান্না করা খাদ্য, শিশুখাদ্য, ওষুধসহ জীবন রক্ষাকারী জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌছাচ্ছে না। সিলেট সুনামগঞ্জ নেত্রকোনায় চলছে মানবিক সংকট। বানভাসীদের পাশে দাঁড়ায়নি সরকার। ত্রাণবোঝাই নৌযান দেখলেই দলে দলে ছুটে যাচ্ছেন শত শত অভুক্ত বন্যাদুর্গতরা। ক্ষুধার তাড়নায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিতেও দ্বিধা করছেন না তারা। এক বেলা খাবারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। ত্রাণের অপ্রতুলতায় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন,  বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জনগণের দল বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতা কর্মীরা এই বন্যার শুরু থেকে উদয়াস্ত ত্রান কর্মকান্ডে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। প্রতিটি দুর্গত এলাকায় আমাদের নেতাকর্মীরা সামর্থ অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করছেন। আমাদের কেন্দ্রীয় ত্রান টিম ছাড়াও স্থানীয় নেতাকর্মীরা বানভাসিদের সাহায্য সহযোগিতা করছেন। দুর্গত মানুষদের ত্রাণ সহায়তা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন তারা। সেখানেও ক্ষমতাসীনরা বাধা দিচ্ছে। আর সরকার ত্রানের পরিবর্তে ব্যস্ত পদ্মা সেতু নিয়ে তথাকথিত উন্নয়নের গল্প প্রচারে। তাই আবারো প্রমাণ হয়েছে জনগণের দুঃখ দুর্দশা বিপদ আপদে একমাত্র বিএনপিই তাদের পাশে থাকে। আর আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা ব্যস্ত থাকে লুটপাট-অপকর্ম আর অপপ্রচারে। সরকার ব্যস্ত আখের গোছাতে। একদিকে এই বন্যা পরিস্থিতি আবার দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষ চরম সংকটে দিনাতিপাত করছে। কিন্তু পত্রিকায় খবর এসেছে সুইস ব্যাংকে যেকোন সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা হয়েছে, গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৫৫ ভাগ। প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা এই একটি ব্যাংকেই জমা আছে। এরা একদিকে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। 
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এবারের বাজেটেও এই পাচারকৃত অর্থ দেশে আনার জন্য বিশেষ কর রেয়াতের ঘোষণা দিয়েছে যা অর্থ পাচারকে উৎসাহিত করা ছাড়া ভিন্ন কোন ফল বয়ে আনবে না। বিশাল বিশাল মেগা প্রজেক্টের বরাদ্দ অব্যাহত আছে। এই সকল প্রকল্পের ব্যয় তার প্রারম্ভিক ব্যয়ের তুলনায় আট থেকে দশ গুণ করে বাড়ছে। জনগণের টাকা দেদারসে লুটপাট করে একদল মানুষ রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। মানুষের ভাত-কাপড়ের অধিকার যেভাবে কেড়ে নেয়া হয়েছে একইভাবে জনগণের ভোটের অধিকারকেও যাদুঘরে পাঠানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের অপশাসনে সমাজে মারাত্মক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটলেও তাতে নজর নেই। শিক্ষকদেরকে স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে মারা হচ্ছে। মানুষ যখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে সংগঠিত হচ্ছে, তখন তারা ইভিএমের নামে ভেলকিবাজি শুরু করেছে। এই কমিশন ভোটারদের সাথে নির্মম প্রবঞ্চনা আর কপোটতা ছাড়া কিছুই করবে না। এরা ভোট-নির্বাচনকে বিপজ্জনক চোরগর্তের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের মিথ্যার বাড়াবাড়ি কোন বিজয় আনতে পারে না।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom