বড় বোন প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় ছোট বোনকে অপহরণ
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার এক তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন মো. সায়ের আলম পাভেল (৩৪)। কিন্তু তার প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেননি সেই তরুণী। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এবং তরুণীর বাবা-মায়ের কাছে অপমানিত হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন পাভেল। একপর্যায়ে নিজের কথিত ছোটভাই লন্ডনের বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই তরুণীর ছোট বোনকে অপহরণ করে পাভেল।
অপহরণের পর মুক্তিপণ চাইলে ভিকটিমের বাবা বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ওই দিন রাতেই টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধারসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা হলেন, মো. সায়ের আলম পাভেল (৩৪), মো. শেখ আলমগীর (২৩) ও মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)।
পুলিশ জানায়, ওই কিশোরীকে অপহরণ করে টাঙ্গাইলে জাহাঙ্গীরের বাসায় রাখা হয়। পাভেল ইতোপূর্বে আরও দুই মামলার আসামি। এ থেকে পুলিশ ধারণা করছে, গ্রেপ্তাররা নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য। তবে পরবর্তী তদন্তে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
শুক্রবার (১৯ আগস্ট) নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
আজিমুল হক বলেন, গত ১৪ আগস্ট নবম শ্রেণি পড়ুয়া ওই কিশোরীকে প্রলোভন দেখিয়ে বাসা থেকে অপহরণ করা হয়। এরপর জাহাঙ্গীর ভিকটিমের বাবার কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে, অন্যথায় মেয়েটিকে পতিতালয়ে বিক্রি করার হুমকি দেয়। বিষয়টি পুলিশকে জানালে মেয়েকে চিরতরে গুম করে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। একপর্যায়ে ১৮ আগস্ট মেয়েটির বাবা পুলিশকে জানালে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান শনাক্ত করে মির্জাপুর থেকে ভিকটিমকে উদ্ধারসহ দুইজনকে ও পরে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, ছোটভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরীকে অপহরণ করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আলমগীর তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে রং মিস্ত্রির কাজ করে। রং মিস্ত্রির কাজের সুবাদে আলমগীরের সঙ্গে পাভেলের পরিচয় হয়। আলমগীরের মাধ্যমে পরিচয় সূত্রে ওই এলাকার এক তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় পাভেল। তরুণীর বাবা মায়ের কাছেও বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় সে। কিন্তু পাভেল প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয় এবং তরুণীর বাবা-মায়ের কাছে অপমানিত হয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। ওই তরুণীর বিয়ে হয়ে গেলে পাভেল তার ছোটবোনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে।
তিনি আরও বলেন, একপর্যায়ে নিজের কথিত লন্ডন প্রবাসী ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্কুল পড়ুয়া ওই কিশোরীকে বাসা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় পাভেল। এরপর তাকে ঢাকা থেকে নিয়ে টাঙ্গাইলে জাহাঙ্গীরের বাসায় রাখে। এরপর জাহাঙ্গীর ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে।
উদ্ধার কিশোরীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি বলেন, পাভেল এমনভাবে তাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে, তার ভাইকে বিয়ে করার আশায় ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আমরা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ওই ভাইকে দেখেছে কি-না। সে বলেছে কখনো দেখেনি, শুধু ছবি দেখেছে। পাভেলের এই ভাইয়ের কথা বলা প্রতারণারই অংশ হতে পারে।
গ্রেপ্তার পাভেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিসি আরও বলেন, বাবা-মায়ের প্রতি আক্রোশ থেকেই ভিকটিমকে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিতে অপহরণ করে নিয়ে যায়। আমরা ধারণা করছি, তারা নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য, যারা নানা কৌশলে মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। তবে পরবর্তী তদন্তে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রায় ২ বছর ধরেই ভিকটিম ও তার বোনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল পাভেলের। ভিকটিমের বাড়ির সামনে গিয়েও দেখা করে কথা বলত সে। ভিকটিমের ব্যক্তিগত জীবন ও পারিবারিক বিষয়েও পরবর্তী তদন্তে জানা যাবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews