ডেঙ্গুতে এক বছরে রেকর্ড মৃত্যু, বেশি ঝরেছে তরুণ প্রাণ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: অতীতের যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখলো বাংলাদেশ। এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৮২ জন, যা দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়। আজ ডেঙ্গুতে আরও পাঁচজনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এতে বছরের প্রায় দুই মাস বাকি থাকতেই এ বছর ২০১৯ সালের সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যাও ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যা বেশি। মোট মৃতের ৪৮ শতাংশই তরুণ ও যুবক। মোট আক্রান্তদের মধ্যেও ২৮ শতাংশই তরুণ। তবে মৃতদের মধ্যে ঢাকার বাইরের বিভাগের বাসিন্দা বেশি। মূলত দেরিতে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাওয়ায় বেশিরভাগ রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ছড়ায়। ২০১৯ সালে দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ দেখা দেয়। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ‘ব্যর্থ’ হওয়ায় চরম সমালোচনার মুখে পড়েন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র। তবে করোনা মহামারির দুই বছর (২০২০ ও ২০২১ সাল) ডেঙ্গুতে মৃত্যু কিছুটা কম ছিল। ২০২২ সালের শুরুতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে দাবি করে আসছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় সুর পাল্টান দুই মেয়র। দাবি করেন, অসময়ে ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামও এতে সুর মেলান।
এদিকে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গুরুত্বসহকারে কাজ করছে বলে জানিয়ে আসছে। তবে নভেম্বর মাসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেনি। প্রতিদিনই মৃত্যু ও সংক্রমণ বাড়ছে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০০ সালে দেশে প্রথম ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ দেখা যায়। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। এরপর প্রতিবছর মৌসুমে ডেঙ্গুর সংক্রমণ দেখা গেলে মৃত্যু ও শনাক্ত কম ছিল। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বছরে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ৫০-এর নিচে।২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়।
এ বছর মারা যান ১৭৯ জন। ২০২০ সালে করোনা মহামারির বছরে মারা যান সাতজন। ২০২১ সালে আবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ওই বছর ১০৫ জনের মৃত্যু হয়।এদিকে, চলতি বছর ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু হলেও আক্রান্তের সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় এ পর্যন্ত কম। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন।চলতি বছর এ পর্যন্ত (১ জানুয়ারি থেকে ৮ নভেম্বর) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ হাজার ৮০২ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৯ হাজার ৬৯৮। ঢাকার বাইরে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার ১০৪ জন। ২০২০ সালে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এক হাজার ৪০৫ জন। ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন।
সংক্রমণ কমলেও মৃত্যু বেশির কারণ কী?
২০১৯ সালের চেয়ে এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অনেক কম। ওই বছরের তুলনায় এবার এখন পর্যন্ত আক্রান্ত অর্ধেকের কম। তবে চলতি বছরের দুইমাস বাকি থাকতেই মৃত্যুর সংখ্যা ২০১৯ সালের চেয়েও বেশি। কম আক্রান্ত হলেও বেশি মৃত্যুর কারণ কী? এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও চিকিৎসকরা বলছেন, মূলত রোগীরা দেরিতে হাসপাতালে আসায় সুস্থ হয়ে ওঠার পরিবর্তে মারা যাচ্ছেন। এ বছর মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই হাসপাতালে ভর্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছেন। হাসপাতালের আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মৃতের হার ৮১ শতাংশ।
মৃতদের ৮৩ শতাংশ ঢাকার বাইরের
চলতি বছর ডেঙ্গুতে ঢাকায় বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তবে মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই ঢাকা বিভাগের বাইরের। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর মৃতদের মধ্যে ১৭ শতাংশ ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। বাকি ৮৩ শতাংশ ঢাকা বিভাগের বাইরের।
আক্রান্ত ২৮ শতাংশই তরুণ
এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে সংখ্যায় বেশি ৪০-৮০ বছরের মধ্যে। আক্রান্ত মোট ৪৪ হাজার ৮০২ জনের মধ্যে ২৮ শতাংশই তরুণ-যুবক। মৃতদের মধ্যেও ৪৮ শতাংশই এ বয়সী।
https://drive.google.com/file/d/1anOYpaMmxx-sEhscvvJEAcM0qYxew3TZ/view
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews