আবারো পুনঃনিয়োগ পেতে শফিকুল শিষ্টাচার বর্জিত এবং রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন: রিজভী

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক ও বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা এবং সেক্টর কমান্ডারের সহধর্মিণী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে পুলিশ কমিশনার যে অশিষ্ট মন্তব্য করেছেন তাতে তার পিতামাতা যদি বেঁচে থাকেন তাহলে তারাও লজ্জিত ও বিব্রত হবেন।

আবারো পুনঃনিয়োগ পেতে শফিকুল শিষ্টাচার বর্জিত  এবং রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়েছেন: রিজভী
বক্তব্য রাখেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রধান শফিকুল ইসলাম আবারো চুক্তি ভিত্তিক পুনঃনিয়োগ লাভের আশায় শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট করার জন্য সুরুচি ও ভদ্রতার সকল সীমানা অতিক্রম করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিবেকবর্জিত বক্তব্য দিয়েছেন।  ভব্যতা-সভ্যতার সকল সীমা ছাড়িয়ে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ শিষ্টাচার বর্জিত অশালীন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দিয়েছেন তাতে গোটা দেশবাসী হতবাক। আমরা আশা করি, পুলিশের অতিদলবাজ এই দুই কর্মকর্তা তাদের গর্হিত অপরাধের জন্য জাতি কোনদিন ক্ষমা করবে না। ক্ষমতার মদমত্ততা এবং নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর কৃপা পেতে যে অমার্জনীয়-গর্হিত অপরাধ করেছেন তার মাসুল তাদেরকে জনগণের কাছে একদিন দিতেই হবে। 

আজ সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির বহুমাত্রিক কুৎসিত চক্রান্তের মধ্য দিয়ে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচ করে সারা বছর জুড়ে স্বাধীনতার নামে এক ব্যক্তিকে মহিমান্বিত করার যেসব অনুষ্ঠান হয়েছে, সেই সকল অনুষ্ঠানে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অপাংক্তেয় ও উপেক্ষিত। আদালতের রায় আর র‌্যাব-পুলিশের ভয়ে সন্ত্রস্ত মুক্তিযোদ্ধারা নীরবেই পার করে দিয়েছেন তাদের জীবনবাজি রেখে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তী। জাতির জীবনে বড় নির্মম পরিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উপেক্ষা করে আওয়ামী দলদাস প্রজাতন্ত্রের আইন প্রয়োগকারী বাহিনী এখন জাতিকে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শোনাচ্ছে। গত ২৬ মার্চ  রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে পুলিশ প্রধান বেনজির আহমদ এবং তারই অধস্তন ঢাকা মহানগর পুলিশ প্রধান শফিকুল ইসলাম ভব্যতা-সভ্যতার সকল সীমা ছাড়িয়ে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ শিষ্টাচার বর্জিত অশালীন এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক বক্তব্য দিয়েছেন তাতে গোটা দেশবাসী হতবাক। আমরা আশা করি, পুলিশের অতিদলবাজ এই দুই কর্মকর্তা তাদের গর্হিত অপরাধের জন্য জাতি কোনদিন ক্ষমা করবে না। ক্ষমতার মদমত্ততা এবং নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর কৃপা পেতে যে অমার্জনীয়-গর্হিত অপরাধ করেছেন তার মাসুল তাদেরকে জনগণের কাছে একদিন দিতেই হবে। পুলিশ আয়োজিত অনুষ্ঠানে, বিশেষ করে এক্সটেনশন সার্ভিসে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের সব চাইতে জনপ্রিয় সবচাইতে শ্রদ্ধাভাজন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা ¯্রফে চরম মাত্রাজ্ঞানহীন আচরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। যে নোংরা ভাষায় পুলিশ কমিশনার কথা বলেছেন তা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী তো দুরের কথা কোন ভদ্র পরিবারের সন্তানের পক্ষে উচ্চারণ করা সম্ভব নয়। স্বাধীনতার ঘোষক ও বরেণ্য মুক্তিযোদ্ধা এবং সেক্টর কমান্ডারের সহধর্মিণী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে পুলিশ কমিশনার যে অশিষ্ট মন্তব্য করেছেন তাতে তার পিতামাতা যদি বেঁচে থাকেন তাহলে তারাও লজ্জিত ও বিব্রত হবেন। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, বেগম খালেদা জিয়ার মতো মহিয়সী নারীকে নিয়ে যারা অসম্মানসূচক বক্তব্য রাখেন তারা আত্মা বিক্রি করা মানুষ।

তিনি বলেন, শফিকুল ইসলামের চাকুরী শেষ হয়ে গিয়েছিলো গত বছর। ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর নিয়ম অনুযায়ী শফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষে অবসরোত্তর ছুটি প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে গত প্রায় একদশকে হয়তো গুম, খুন অপহরণে পারদর্শী হয়ে ওঠায় বিনাভোটের সরকার তার সার্ভিস আরো প্রয়োজন মনে করে তাকে এক বছরের জন্য চাকুরীতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে। সেই অতিরিক্ত মেয়াদের একবছর মেয়াদকালও শেষ হয়ে আসছে। ফলে আবারো চুক্তি ভিত্তিক পুনঃনিয়োগ লাভের আশায় শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট করার জন্য সুরুচি ও ভদ্রতার সকল সীমানা অতিক্রম করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিবেকবর্জিত বক্তব্য দিয়েছেন। রাজারবাগের একই অনুষ্ঠানে পুলিশের আইজি বেনজির আহমেদও বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে তীব্র্র রোষ নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাষায় দেশের আপামর গণতন্ত্রকামী মানুষকে ধমক দিয়েছেন। তাচ্ছিল্যভরে নানা কটু মন্তব্য করেছেন। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানি উর্দী পরা কর্মকর্তারাও এভাবে গণতন্ত্রকামী মানুষকে বাংলা-উর্দু মিলিয়ে ধমক দিতেন। শেখ হাসিনার নির্দেশে গত তেরো বছরে বাংলাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, আলেম-উলামা এবং ভিন্নমতের জনগণের ওপর দফায় দফায় যে গণহত্যা এবং খুন, গুম, জুলুম, নিপীড়ণ চালানো হয়েছে তাতে বেনজীর আহমেদের ভূমিকা কি ছিল তা জনগণ ভাল করেই জানে। তিনি প্রকাশ্যে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত মানুষকে গুলি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। জনগণের প্রতি তার হুমকি এবং নির্দেশ দেওয়ার ভাষা এবং ভাবভঙ্গী দেখে মনে হতে পারে লোকটি হয়তোবা শেখ হাসিনার সাথে বাংলাদেশের মালিকানা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। বেনজির আহমেদের বন্দুক-পিস্তলের মাথায় যেহেতু গণতন্ত্রকামী বহু মানুষের জীবন-মৃত্যু নির্ভর করছে, সুতরাং তার সম্পর্কে আপাতত আর বেশি কিছু না বলাই নিরাপদ। তার উপর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর জনগণ ভেবেছিলো কিছুটা হলেও দেশে গুম-খুনের ভয়ের পরিবেশ কেটে যাবে। কিন্তু গত পরশু তার বক্তব্যে বোঝা গেলো তিনি বাংলাদেশে বিদ্যমান কর্তৃত্ববাদী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতেও দ্বিধা করবেন না।
রিজভী বলেন, এক্সটেনশন সার্ভিসে থাকা ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে অশ্রাব্য ভাষায় মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের দোষ হলো সত্য কথাটাও ঠিকমত বলতে পারে না’। এর অর্থ হচ্ছে, প্রতিদিন ওবায়দুল কাদের-হাছান মাহমুদ সাহেবরা বিএনপি সম্পর্কে মিথ্যাচার-অপপ্রচার চালানোর পরও হয়তো পুলিশ কর্মকর্তা শফিকুল সাহেবের মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগ পারছেনা তাই আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখতে হলে পিস্তল-বন্দুক সার্ভিসের পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে পুলিশের ‘লিপ  সার্ভিস’ও দেয়া উচিত। তবে ইতিহাস সাক্ষী, যারা মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য চূড়ান্ত বিপদের কারণে হয়েছিল, তাদের নাকি মরহুম শেখ মুজিবের ড্রইং পর্যন্তও এক্সেস ছিল। সুতরাং এখনো প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তারা বক্তব্য-মন্তব্যে নিজেদেরকে আওয়ামী লীগারদের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার প্রমাণ করতে চান তারাই আওয়ামী লীগের বিপদের কারণ হয়ে উঠবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য এবং দেশবাসীর প্রতি পুলিশ প্রধানের বক্তব্যে আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, একটি দেশে রাজনীতি, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, রাজনৈতিক শিষ্টাচার হারিয়ে গেলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এমন বেপরোয়া হয়ে উঠে। দেশে এখন সেই অবস্থাই চলছে। দেশে কোনো সভ্য এবং গণতান্ত্রিক সরকার থাকলে চাকুরী বিধি লঙ্ঘনের দায়ে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তার এতক্ষণে জেলে  না হলেও চাকুরী থেকে পত্রপাঠ বিদায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি, কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদরা এখন সাইডলাইনে আর নিশিরাতের সরকারটি চলছে র‌্যাব-পুলিশের বন্দুকের উপর ভর করে। আর একটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই-লক্ষীপুর জেলাধীন রামগতি উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে নেতাকর্মীরা মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে স্থানীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ যৌথভাবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় এবং অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করে। পুলিশ রামগতি উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ জামাল উদ্দিন, পৌর যুবদল নেতা দিদার খন্দকার কমিশনারকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া বিএনপি নেতা আব্দুল কাদের মাষ্টার, বেলাল হোসেন এবং ছাত্রদল নেতা আজিজকেও গ্রেফতার করেছে। এখনও পুলিশী গ্রেফতার অভিযান চলছে। স্বাধীনতা দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মহিমান্বিত দিনে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতার অভিযান বন্ধসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।  

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom