জামায়াতের নিবন্ধন চেয়ে আপিল বিভাগে ৪৭ নাগরিকের আবেদন

আজ মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন জামায়াতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।

জামায়াতের নিবন্ধন চেয়ে আপিল বিভাগে ৪৭ নাগরিকের আবেদন

প্রথম নিউজ, ঢাকা: জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত লিভ টু আপিল মামলায় বক্তব্য দিতে সাবেক এমপি, শিক্ষাবিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ দলটির পক্ষ থেকে ৪৭ ব্যক্তি আবেদন করেছেন। মঙ্গলবার (১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন জামায়াতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।

আপিল আবেদনে পক্ষভুক্ত হতে আবেদনকারী ৪৭ বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন- অধ্যাপক সাহানারা বেগম, বাংলাদেশ ইসলামি ইউনির্ভাসিটির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কোরবান আলী, মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এম উমার আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ, সাবেক সংসদ সদস্য মো. লতিফুর রহমান, অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, জিএম নজরুল ইসলাম, আবুল আজাদ মো. সাহাদুজ্জামান, ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, এএইচএম হামিদুর রহমান, হাফেজা আসমা খাতুন, মুক্তিযোদ্ধা মো. আবদুল ওয়ারেস, মো. তাজুল ইসলাম, মো. আবুল হাকিম ফকির, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. গিয়াস উদ্দিন মিঠু, গোলাম রহমান ভূইয়া, মো. আবদুল করিম, বেলায়েত হোসেনসহ ৪৭ বিশিষ্ট নাগরিক। 

আবেদনের বিষয়ে জামায়াতের আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ সুপ্রিম কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদনে দলটির নিবন্ধনের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরতে ৪৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক পক্ষভুক্ত হতে আবেদন করেছেন। মঙ্গলবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নাল আবেদীন এই আবেদন করেন।

তিনি বলেন, জামায়াতের নিবন্ধনের পক্ষে আপিল বিভাগে বক্তব্য তুলে ধরতে ৪৭ বিশিষ্ট নাগরিক আবেদন করেছেন। আবেদনে তারা বলেছেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর যেকোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে।

অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ আরও বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে জামায়াত ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এসবের প্রতিটি সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধি ছিল। সুতারং গণতন্ত্র ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা জামায়াতের অধিকার রয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মূলনীতি লঙ্ঘন হয়েছে। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে জামায়াত যেমন আবেদন করেছে, দেশের নাগরিক হিসেবে ৪৭ বিশিষ্ট ব্যক্তিও মনে করেন জামায়াতে ইসলামী যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। সেজন্য নিবন্ধন বহাল রাখার পক্ষে তারা পক্ষভুক্ত হয়েছেন।

এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা ও আদালত অবমানার অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে করা আবেদনের আইনি লড়াইয়ে যুক্ত হতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে করা ওই আবেদনের পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য আর্জি জানান দেশের ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

গত ২৭ জুলাই ওই আবেদনে সই করেন- অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শ্যামলী নাসরিন, শাহরিয়ার কবির, শাওন মাহমুদ, রফিকুন্নবী, মাহফুজা খানম, আবুল হাশেম, তানভীর মোকাম্মেলসহ ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তারা জামায়াতের নিবন্ধন সংক্রান্ত মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মিছিল-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে দলটির নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদনের পক্ষভুক্ত হতে চান।

গত ২৬ জুন উচ্চ আদালতের রায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে নিবন্ধন ফিরে পেতে দাবি করায় জামায়াতের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করা হয়। একই সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজন পৃথক দুটি রিট আবেদন করেন।

এক দশকেরও বেশি সময় পর পুলিশের মৌখিক অনুমতি নিয়ে গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সমাবেশ করে জামায়াত। সমাবেশে জামায়াত নেতারা দলের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়া ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান।

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই। মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলটির শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এমনকি সংগঠন হিসেবেও জামায়াতকে এ অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে। এছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনে জ্বালাও-পোড়াও ও নাশকতাসহ সার্বিক প্রেক্ষাপটে ২০১৩ সাল থেকে জামায়াতের স্বাভাবিক কার্যক্রম দেখা যাচ্ছিল না।

গত ১০ জুনের আগে পুলিশের অনুমতি নিয়ে দলটি রাজধানীতে সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল করে ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন মতিঝিলে কর্মসূচিটি পালন করে তারা।