পরিষ্কার কথা, এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের পরিষ্কর কথা! এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। শুধুমাত্র নিজ পরিবার ও নেতাদের লুটের কারণে দেশ আজ ফোকলা হয়ে গেছে। দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি, আপনাদের উন্নয়ন হয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক :বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের পরিষ্কর কথা! এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। শুধুমাত্র নিজ পরিবার ও নেতাদের লুটের কারণে দেশ আজ ফোকলা হয়ে গেছে। দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি, আপনাদের উন্নয়ন হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গোপীবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত পদযাত্রা কর্মসূচির পূর্বে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও গুলিসহ দমন-নিপীড়নের প্রতিবাদে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তি, গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে আজ এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, আজকে ক্ষমতাসীনদের চুরির কারণে ব্যাংক খালি, ডলার নেই। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছে না। দেশে আজ গণলুট চলছে। এরা যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের সম্পদ লুট করে। তিনি বলেন, একটাই দাবি এই সরকারের পদত্যাগ, ব্রিটিশদের মতো আওয়ামী লীগ হচ্ছে বর্গির দল, তারা ক্ষমতায় এসে সব কিছু লুট করে নিয়ে চলে যায়। আওয়ামী লীগ মূলত একটি সন্ত্রাসী দল। তারা কখনো ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আসেনি। সবসময় তারা একটা ত্রাস সৃষ্টি করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৫ বছরে অনেক অত্যাচার হয়েছে- আর নয়- জনগণকে বাসা থেকে বের হতে হবে, জেগে উঠতে হবে। সরকার দেশটিকে ফতুর বানিয়ে ফেলেছে। একদিকে দব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ গরিব হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। তারা বলে উন্নয়ন উন্নয়ন, এমন উন্নয়ন হয়েছে যে মানুষ আজ বিদ্যুৎ পায় না, পানি পায় না, গ্যাস পায় না।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা প্রশাসনকে ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্র র্যাব এবং পুলিশকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আমরা এটি চাইনি, এটি জাতির জন্য লজ্জাকর, তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে র্যাব ও পুলিশকে দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। এবারো আমেরিকায় অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ দাওয়াত পাইনি, এতে বিশ্বের কাছে আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়। যে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ হয়েছে, সে গণতন্ত্র হরণের অভিযোগেই গণতন্ত্র সম্মেলনে দাওয়াত পায়নি বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিদেশীদের বলেছেন- উনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে! তার এ বক্তব্যে মানুষ হাসে। আমাদের পরিষ্কার কথা- এ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। দেশের অনেক ক্ষতি করেছেন। শুধুমাত্র নিজ পরিবার ও নেতাদের লুটের কারণে দেশ আজ ফোকলা হয়ে গেছে। দেশের মানুষের কোনো উন্নয়ন হয়নি, আপনাদের উন্নয়ন হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন- বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না। তাহলে কেনো পাহাড়া দেন? এখনো সময় আছে, দেয়ালের লিখন পড়েন। সারাদেশের মানুষ নেমে পড়েছে। সময় থাকতে পদত্যাগ করুন, নতুবা রেহাই পাবেন না।
রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি নিজেও জানে না উনি রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। তা তিনি আবার এক সাক্ষাৎকারেও বলেছেন। এ থেকে প্রমাণ হয় এ সংবিধানে দেশ চলবে না। সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের উত্থাপিত ২৭ দফার আলোকে সংবিধান পরিবর্তন করে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়াই করছে না। বিএনপি জনগণের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে। প্রতিবেশী দেশের কিছু লুটেরার সঙ্গে আঁতাত করে বাংলাদেশকে লুট করছে কিছু লোক। আওয়ামী লীগকে নয়, দেশের জনগণকে সমর্থন দিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, অন্যথায় হিতে বিপরীত হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, বিএনপি ও জনগণের কথা এক, সরকারের পদত্যাগ। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। তিনি বলেন, ভোট ও জনগণের ওপর বিশ্বাস করলে অরাজকতা সৃষ্টি না করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেন। অন্যথায় দায় নিতে হবে সরকারকে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমি খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী দিনে আরও বড়, তীব্র আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটাতে হবে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো ঢাকায় এসে বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে কোনো স্বীকৃতি দিচ্ছে না বিশ্ব। গণতন্ত্র সুসংহত করার নকশা নয়, ধ্বংস করার নকশা করছে সরকার। দেশের বাইরেও ফ্যাসিস্ট সরকারের দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে বাংলাদেশ। ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, এই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলন। আরও সাহসী হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না প্রমুখ। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন,বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দীন আলম, শায়রুল কবির খান, দিদিারুল আলমসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।