নিম্নমানের পাঠ্যবই ছাপছে ৯ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান, ৫০ হাজার ফর্মা নষ্ট

নিম্নমানের বই ছাপিয়ে এনসিটিবিকে হস্তান্তরও করতে যাচ্ছিলো। পরে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রায়-প্রস্তুত ৫০ হাজার পাঠ্যবই ও ছাপানো ফর্মা কেটে বিনষ্ট করা হয়েছে।

নিম্নমানের পাঠ্যবই ছাপছে ৯ মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান, ৫০ হাজার ফর্মা নষ্ট
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: স্কুলগুলোর জন্য নিম্নমানের বই ছাপার অভিযোগ পেয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ৯টিরও বেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। তারা নিম্নমানের বই ছাপিয়ে এনসিটিবিকে হস্তান্তরও করতে যাচ্ছিলো। পরে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রায়-প্রস্তুত ৫০ হাজার পাঠ্যবই ও ছাপানো ফর্মা কেটে বিনষ্ট করা হয়েছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘গ্লোবাল প্রিন্টিং অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট প্রেসসহ বেশ কিছু প্রেসে প্রস্তুত করা পাঠ্যবই ও বইয়ের ফর্মা কেটে বিনষ্ট করা হয়েছে। প্রথম থেকে এসব প্রেস মালিকদের বলে আসছিলাম—নিম্নমানের বই না ছাপার জন্য। কিন্তু তারা শোনেনি। আমরা অনেক বই বাতিল করেছি। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবো। নিম্নমানের বই দেবে—এটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। তিনি আরও জানান, কোনও মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের বই ছাপিয়ে আমাদের হাতে তুলে দেবে, আমরা তা মেনে নেবো তা হতে পারে না। আমাদের পরিদর্শন টিম মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজর রাখছে। নিম্নমানের বই ছাপার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শুরুই করতে পারেনি দশবিশা ও জাহানারা প্রেস। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘১৯ ডিসেম্বর থেকে এরা বই ছাপা শুরু করছে। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ৫০ শতাংশ বই সরবরাহ করবে। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এনসিটিবি জানায়, গ্লোবাল প্রিন্টিং অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট, আমিন আর্ট প্রেস অ্যান্ড প্রিন্টিং, আলামিন প্রেস, সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশনস, লিখন লিখন আর্ট প্রেস, হাওলাদার প্রেস, এস এস প্রিন্টার্স, নয়ন মনি এবং রিফাত প্রেসে ছাপানো ৫০ হাজার পাঠ্যবই ও বইয়ের ফর্মা কেটে বিনষ্ট করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে এসব বই কেটে ফেলা হয়।

অভিযোগে জানা গেছে, বেশ কিছু মুদ্রণ মালিক কাগজ সংকটের সুযোগ নিয়ে নিম্নমানের বই সরবরাহ করেছেন। খবর পেয়ে নিয়মিত পরিদর্শনে গিয়ে এনসিটিবি ওইসব ছাপা বই বাতিল করে কেটে ফেলে। বই আকারে বাইন্ডিংয়ের আগেই ছাপানো ফর্মা কেটে ফেলা হয়েছে। এনসিটিবি দাবি করেছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ বই ছাপা এবং সরবরাহ সম্ভব হবে। তবে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাগজ সংকটের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে বই ছাপার অগ্রগতি নেই। জাহানারা প্রেস ব্যাংক ঋণ না পেয়ে বই ছাপার কাজ শুরু করতে পারেনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান মালিক জানান, দেশে সেকেন্ডারি পাল্পের সংকটে বই ছাপা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা কাটেনি। ব্যাংকের এলসি খোলা সীমিত করার কারণে ভার্জিন পাল্প আমদানি করতে পারছেন না তারা। কাগজকলগুলোতে সেকেন্ডারি পাল্পের সংকট রয়েছে স্বীকার করে এনসিটিবি জানায়, চেষ্টা করা হচ্ছে এ বছরের সংকট উত্তরণে। জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবার কাগজের সংকট মেটাতে পুরাতন বই কাগজকলগুলোতে পাঠিয়ে তাদের কাছ থেকে কাগজ নিচ্ছি। এবার হয়তো সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব হবে, তবে কাগজ সংকট অব্যাহত থাকলে আগামীতে বিকল্প চিন্তা করতে হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে কাগজ সংকট চলছে কিছুদিন আগে থেকেই। এদিকে ডলার সংকট মেটাতে ভার্জিন পাল্প আমদানি করার সুযোগ পায়নি কাগজকল মালিকরা। ফলে রিসাইকেলের মাধ্যমে তৈরি কাগজে পাঠ্যবই ছাপার সুযোগ দেওয়া হয়েছে মুদ্রণ মালিকদের। এ কারণে পাঠ্যবইয়ের মান এমনিতেই বেশি ভালো হবে না।  অন্যদিকে আগামী ১ জানুয়ারি পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে চায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির মুদ্রণ মালিক সবচেয়ে নিম্নমানের কাগজে বই ছেপে সরবরাহের চেষ্টা করছে।

প্রসঙ্গত, দেশে কাগজের সংকট থাকলেও পাঠ্যবই ছাপার জন্য এক লাখ টনের বেশি কাগজ প্রয়োজন হবে। এই কাগজের সরবরাহ না থাকায় দ্রুত বই ছাপার কাজে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কাগজকলগুলোতে কাগজ তৈরির পর তাদের কাছ থেকে সরবরাহ নেওয়া হচ্ছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom