আরপিও সংশোধনী প্রত্যাহারের আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের

আরপিও সংশোধনী প্রত্যাহারের আহ্বান গণতন্ত্র মঞ্চের

প্রথম নিউজ, ঢাকা:গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী প্রত্যাহার করে নেবার আহ্বান জানিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। 

শনিবার রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান  এ আহ্বান জানান বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।

'গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিল ও সরকারের নীলনকশা' উপলক্ষে একই সংবাদ সম্মেলনে আয়োজন করা হয়। 

লিখিত বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, আরপিও এর ধারা অনুযায়ী আগে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সাতদিন আগে যাবতীয় বকেয়া বিল পরিশোধের বাধ্যবাধকতা ছিল। এখন ক্ষুদ্রঋণ, টেলিফোন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির বকেয়া বিল একদিন আগে জমা দিলেও চলবে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনে ঋণখেলাগি ও বিলখেলাসিদের দৌরাত্ম আরও বেড়ে যাবে। 

'এসব কারণে এই সংশোধনী কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা অনতিবিলম্বে এই সংশোধনী প্রত্যাহার করে নেবার আহবান জানাই। তা না হলে এই সংশোধনী প্রত্যাহারসহ অবাধ, গণতান্ত্রিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিপন্থী যাবতীয় ধারা ও তৎপরতা বাতিলে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি আদায় করব। 

তিনি বলেন, গত ৪ জুলাই সংসদে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী বিলটি পাস করে ভোট বন্ধে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমিয়ে আনা হলো। এই সংশোধনীর মাধ্যমে যে কোন অনিয়মের কারণে ভোট বন্ধ রাখতে এই পর্যন্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা ছিল বাস্তবে তা কেড়ে নেয়া হল। আরপিওর ৯১(ক) অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে যে তারা আইনানুগভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সক্ষম হবে না তাহলে তারা নির্বাচনের যে কোন পর্যায়ে ভোট বন্ধ রাখতে পারে। অর্থাৎ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি অনুকূল না হলে নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের আগেই নির্বাচন বন্ধ করতে পারত। 

'এখন এই ক্ষমতা সীমিত করে কেবল ভোটের দিন সংসদীয় আসনের কতিপয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখতে পারবে, পুরো সংসদীয় আসনের নয়। সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, নির্বাচনের পরিবর্তে 'ভোট গ্রহণ' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।'

সাইফুল হক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের আসল ক্ষমতা ছিল আরপিও এর ৯১ (ক) ধারা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এর সংশোধনী বিল পাশ করে এখন নির্বাচন কমিশনকে প্রকারান্তরে ঠুটো জগন্নাথে পরিনত করা হলো। এই সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা আরও সংকুচিত করা হলো। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে বাড়তি সুবিধা দিতে এবং জাতীয় নির্বাচনে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করতেই এই সংশোধনী আনা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বর্তমান নিবাচন কমিশনের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা থেকে গুরুভরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ, গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাই যেখানে ভেঙে দেয়া হয়েছে- সেখানে নির্বাচন কমিশনের অবশিষ্ট ক্ষমতা কেড়ে নেবার এই তৎপরতা নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকারি দলের স্বেচ্ছাচারিতা, আধিপত্য ও কর্তৃত্ব আরও বাড়িয়ে ভুলবে। আর ক্ষমতাসীন সরকার যখন আরো একটি সাজানো একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে তখন ভোট বাতিলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কমানো যে পুরোপুরি দুরভিসন্ধিমূলক তাও স্পষ্ট বোঝা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ও সরকারি দলের নীলনকশা বাস্তবায়ন করতেই যে এই সংশোধনী আনা হয়েছে তাও অভ্যন্ত পরিস্কার। 

তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে উপযাচিতভাবে নিজেদের ক্ষমতা কমানোর সংশোধনী হাজির করে সরকারী দলের ভোট কারচুপির রাস্তা প্রশস্ত করে দিয়েছে তা বিস্ময়কর আপত্তিকর। কারচুপি, জ্বালিয়াতি ও সন্ত্রাসসহ নানা কারণে একটি নির্বাচনী এলাকার সমগ্র নির্বাচন বাতিলে নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা ছিল এখন তা না থাকায় নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীনদের নয়ছয় করার সুযোগ আরও বৃদ্ধি পেল। এর মধ্যে দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারি দলের কুমভলবও বেরিয়ে এসেছে। 

সাইফুল হক আরো বলেন, সরকারি দলের আর একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পাঁয়তারার কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নানা দিক থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ। আরপিও'র এই সংশোধনী এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দায়িত্ব দিয়েছে আইপিওর এই সংশোধনী তারও পরিপন্থী। এরমধ্যে দিয়ে নির্বাচন কমিশননের হাত পা বেঁধে ফেলা হোল। 

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।