গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে বনশ্রীতে তুলকালাম

পুলিশ বলছে, রোববার সকাল ৮টায় বনশ্রীর ডি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে এই ঘটনা ঘটে।

গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে বনশ্রীতে তুলকালাম

প্রথম নিউজ, অনলাইনগৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে রাজধানীর বনশ্রীতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। স্থানীয় জনতা একটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে, আগুন দিয়েছে, পুড়িয়েছে তিনটি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে অন্তত তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রোববার সকালে এই ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ জনতার হামলায় ভবনটির নিচতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশ বলছে, রোববার সকাল ৮টায় বনশ্রীর ডি ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে এই ঘটনা ঘটে। তবে কোন কারণে গৃহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে তা তারা এখনো নিশ্চিত নন। মৃত্যুর সম্ভাব্য সব কারণ সামনে রেখে তদন্ত চলছে।

ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে জানা যায়, ডি-ব্লকের ওই বাড়ির ছয় তলার ছাদ থেকে রহস্যজনকভাবে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আসমা বেগম (৪২)। তিনি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের কোকরাই গ্রামের মনু মিয়ার মেয়ে। আসমার মৃত্যুর খবর শুনেই ওই এলাকায় জড়ো হন স্থানীয় উৎসুক জনতা। এরপর তারা হামলা চালান ওই বাড়িতে। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ এসে তাদের থামানোর চেষ্টা করলে জনতা পুলিশের ওপর হামলা করে। ইটের আঘাতে রামপুরা থানার ওসিসহ অন্তত তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের থামানোর পর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

রামপুরা থানার ওসি মশিউর রহমান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সকালে বনশ্রীর ওই বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া লোকজন পুলিশকে লাশ উদ্ধারে বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।ওসি জানান, বাড়ির মালিক সাবেক কর কমিশনার দেলোয়ার হোসেন। তার ছেলে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মেহেদী হাসান। সকাল ৮টার দিকে মেহেদী পুলিশকে ফোন করে গৃহকর্মীর ওপর থেকে পড়ে যাওয়ার খবর জানান। এই গৃহকর্মী দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে কানিজ ফাতেমার মিরপুরের বাসায় থাকতেন। কানিজ ফাতেমা ৩ দিন আগে গৃহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাসায় বেড়াতে আসেন।

বনশ্রী সোসাইটির সম্পাদক (নিরাপত্তা) আহসান উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সকালে খবর পেয়ে বাড়িটিতে যান। বাড়ির মালিক দেলোয়ার জানিয়েছেন, নিহত আসমা বেগম তার মেয়ের বাসার গৃহকর্মী। মেয়ের বাসা মিরপুরে। তিনি বলেন, দেলোয়ারের দাবি, তার মেয়ের পরিবার গৃহকর্মীসহ গাজীপুরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তারা বনশ্রীতে আসেন। রাতে সবাই বনশ্রীর বাসায় ছিলেন। ভোরে সবাই যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন আসমা ছাদে গিয়ে সেখানে থেকে পড়ে গিয়ে থাকতে পারে। 

স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে তিনি ভবনটির মূল ফটকের সামনে ওই গৃহকর্মীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। তিনি বলেন, লাশটি এমনভাবে পড়ে ছিল, তাতে মনে হয়েছে যেন কেউ শুয়ে আছে। ছাদ থেকে পড়েছে বলে মনে হয়নি। লাশটিতে কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। পিবিআই ঢাকা মেট্রো দক্ষিণের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আত্মহত্যা না হত্যা, তা আমরা নিশ্চিত নই। দুই ধরনের সন্দেহ রেখেই তদন্ত হচ্ছে। 

মিজানুর বলেন, বাড়ির মালিক দাবি করেছেন গৃহকর্মী আসমা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তিনি বনশ্রীতে আগে কাজ করেছেন। তার পরিচিত গৃহকর্মীদের কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্যহীনতার কথা জানিয়েছেন। তবে এ সংক্রান্ত ডকুমেন্টেটেশন (নথি) পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় বাড়িটির চারতলায় গিয়ে মালিকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা কথা বলতে রাজি হননি।