Ad0111

দেশের সমবায় সমিতির এক তৃতীয়াংশই অকার্যকর

আশির দশকে কৃষি সমবায় সমিতিগুলো খু্বই কার্যকর থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় নিষ্ক্রিয়

দেশের সমবায় সমিতির এক তৃতীয়াংশই অকার্যকর
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সমবায় অধিদফতর ও পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতাভুক্ত দুই লাখের মতো সমবায় সমিতির এক তৃতীয়াংশই অকার্যকর। পাশাপাশি সক্রিয় সমিতিগুলোর বেশিরভাগেরই কার্যক্রম খুবই সীমিত পর্যায়ে। সমবায় অধিদফতরের একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সরকারের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগও সমবায় সমিতিগুলো নিষ্ক্রিয় হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানায়, সদস্যদের টার্গেট পূরণসহ নানা কারণেই দিনে দিনে এসব সমবায় সমিতি নিষ্ক্রিয় হয়েছে। তবে সক্রিয় করার ক্ষেত্রে তাদের খুব একটা করণীয় নেই। তারা রেগুলেটরি বডি হিসেবে কেবল উদ্বুদ্ধ করতে পারে। সমিতির সদস্যদেরই এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

সমবায় অধিদফতরের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সমবায় অধিদফতর ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) আওতাভুক্ত দেশের মোট সমবায় সমিতির সংখ্যা এক লাখ ৯৬ হাজার ৩১৬টি। এর মধ্যে সমবায় অধিদফতরের আওতায় এক লাখ ৬ হাজার ৮৯০টি এবং পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতাভুক্ত ৮৯ হাজার ৪২৬টি। প্রাথমিক সমিতি এক লাখ ৯৫ হাজার ৮৬টি। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এক হাজার ২০৮টি এবং জাতীয় পর্যায়ে ২২টি।

এসব সমবায় সমিতির মোট সদস্য এক কোটি ১৭ লাখ ৭ হাজার ৫১৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৯ লাখ ৮১ হাজার ৮৬৫ জন এবং নারী ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৪৯ জন। সমবায় সমিতির মূলধন ১৫ হাজার ৪৪২ কোটি ৫৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। সমিতির ভৌত সম্পদ তিন হাজার ৯০৮ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার টাকা। বিনিয়োগকৃত সম্পদ এক হাজার ৭৫৫ কোটি ৩৫ লাখ ৬৯ হাজার টাকা। মজুত তহবিল এক হাজার ১১৪ কোটি ৯ লাখ ৪১ হাজার টাকা। সর্বমোট ৬ হাজার ৭৭৮ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা। বিগত সময়ে সমবায় সমিতির মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে ৯ লাখ ৬৩ হাজার ১৫১ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সমবায় অধিদফতর ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) আওতাভুক্ত সমবায় সমিতির ৩০ শতাংশই অকার্যকর। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ সমিতির মধ্যে প্রায় অর্ধেক অকার্যকর না হলেও কার্যক্রমের পরিধি তেমন বিস্তৃত নয়। ফলে অবদান দৃশ্যমান নয়। প্রতিবেদনে সমবায় খাতের সমস্যা হিসেবে নিবন্ধিত সমবায় সমিতির সংখ্যা অনুযায়ী জনবল স্বল্পতা ও সমিতি ব্যবস্থাপনায় অনাকাঙ্ক্ষিত স্থানীয় প্রভাবের কথা উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশির দশকে কৃষি সমবায় সমিতিগুলো খু্বই কার্যকর থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় নিষ্ক্রিয়। এছাড়া অন্যান্য সমিতির অবস্থাও একই ধরনের। তবে, মৎস্য সমবায় সমিতি, দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেডসহ কিছু সক্রিয় সমিতিও রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলার কৃষি সমবায় সমিতির এক নেতা জানান, আগে তারা সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষিঋণসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা পেতেন। কিন্তু এখন সেটা আগের মতো আর দেওয়া হয় না। তাছাড়া সমিতিতে সক্রিয় রাখতে হলে নিয়মিত সভা, নির্বাচন ও অডিট করানোসহ নানা ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। এ কারণে সদস্যরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, তার উপজেলায় ১২০টির মতো সমবায় সমিতি রয়েছে। এর মধ্যে ২০টির মতো দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। বাকিগুলো আমাদের হিসাবের মধ্যে সক্রিয়। তবে সত্যিকার অর্থে নিয়মিত লোন নিচ্ছে, পরিশোধ করছে এবং অডিট ও নির্বাচন ঠিকমতো হচ্ছে এমন সক্রিয় সমিতির সংখ্যা ৫-৭টি।

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘নানা কারণে এসব সমিতি নিষ্ক্রিয় হয়েছে। দেখা যায়, একটি উদ্দেশ্য নিয়ে সমবায় সমিতি করেছে, সেটা বাস্তবায়ন হলে তারা আর সক্রিয় থাকে না। আর ব্যর্থ হলেও নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। আবার দেখা গেলো একটি ফান্ড গঠনের জন্য সমিতি করে। একটি পর্যায়ে আসার পর তারা টাকা পয়সা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়। পরে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘সমবায় সমিতি যেমন নানা ধরনের, তাদের নিষ্ক্রিয় হওয়ার কারণও ভিন্ন। যেমন তাঁতী সম্প্রদায়ের অনেকগুলো সমবায় সমিতি ছিল। এখন আগের মতো তাঁত নেই। তাঁতীও নেই। যে কারণে তাদের সমিতিগুলো আর সক্রিয় নেই।’ নিষ্ক্রিয় হওয়ার পেছনে সমবায় অধিদফতরের মাঠ প্রশাসনের গাফিলতি থাকতে পারে বলেও এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান।

সমিতিগুলোকে কার্যকর করার উদ্যোগ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সমবায় সমিতিগুলো সক্রিয় হতে হলে সমিতির সদস্যদেরই করতে হবে। আমরা কেবল তাদের উৎসাহ  করতে পারি। এর বাইরে খুব একটা করণীয় নেই।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news