ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জামায়াতের

দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে এ আহ্বান জানিয়েছে বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান।

ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জামায়াতের

প্রথম নিউজ, অনলাইন: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত। দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের বৈঠকে এ আহ্বান জানিয়েছে বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান। জামায়াত বলছে, দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং জনগণের ভোটাধিকার বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। সরকার ৭ই জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে।

গত ৮ মে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকারি দলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত, সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণে অর্ধশতাধিক লোক আহত ও যানবাহন ভাঙচুর এবং ভোট কারচুপি ও অনিয়মে জড়িত থাকায় ৩ জন প্রিসাইডিং অফিসার এবং ২ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে গ্রেপ্তারের ঘটনার মাধ্যমে জাতির সামনে আবারো প্রমাণিত হয়েছে যে, দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোন পরিবেশ নেই। দলটি বলছে, সরকার বলেছিল যে- উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিরা তাদের নিকট আত্মীয়দের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনীত করতে এবং নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন না। কিন্তু ৮ মে’র উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও এমপিদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে এবং জাতীয় সংসদের ডামি নির্বাচনের মতই উপজেলা নির্বাচনে আরেকটি ডামি নির্বাচনের আয়োজন করে নিজেদের প্রার্থী বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে না।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত বলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে সরকার প্রতিষ্ঠা ব্যতীত দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হতে পারে না। সেজন্য সর্বাগ্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। জনগণ এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে রাজি নয়। তাই তারা একতরফা জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকার জনমতের তোয়াক্কা না করে স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন করে নিজেদের পছন্দের ডামি প্রার্থীদের বিজয়ী করে ক্ষমতায় বসাতে চায়। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ প্রহসনের উপজেলা নির্বাচন বর্জন করায় জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছে। আর ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার যে হীনপন্থা অবলম্বন করেছে তাতে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা বলতে আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে না। যা গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত।

দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ মনে করে, সরকার দুর্নীতি এবং ব্যাংক লুটপাট ও শেয়ার বাজারে ধস তৈরি করে, বিদেশে অর্থ পাচার করে নিজেদের আখের গোছানোর জন্য তারা দেশে যে নির্বাচনহীন পরিবেশ তৈরি করেছে তা থেকে মুক্তি পেতে হলে ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হওয়ার মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হতে পারে। এজন্য সর্বাগ্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করতে হবে।  সকল রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এবং দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে জাতিকে বর্তমান সংকট থেকে উদ্ধার করার জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে জামায়াত।