কারও উপর নির্ভর করে গণতন্ত্র আসবে তা মনে করি না: ফখরুল

মঙ্গলবার(১৪ মে) গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

কারও উপর নির্ভর করে গণতন্ত্র আসবে তা মনে করি না: ফখরুল

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ কারো উপর নির্ভর করে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরে আনবে, তা আমরা মনে করি না। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যুগপৎ আন্দোলনের শরীক দল গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। মির্জা ফখরুলের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি'র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বরাবর একই কথা বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ কারো উপর নির্ভর করে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরে আনবে, এটা আমরা মনে করি না। বাংলাদেশের জনগণ সব সময় নিজের শক্তিতে এবং নিজের পায়ের উপর ভর করে ৭০ সালের পূর্বে আন্দোলন করেছে, ৭০ সালে আন্দোলন করেছে, ৭১ মুক্তিযুদ্ধ করেছে এবং পরবর্তীকালে আমরা যে আন্দোলন করছি, তা সম্পূর্ণ জনগণের শক্তিতের ওপর নির্ভর করেই আন্দোলন করছি গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য। সুতরাং এবিষয়ে আমরা খুব বেশি একটা কথা বলতে চাই না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, একেবারে ভয়াবহ পর্যায়ে। খাদের কিনারায় গিছে। পড়ে যাবে।

বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা যায় এবং কীভাবে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং তার বিশ্লেষণ- সেই সঙ্গে কর্মসূচি নির্ধারণে আমরা প্রাথমিক কিছু আলোচনা আজকে করেছি। একটি কথা আমরা এখানে সবাই একমত হয়েছি। যেটা হলো, যেকোন পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে তরুণ, যুবক এবং ছাত্র সমাজ। সেক্ষেত্রে আমি খুব আশাবাদী, গণঅধিকার পরিষদে সবাই তরুণ এবং ছাত্র সমাজ থেকে উঠে এসেছেন। ছাত্র নেতা ছিলেন। আর এই আন্দোলনে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত জোরালো ছিলো।   

ফখরুল বলেন, জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে আমরা যে দফাগুলো তুলে ধরেছিলাম। বিশেষ করে ৩১ দফা। আর আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আমরা একদফার কথা বলেছিলাম। মূল কথা ছিলো, নিরপেক্ষ এবং অবাধ একটি নির্বাচন, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন করা। সেই লক্ষ্যে বিগত কয়েক বছর ধরেই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ধারায় আলোচনা করছি এবং আন্দোলন করছি। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। বর্তমান যে অবৈধ সরকার, যারা বিনা ম্যান্ডেটে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা (বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো) দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম ও লড়াই করছি। এজন্য আমরা প্রায় ৬৩টি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করে আসছি। 

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, অতীতে আমাদের আন্দোলনের বিষয়বস্ত নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছি। সেখানে জনগণের যে সমর্থন ছিলো এবং তাদের রাজপথে উপস্থিত ছিলো, সেখানে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার যেভাবে দমন-পীড়ন করেছে এবং আইন-আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিরোধীদল নির্মূল করে একদলীয় শাসন কায়েমের জন্য সরকারের যে অপ্রচেষ্টা, সেটা নিয়ে আমরা সবাই সতর্ক আছি। আর এই স্বৈরশাসনের অবসান না ঘটিয়ে এবং আগামীর নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা না পর্যন্ত এই রাজনৈতিক দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন চলবে।

নুর ছাড়াও বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, এ্যাডভোকেট নূরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, মাহফুজুর রহমান খান, মো. রবিউল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, মানবাধিকার সম্পাদক এ্যাডভোকেট খালিদ হাসান উপস্থিত ছিলেন। 

পরে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি'র লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা। বৈঠকে সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির (পিডিপি) মহাসচিব হারুন আল রশিদ খান, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডা. সামছুল আলম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড হারুন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।