ড. ইউনূসের পদত্যাগ তার জন্য আত্মঘাতী হবে : ফরহাদ মজহার

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে উপদেষ্টা পদে থেকে কী লাভ, সে কথাও বলেছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ক্ষোভ ও হতাশার কথা তুলে ধরেন তিনি।
পরে তার সঙ্গে দেখা করতে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে নাহিদ ইসলাম বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন।’
এদিকে এই ঘটনায় শুক্রবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ড. ইউনূস পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে ভুল করেছেন।
পদত্যাগ করা হবে তাঁর ব্যর্থতা, তাঁর জন্য আত্মঘাতী। কোন ব্যক্তি বা দল নয়, তাঁর উচিত জনগণের ঐতিহাসিক অভিপ্রায়কে সম্মান করা, কোন দল বা গোষ্ঠির চাপে বিভ্রান্ত না হয়ে জনগণের ওপর আস্থা রাখা।
তিনি আরো লেখেন, বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নয়, রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ড. ইউনূসকে নির্বাচিত করেছে। তাঁকে অবশ্যই খুনিদের বিচার করতে হবে, নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ণের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন করবার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, কাছা খোলা বাজার ব্যবস্থার জবরদস্তি দ্বারা বৈশ্বিক কর্পোরেট দখলদারি কায়েমের বিপরীতে গণবান্ধব ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও কার্যকর করতে হবে, সর্বোপরি দিল্লি ও মায়ানমারসহ শত্রুদেশের বিরুদ্ধে লড়ে জিতবার ক্ষমতাসম্পন্ন শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করতে হবে; কারণ রোহিঙ্গাদের তাদের নিজের দেশে যাবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং তাদের পুনর্বাসনের হিম্মত বাংলাদেশকেই অর্জন করতে হবে।
বাংলাদেশের সৈনিকেরা এই দেশের সন্তান বাংলাদেশের জনগণের সামষ্টিক ইচ্ছা বা অভিপ্রায়ের সঙ্গে তারা অঙ্গাঙ্গী জড়িত। জনগণের স্বার্থ তাদেরও স্বার্থ। কারণ তারাও জনগণের অংশ–আমরা কেউই মঙ্গলগ্রহ থেকে আসিনি।
ফরহান মজহার লেখেন, এই সকল লক্ষ্য অর্জনের জন্য জনগণ চায় প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সঙ্গে ড. ইউনূসের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হোক। নির্বাচন অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব হতে হবে, কিন্তু কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে সেনাপ্রধান তাঁর এখতিয়ারের বাইরে নির্বাচন নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা লুটেরা ও মাফিয়া শ্রেণিকে পুনরায় ক্ষমতায় বসানোর যুক্তি।
গণ অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী জনগণ তা মেনে নেবে না। দেশকে বিভিন্ন শক্তির ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতার ময়দান ও গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবার দায় তখন সেনাপ্রধানের ওপর বর্তাবে। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করবেন, জনগণ সেই আশাই করে।