তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১১.৪১%

তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১১.৪১%
তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১১.৪১%

প্রথম নিউজ, অনলাইন: আমদানি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী উদ্যোগের মধ্যেও বৈদেশিক বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি আরও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে বাণিজ্য ঘাটতি সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১.৪১ শতাংশ বেশি। এ সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও ঘাটতি আরও বেড়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম প্রান্তিক শেষে দাঁড়িয়েছে ৩৬১ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫৪ কোটি ডলার বা ৪১.৮৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যর তথ্যে দেখা গেছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি আয় ও আমদানির ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান হয়েছে ৭৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৬৭৭ কোটি ডলার। 

রেকর্ড ৩৩.২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি এবং ১৮.৬৯ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে শুরু করা নতুন অর্থবছরে আমদানি নিয়ন্ত্রণে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগ ছিল শুরু থেকেই। ডলার সংকটের মধ্যে কড়াকড়ির কারণে আমদানি কিছুটা কমলেও অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও তা বেশি ছিল। জুলাই-আগস্ট শেষে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো। এক মাসের ব্যবধানে তা আরও বেড়েছে ২.৯ বিলিয়ন ডলার। আর এক মাসের ব্যবধানে চলতি হিসাব ঘাটতি ২১০ কোটি ডলার বেড়েছে। আগস্ট শেষে এ হিসাবে ঘাটতি ছিল ১৫০ কোটি ডলার।
পিআরআই নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, প্রথম প্রান্তিকে আমদানি চাপ কিছুটা কমে এলেও রপ্তানি ও রেমিট্যান্সও কমছে। 

যে কারণে বাণিজ্য ও লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি বাড়ছে। তাই রেমিট্যান্স যে করেই হোক বাড়াতে হবে। গত এপ্রিল-জুলাই সময়ে খোলা এলসি (ঋণপত্র) এর চাপ এখন দেখা যাচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতির এ চাপ আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে। তিনি বলেন, আমদানি কমে আসাটা কিন্তু অর্থনীতিকে চাপের বাইরে নিয়ে আসতে পারছে না, চাপ থাকছেই। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স যে চাপ তৈরি করছে তা নিয়ে ভাবতে হবে। অর্থনীতির এ চাপ এখন সবখানেই দেখা দিয়েছে।

রিজার্ভের উপর চাপ কমিয়ে আনতে গত এপ্রিল থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে ৩০ লাখ ডলারের সম পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। আর সরকারি পর্যায়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সাময়ীক স্থগিত রাখাসহ অর্থছাড় কমিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে বেড়েছে ১১.৮৯ শতাংশ। অন্যদিকে এ সময় আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৯৩৪ কোটি ডলার। গত বছরের একই সময় থেকে বেড়েছে ১১.৭০ শতাংশ।

আমদানি ও রপ্তানি আয়ের এ ব্যবধানই জানান দিচ্ছে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১.৪১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ঘাটতি ছিল ৬৭৭ কোটি ডলার। আমদানি-রপ্তানিতে সৃষ্ট বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখে প্রবাসীদের আয়। গত দুই মাস ধরে এ খাতেও বিদেশি মুদ্রা আসা কমেছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশে ৫৬৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। এতে করে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) ঘাটতি আরও বেড়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে যা দাঁড়িয়েছে ৩৬১ কোটি ডলার। গত ২০২২-২২ অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৫৪ কোটি ডলার, বেড়েছে ৪১.৮৫%।

জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সেবা খাতেও বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। এ সময় সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ২২৩ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে ৩৩৩ কোটি ডলার। এতে করে এ খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১০ কোটি ডলারে, এক মাস আগে গত আগস্টে যা ছিল ৭১ কোটি ডলারে। সামগ্রিক লেনদেনে (ওভার অল ব্যালেন্সেস) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪৪ কোটি ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের আলোচিত সময়ে ছিল ৮১ কোটি ডলার। চলতি হিসাবের ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংককে সহায়তা দিতে। চলতি অর্থবছরে গত অক্টোবর পর্যন্ত ৫ বিলিয়নের বেশি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্য ঘাটতি ও ডলার বিক্রি করায় কমে আসছে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। গত ২রা নভেম্বর শেষে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫.৭৩ বিলিয়ন ডলার।