প্রথম নিউজ, জামালপুর: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নে বিস্তীর্ণ এলাকায় যমুনা নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই নদী ভাঙনে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে যমুনা পাড়ের মানুষ। ফের যমুনা গর্ভে বিলীন হচ্ছে সাপধরী জনপদ।
উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত যমুনার ছোট্ট একটি শাখা নদী। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাশারী ডোবা পয়েন্টে গত কয়েক দিনের ভাঙনে দুর্গম যমুনা চরে ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় হতাশায় দিন কাটছে কৃষকদের।
জানা গেছে, উপজেলার বেলগাছা পয়েন্টে যমুনা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে সাপধরীর এই শাখা নদীটি শীলদহ, সিন্দুরতলী, প্রজাপতি, নন্দনের পাড়া, চরশিশুয়া, শিশুয়া, কাশারী ডোবা, ইন্দুল্লা মারী, আকন্দ পাড়া, মণ্ডল পাড়া, চেঙ্গানিয়া, টগার চর ও দৈলকের চর হয়ে সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ি এলাকায় গিয়ে আবার যমুনার মূল স্রোতে মিলিত হয়েছে।
এই শাখা নদীটির দুই তীরের প্রজাপতি, কাশারী ডোবা, আকন্দ পাড়া ও মণ্ডল পাড়া এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে গত ৫ বছর ধরে ভয়াবহ নদী ভাঙন চলছে। এ বছরই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে কাশারী ডোবা এলাকার পাঁচ শতাধিক বসতভিটা, দুটি বাজার, তিনটি স্কুল, পাঁচটি মসজিদ এবং কয়েক শ একর ফসলি জমি।
এলাকাবাসীরা জানান, সাপধরী ইউনিয়নের ঘনবসতিপূর্ণ ২০টি গ্রামই আশির দশকে সড়কপথে উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। সে সময় চরের কৃষিনির্ভর মানুষগুলো খুবই সুখী ও সমৃদ্ধশালী ছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সাপধরী ইউনিয়নের মানুষগুলোর সুখ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। আশির দশক থেকে অধ্যাবধি সময়ে এলাকাটি কয়েক দফা যমুনা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। সাপধরী ইউনিয়নের প্রজাপতি থেকে চরশিশুয়া হয়ে চেঙ্গানিয়া পর্যন্ত এলাকায় বর্ষা মৌসুমে যমুনার বাম তীরে ভয়াবহ নদী ভাঙন শুরু হয়। এরপর কয়েক বছরের অব্যাহত নদী ভাঙনে এলাকাটি সম্পূর্ণরূপে যমুনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সেই সময় থেকেই এলাকাটি উপজেলা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই সময় নদী ভাঙনকবলিত মানুষেরা ঘরবাড়ি ভেঙে আশপাশের গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। আবার কেউ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহর-বন্দরে চলে যান। অনেকেই যমুনার পেটে জেগে ওঠা সাপধরী ইউনিয়নের অন্য ছোট ছোট চরে বসতি গড়ে কষ্টে জীবনধারণে বাধ্য হন।
পরবর্তীতে ২০০১ সালে সাপধরী ইউনিয়নের সিংহভাগ ভূমি যমুনার পেট থেকে জেগে বসতি স্থাপনসহ চাষাবাদের উপযোগী হয়ে উঠে। আবার শুরু হয় বসতি স্থাপন ও কৃষি আবাদ। কিন্তু সুখের জীবন শুরু হলেও সুখটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান জানান, যমুনা নদী ভাঙন রোধে কাশারী ডোবা পয়েন্টে বাঁশের পাইলিং নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়াও নদনদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।