নড়াইলে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত ১২

বুধবার (৩১ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার চাচুড়ি গ্রামের আনসার শেখের বাড়ির সামনের খাল পাড়ে  চাচুড়ি ও ফুলদাহ গ্রামবাসীর মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

নড়াইলে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে পুলিশ কর্মকর্তাসহ আহত ১২

প্রথম নিউজ, নড়াইল: নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (৩১ মে) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার চাচুড়ি গ্রামের আনসার শেখের বাড়ির সামনের খাল পাড়ে  চাচুড়ি ও ফুলদাহ গ্রামবাসীর মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। কালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ তাসমীম আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

আহতরা হলেন- কালিয়া থানার ওসি শেখ তাসমীম আলম, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম, বিপ্লব ফকির (৪০), রমজান বেগ (৪০), শুকুর মোল্যা (৪৫), হাবিব মোল্যা (২০) সাহাবুউদ্দিন (৪০), আব্দুল্লাহ (৩৫), মিল্টন মোল্যা (৩৮), মুহিদ মোল্যা (৫০), খাইরুল মোল্যাসহ (৩৫) অন্তত ১২ জন। আহতরা নড়াইল সদর হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের ফুলদাহ গ্রামের একাংশের নেতৃত্ব দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া সমর্থিত সাবেক শিক্ষক ফসিয়ার মোল্যা। অন্যদিকে চাচুড়ি ইউনিয়নের চাচুড়ি গ্রামের নেতৃত্ব দেন নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি সমর্থিত সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা।

জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার (৩০ মে) সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর চাচুড়ি বাজারে ফসিয়ার মোল্যার নেতৃত্বে  গোলাম মোস্তফার ছেলে মুকল মোল্যা (৪৫), মৃত হাশেম মোল্যার ছেলে মাওলানা গোলজার মোল্যা (৫০), আকছেদ মোল্যার ছেলে তোফায়েল শেখ (২৫) ও রিজু শেখের ছেলে আব্দুল্লাহকে (২৫) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনার জের ধরে বুধবার সকালে ৭টার দিকে চাচুড়ি বাজার সংলগ্ন কালিয়া-নড়াইল সড়কে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গোলাম মোস্তফার পক্ষে পুরুলিয়া ইউনিয়নের ফুলদাহ গ্রামের একাংশ ও চন্দ্রপুর গ্রামের একাংশ চাচুড়ি গ্রামের সঙ্গে যোগ দেয়। অপরদিকে ফুলদাহ গ্রামের ফসিয়ার মোল্যার পক্ষে চন্দ্রপুর গ্রামের একাংশ যোগ দেয়। এরপরই চাচুড়ি গ্রামের আনসার শেখের বাড়ির সামনের খাল পাড়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। 

গোলাম মোস্তফার পক্ষের ইমরুল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় সচিব খাজা মিয়ার নির্দেশে ফসিয়ার মোল্যার নেতৃত্বে  আমাদের দলীয় লোকজনের ওপর হামলা চালিয়ে মসজিদের ইমামসহ চারজনকে কুপিয়ে আহত করেন। আজ সকালেও তারা আমাদের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় আমাদের ৪/৫ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে ফসিয়ার মোল্যা পক্ষের বাদল মোল্যা পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, সকালে আমাদের লোকজন ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ করে চাচুড়ি গ্রামের লোকেরা এসে আমাদের ওপর হামলা করেছে। কয়েকটি বাড়িঘর কুপিয়েছে। এ সময় আমাদের ৫-৬ জন আহত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানান, এমপি আর সচিবের ক্ষমতার লড়াইয়ে আমাদের সাধারণ জনগণের জীবন দূর্বিষহ। তারা তাদের ক্ষমতা দেখাতে গিয়ে মারামারি করেন। মাঝখানে পড়ে আমরা আছি বিপদে। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ না হলে ক্ষমতার লড়াইয়ে যে কোনো সময় মার্ডার হয়ে যাবে। নড়াইলের পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। এ ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে যে বা যারাই নেতৃত্ব দিক না কেন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।