ওয়েড ঝড়েই বিধ্বস্ত পাকিস্তান
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অ্যাডাম জাম্পা অসাধারণ বোলিং করেছেন, স্টার্ককে খেলতে কিছুটা সমস্যায় পড়ছিলেন রিজওয়ান...কিন্তু এর বাইরে কাউকেই ছাড় দেননি তিনি
প্রথম নিউজ ডেস্ক: দুবাই ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রেসবক্সে পাশে বসা পাকিস্তানের সিনিয়র এক সংবাদিকের হাত কাঁপছে। কি লিখবেন কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। পারবেন কিভাবে মাত্র ৩টি বলে খেলা শেষ, তিনি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না! চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ১৭১ রান তাড়া করে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা তাও বাংলাদেশের বিপক্ষে। কোন দল এর বেশি রান তাড়া করে জিততে পারেনি। সেখাানে অস্ট্রেলিয়া আর ফাইনালের মধ্যে দূরত্ব ছিল ১৭৭ রানের। টানা পাঁচ জয়ে সেমি-ফাইনালে আসা বাবর আজমের বিপক্ষে তা কঠিনই মনে হচ্ছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেট হাতে রেখে ৬ বল বাকি থাকতে পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে।
ডেভিড ওয়ার্নার বড় একটা ভুলই করে বসেছিলেন।
শাদাব খানের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বলটি স্টিয়ার করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি চলে যায় উইকেটকিপার মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে। আবেদনে সাড়াও দিলেন আম্পায়ার। কিন্তু ওয়ার্নারও রিভিউ না নিয়ে চলে যান। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল বল ওয়ার্নারের ব্যাটেই লাগেনি। এমন একটা ভুলের পর পথ হারিয়ে বসেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কাস স্টয়নিস আর ম্যাথু ওয়েডের কার্যকর এক জুটিতে পাকিস্তানের হৃদয় ভাঙে অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের ১৭৬ রানের বড় সংগ্রহ অসম্ভব দৃঢ়তায় পেরিয়ে গেছে তারা। ওয়েডের ব্যাট থেকে এসেছে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস-১৭ বলে ৪১ রানের। ৫ উইকেটের জয় নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে তারা। ম্যাথু ওয়েডের ইনিংসটিই মূলত অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিয়েছে অসাধারণ এই জয়। শাহিন শাহ আফ্রিদির করা ১৯তম ওভারে ওয়েড তিনটি ছক্কা মারেন। ম্যাচ এখানেই শেষ। হারিস রউফের করা ১৮তম ওভারে অস্ট্রেলিয়া নেয় ১৫ আর হাসান আলীর ১৭তম ওভারে ১৩। যে বোলিং আক্রমণের ওপর পাকিস্তানের এত আস্থা। শেষ পর্যন্ত সেই বোলিংই ডুবিয়েছে পাকিস্তানকে। ওয়েডের সঙ্গে ছিলেন মার্কাস স্টয়নিস। এ দুজন দলের বিপর্যস্তকর পরিস্থিতির মধ্যেও ৪১ বলে ৮১ রানের জুটি গড়েছেন। স্টয়নিস করেছেন ৩০ বলে ৪১। জীবনের সেরা টি-টোয়েন্টি ইনিংসটিই খেললেন ওয়েড। স্ট্রাইকরেট ছিল ২৪১.১৮। এমন স্ট্রাইকরেট আর কখনোই দেখা যায়নি অস্ট্রেলিয়ার এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের ব্যাটে। যদিও তার ক্যাচ ফেলেন হাসান আলী।
এর আগে দুবাইয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের যাওয়ার মঞ্চে পাকিস্তানের ত্রাতা বনেযান ইনিংস উদ্বোধনে বাবর আজমের সঙ্গী মোহাম্মদ রিজওয়ান। গত দুদিনে জ্বর-সর্দির কারণে যাঁর খেলা নিয়েই সংশয় ছিল, শেষ মুহূর্তে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ আসায় তাঁর খেলা নিশ্চিত হয়েছে, সেই রিজওয়ানই আলো ছড়ান। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় ফিফটি পাওয়া রিজওয়ান শেষ পর্যন্ত ৫২ বলে ৬৭ রান করেন। এরপর ঝড় তুলেছেন ফখর জামান, ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৩২ বলে করেছেন ৫৫ রান। এই দুইয়ের সৌজন্যে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭৭ রানের লক্ষ্য দেয় পাকিস্তান। এই মাঠে আগে ব্যাট ১৭৫ বা এর বেশি রান করে ১০টি ম্যাচে মাত্র একবারই হারতে হয়েছে কোনো দলকে।
এদিন রিজওয়ানের অস্বস্তিতে থাকার সময়টুকুতে বাবর আজম টেনে নিচ্ছিলেন পাকিস্তানকে। তাতে পাওয়ারপ্লের ৬ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান দাড়ায় বিনা উইকেটে ৪৭। যা এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ। বাবরের রান তখন ১৮ বলে ২৪। ততক্ষণে বাবরের চার হয়ে গেছে চারটি। রিজওয়ানের চার দুটি, ছক্কা একটি। তবে পাওয়ারপ্লের শুরুতে এলোমেলো অস্ট্রেলিয়া পাওয়ারপ্লের শেষ দিক থেকে বাউন্ডারিতে রাশ টানার চেষ্টা করে। তার ফলেই দশম ওভারে উইকেটের দেখা পায় তারা। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বল থেকে শুরু করে দশম ওভারের শেষ বলে বাবর আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত জাম্পা, ম্যাক্সওয়েল, মিচেল মার্শরা মিলে চার দিয়েছেন মাত্র একটি। সেই চাপেই ছক্কা মারতে গিয়ে জাম্পার করা দশম ওভারের শেষ বলে লং অনে ধরা পড়লেন বাবর। পাকিস্তানের রান তখন ৭১। সেখান থেকেই দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেয় রিজওয়ান। তাঁকে ইনিংসের শুরুতে ভোগানো স্টার্কের করা আঠারোতম ওভারের দ্বিতীয় বলেই শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন রিজওয়ান। বাবর আউট হওয়ার পর একদিকে রান তোলার দায়িত্ব ছিল, অন্য প্রান্তে তিনে নামা ফখর জামানের ছন্দ খুঁজে পেতে বেশ সময় লাগছিল। রিজওয়ান সামলে নিয়েছেন সবকিছুই। ১৩তম ওভারে স্টার্কেরই বল তাঁর হেলমেটে লেগেছে, হেলমেটের স্টিলের ধাক্কায় গাল ফুলেও গেছে তাঁর, কিন্তু রিজওয়ান সামলে নিয়েছেন সেটিও। সামলে নিয়েই কী দারুণ খেললেন।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অ্যাডাম জাম্পা অসাধারণ বোলিং করেছেন, স্টার্ককে খেলতে কিছুটা সমস্যায় পড়ছিলেন রিজওয়ান...কিন্তু এর বাইরে কাউকেই ছাড় দেননি তিনি। তবে আঠারোতম ওভারে রিজওয়ান আউট হলেও এরপর ফখর দেখা দিয়েছেন পাকিস্তানের ত্রাতা হয়ে। এক প্রান্তে আসিফ আলী, শোয়েব মালিকরা দ্রুত ফিরেছেন, অন্যদিকে ফখর তুলেছেন ঝড়। স্টার্ককে উড়িয়ে মেরেছেন অনায়াসে, ছাড় দেননি কামিন্সদেরও। নিজের ইনিংসের ১৮তম বলে ছক্কা মেরে ছন্দ খুঁজে পাওয়া ফখর ঝড়টা স্টার্কের ওপরই বেশি তুলেছেন। তাঁর চার ছক্কার তিনটিই স্টার্কের বলে, চারও মেরেছেন একটি। ফখরের কারণেই শেষ দিকে ঝড় তুলেছে পাকিস্তান। ১৯তম ওভারে প্যাট কামিন্স মাত্র ৩ রান দিয়েছেন, তবু শেষ ৪ ওভারে ৫৪ রান তুলেছে পাকিস্তান।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: