‘তুই শিবির করিস’ বলেই কোটা আন্দোলনকারীকে পেটাল ছাত্রলীগ
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকেল ৫ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির ২৩০ নম্বর কক্ষে এমন ঘটনা ঘটে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের পর তাকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হলেন মো. মোস্তফা মিয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী। তারা বাসা গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়। অভিযুক্তরা হলেন- শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজ রহমান বাবু। সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফরহাদ হোসেন খান ও নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজাসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকেই। তারা সকলেই সভাপতি বাবুর অনুসারী বলে জানা গেছে।
এদিকে, জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোস্তফা। এতে তিনি উল্লেখ করেন, গত সোমবার (৮ জুলাই) রাবির চারুকলা সংলগ্ন ওভার ব্রিজের নিচে কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। এ বিষয়ে জানার পর ছাত্রলীগের নেতা ফরহাদ তাকে কল দিয়ে ক্যাম্পাসে দেখা করতে বলে।
পরে তিনি ভয় পেয়ে বিষয়টি তার বিভাগের বড় ভাই সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ মাহমুদকে অবহিত করেন। আরিফ মাহমুদ আবার অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজাকে জানায় কিভাবে তাকে উপকার করা যায়। কিন্তু শামীম রেজা ক্রেডিট নেওয়ার জন্য তাকে ছাত্রলীগের হাতে ধরিয়ে দেয়।
গত মঙ্গলবার সকালে বিভাগের বড় ভাই আরিফের সাথে দেখা করতে শহিদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে গেলে শামীম রেজা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাকে ধরে ফেলেন এবং 'শিবির ধরছি, নিয়ে আসব নাকি?' এমন কথা বলে টুকিটাকি চত্বরে নিয়ে যায় ভুক্তভোগীকে। সেখান থেকে শিবির আখ্যা দিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর কক্ষে বঙ্গবন্ধু হলে নিয়ে যায় তাকে। পরে ভুক্তভোগীর ফোন চেক করতে শুরু করে ছাত্রলীগ সভাপতি। ফোন চেক করে শিবিরের সাথে কোন ধরনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট করা দেখে এবং আন্দোলনে যাওয়ার কারণে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন এবং বলেন 'তুই শিবির করিস স্বীকার কর'। কিন্তু শিবিরের সাথে ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক না থাকায় ভুক্তভোগী বারবার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ সভাপতি লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি তাকে মারতে শুরু করেন, এসময় কয়েকজন তাকে ঘিরে রাখে। ৮ থেকে ১০ মিনিট মেরে কিছু সময় বিরতি নিয়ে আবারও মারধর করেন। এভাবে দুই ঘণ্টারও অধিক সময় ভুক্তভোগীর উপর নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ফারহাদ নামের ছাত্রলীগ নেতা ভুক্তভোগীর কানে কানে বলে 'তুই শিবির করিস এটা স্বীকার কর, তাহলে ছেড়ে দিব' আর তোর বিভাগের কে কে শিবির করে এটা বললে তাকে ছেড়ে দিবে। অবশেষে কিছু না পেয়ে দীর্ঘ ২ ঘণ্টারও অধিক সময় নির্যাতন চালিয়ে শিবির স্বীকারোক্তি নিতে ব্যর্থ হয়ে তারা তাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে ছেড়ে দেয়।
এদিকে, বাবুর একজন অনুসারী গিয়ে জোহা হলের গণরুম থেকে ওই শিক্ষার্থীকে বের করে দেন। ফলে ওই শিক্ষার্থী আজ সকালের তার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হোন। উক্ত ঘটনার পর ভুক্তভোগী চরমভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে এবং তার জীবন নিয়ে সে চিন্তিত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মো. মোস্তফা বলেন, "আমাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। আমি খুবই অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় আমি বাড়িতে চলে আসছি। আমাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। আমি খুব আতঙ্কে আছি এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যতক্ষণ না আমাকে আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ততক্ষণ আমি ক্যাম্পাসে ফিরব না।"
আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। কিছুক্ষণ আগেই শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তারপর বলতে পারব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর নেব এবং এর সত্যতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। নিরাপত্তা দিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে আনব তবে এর আগে আমাদের ভালো করে বিষয়টি জানতে হবে আসলে কী হয়েছে।