ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে ভয়ংকর অগ্নিপিঁপড়া : গবেষণা
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : বিশ্বের সবচেয়ে আক্রমণাত্মক কীট হিসেবে পরিচিত লাল পিঁপড়া। এটি অগ্নিপিঁপড়া বা আগুনে পিঁপড়া নামেও পরিচিত। লাল অগ্নিপিঁপড়ার শক্তিশালী কামড়ে, মানুষ এবং প্রাণী উভয়ই মারাত্মক আহত হতে পারে। সম্প্রতি এরা ইতালিতে বাসা বেঁধেছে। গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, জলবায়ু আরও বেশি উষ্ণ হলে এরা গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
শুধু মানুষ এবং প্রাণী নয়, কৃষকের ফসল ধ্বংস করা ছাড়াও এয়ারকন্ডিশনার, ট্রান্সফরমার এবং সার্কিটব্রেকারগুলোর মতো বৈদ্যুতিক সরঞ্জামও নিমেষেই অকেজো করে দিতে পারে এই ভয়ংকর লাল পিঁপড়া। গবেষকরা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে এই পিঁপড়ার দেখা এখনো না মিললেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
অগ্নিপিঁপড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ‘সোলেনোপসিস ইনভিক্টা’। এদের মূলত দক্ষিণ আমেরিকার জলাভূমিগুলোতে দেখা যায়। তবে বাতাসের প্রবাহ এবং পণ্যবাহী জাহাজে চড়ে এরা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বলে গবেষকরা জানান।
এক শতাব্দীরও কম সময়ে এই পিঁপড়া অস্ট্রেলিয়া, চীন, ক্যারিবিয়ান, মেক্সিকো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের ঘর তৈরি করতে পেরেছে বলে জানা যায়। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই এই প্রজাতির ভয়ঙ্কর আগ্রাসনের কারণে ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ছয় বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলে অনুমান করা হয়।
স্প্যানিশ ইনস্টিটিউট ডি বায়োলজিয়া ইভোলুটিভার গবেষক মাতিয়া মেনচেত্তির বলেন, লাল আগুনে পিঁপড়াটি এখন ইতালিতে নিজেদের আবাস গড়েছে, যা শুধুই সময়ের ব্যাপার ছিল।
তিনি বলেন, লাল আগুনে পিঁপড়ার বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এস ইনভিক্টা হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আক্রমণকারী প্রজাতির একটি। এটি উদ্বেগজনকভাবে খুব দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানান তিনি।
ইতালির সিসিলির সিরাকিউসের নিকটবর্তী এলাকার বাসিন্দারা ২০১৯ সাল থেকে মারাত্মক বেদনাদায়ক এবং ক্রমবর্ধমান ঘন ঘন পিঁপড়ার কামড়ের অভিযোগ করে আসছেন। যখন মেনচেত্তির গবেষক দলটি একটি সন্দেহভাজন লাল আগুনে পিঁপড়ার ছবি দেখতে পায়, তখন সেটির নমুনা সংগ্রহে এবং প্রজাতির পরিচয় নিশ্চিত করতে তারা ইতালির সেই দ্বীপে যায়। সেখানে তারা ৪ দশমিক ৭ হেক্টর এলাকাজুড়ে মোট ৮৮টি লাল আগুনে পিঁপড়ার উপনিবেশ খুঁজে পায় এবং তারপর তাদের গবেষণার ফলাফল বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘কারেন্ট বায়োলজিতে’ প্রকাশ করে।
সুইডেনের এসএলইউ আর্টডেটা ব্যাংকের কীটতত্ত্ববিদ এবং পরিবেশ বিশ্লেষক মোয়া পেটারসন এ প্রসঙ্গে বলেন, এটি একটি তথাকথিত ডোর-নকার বা দরজায় কড়া নাড়া প্রজাতির অন্তর্গত, যারা সহজেই পরিবাহিত ও সুনির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে।
তিনি বলেন, ব্রাজিলের যে অঞ্চল থেকে এটি এসেছে, সেখানে প্রজাতিটি খুব বড় কোনো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে না এজন্য যে সেখানে এই প্রজাতির বিরোধীপক্ষ বা প্রাকৃতিক শত্রু রয়েছে। সুতরাং সেখানে প্রাকৃতিকভাবেই এটির ব্যালান্স হয়। কিন্তু এদেরই যদি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেমে রাখা হয়, যেখানে সেগুলোর বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে এমন বিরোধীপক্ষ থাকে না, তাহলে সেগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।
এই গবেষণার পেছনের গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লাল আগুনে পিঁপড়াগুলো একটি মহাদেশজুড়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাদের উপযুক্ত বাসস্থানের বিশ্লেষণ এটাও ইঙ্গিত করে যে ইউরোপের প্রায় সাত শতাংশ এই পিঁপড়ার সম্ভাব্য আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে, বিশেষ করে ভূমধ্যসাগরের আশপাশের দেশগুলোতে।
সম্প্রতি গ্লোবাল এক্সপার্ট প্যানেল আইপিবিইএস প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ৪২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের খাদ্য বিনষ্ট হয় এই আগুনে পিঁপড়ার কারণে।
লাল আগুনে পিঁপড়া, ব্ল্যাক ফায়ার পিঁপড়া (সোলেনোপসিস রিচটেরি) এবং গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফায়ার পিঁপড়া (সোলেনোপসিস জেমিনাটা) ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আক্রমণাত্মক এলিয়েন প্রজাতির কালো তালিকায় স্থান পেয়েছে। অর্থাৎ এই তিন প্রজাতি আমদানি, বিক্রি, জমানো, পরিবহন, ব্যবহার, বিনিময় এবং প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদির বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ভূমধ্যসাগরের আশপাশের দেশগুলোতে প্রজাতিগুলোকে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার প্রবণতা লক্ষ করা গেছে এবং সেই দেশগুলো ব্যাপক ক্ষতির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।