প্রথম নিউজ, লালমনিরহাট: প্রতিবেশীদের হাতে বিবস্ত্রের শিকার হয়ে লজ্জায় এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের গুড়িয়াদহ গ্রামে ওই কলেজছাত্রীর বাড়ি থেকে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। নিহত ওই এইচএসসি পরীক্ষার্থীর নাম ইসরাত জাহান মৌফি (১৮)। সে ওই গ্রামের আব্দুল মতিন মণ্ডলের মেয়ে। স্থানীয় কাউনিয়া ডিগ্রি কলেজের চলতি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল সে।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে নিহত কলেজছাত্রীর বাবা আব্দুল মতিন মণ্ডল বাদী হয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় প্রতিবেশী ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জনের নামে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিবেশী মৃত শরিয়ত উল্লাহ মণ্ডলের ছেলে সুলতান মণ্ডল, সিরাজ আলী মণ্ডল ও শাহজাহান আলী মণ্ডলের পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে ঝগড়া-বিবাদ চলে আসছে। এরই জেরে গত বুধবার সকালে জমি থেকে হাঁস তাড়ানো কেন্দ্র করে ঝগড়ার একপর্যায়ে আসামিপক্ষ আব্দুল মতিন মণ্ডলের বাড়িতে এসে হামলা চালায়।
এ সময় তারা মতিনের স্কুলশিক্ষিকা স্ত্রী, কলেজপড়ুয়া ছেলে ইউসুফ ইয়েম জোয়ান মাহিম (২১) ও মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী জাহান মৌফিকে (১৮) পিটিয়ে আহত করে। এ সময় ময়না, স্বর্ণা ও সাগরিকাসহ কয়েকজন নারী মিলে মৌফির পরনের কাপড় ছিঁড়ে বিবস্ত্র করে। পরে গ্রামবাসী তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে কলেজছাত্রী ইসরাত জাহান মৌফি গ্রামবাসীর সামনে বিবস্ত্র হওয়ায় ভীষণ লজ্জা পেয়ে যায়। আহতরা সবাই হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হলেও মৌফি ঘর থেকে আর বের হয়নি। এক পর্যায়ে দুপুরের দিকে বাড়িতে একা থাকার সুযোগে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ব্যাপারে নিহত কলেজছাত্রীর বাবা আব্দুল মতিন মণ্ডল জানান, আমার মেয়েকে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে তাতে আমার দুঃখ নেই; কিন্তু তারা যদি সবার সামনে বিবস্ত্র না করত, তাহলে সে আত্মহত্যা করত না। তাদের জন্যই আমার মেয়েকে হারালাম। আমি এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, ওই ঘটনায় নিহত কলেজছাত্রীর বাবা আব্দুল মতিন মণ্ডল বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পাঁচ-ছয়জনের নামে আত্মহত্যার প্ররোচনায় লিখিত অভিযোগ দিলে তা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।