আবারও দৃশ্যপটে আওয়ামী সিন্ডিকেট,মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি

প্রথম নিউজ, অনলাইন: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের সময়ে গুটিকয় রিত্রুটিং এজেন্সির বেপরোয়া দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে গত বছরের ৩১ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় ওই মাফিয়া সিন্ডিকেটের কারণে ১৭ হাজার ৭৭৭ জন কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। এই কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পাঠানো ও পুনরায় বাজারটি চালুর চেষ্টা করছে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটি যখন খুলে দেওয়ার সময় হয়েছে, তখনই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের ‘ক্রিম’ খাওয়া রক্তচোষা এই সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠছে।
মালয়েশিয়ার সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারকে কলংকিত করে দুর্নীতিবাজ, লুটেরা এই সিন্ডিকেট অন্যায্য ও অন্যায়ভাবে চার লাখ ৯৪ হাজার ১৮০ গরিব কর্মীর কাছ থেকে এই চক্রটি অন্তত ২৫ হাজার কোটি টাকা লুটে নেয়। যার অন্তত সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকাই তারা ‘চাঁদার’ আড়ালে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর নামে নিজেদের পকেটে পুরেছে। শ্রমবাজারের ‘বিষফোঁড়া’ রিক্রুটিং মাফিয়া এই চক্রটি এখন সুযোগ বুঝে আবারও দৃশ্যপটে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের এই সিন্ডিকেট আবারও গ্রামের অসহায়, অভাবি মানুষকে ‘রিঙ্গিতের’ লোভ দেখানো শুরু করেছে।
ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের চোখে ‘ধুলো’ দিয়ে আবারও মানুষের সহায়সম্বল বিক্রি করে নিঃস্ব করার মিশন নিয়ে সামনে এসেছে এই অতিমুনাফালোভী চক্রটি। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্ষমতাচচ্যুত আওয়ামী সরকারের সময়ে গুটিকয় রিত্রুটিং এজেন্সির বেপরোয়া দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে গত বছরের ৩১ মে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর উদ্যোগে দেশটির সরকারের সঙ্গে সমাঝোতা স্মারক সই করে তৎকালীন সরকার।
সে সময় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের (আরএল-৫৪৯) স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন এবং মালয়েশিয়ার আইটি কম্পানি বেসটিনেটের মালিক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক দাতোশ্রি আমিন নুরের নেতৃত্বে অনলাইন পদ্ধতি এফডব্লিউসিএমএসের মাধ্যমে ২৫ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়।
এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা হলেন— অরবিটালস ইন্টারন্যাশনালের (আরএল ১১৩ ও ১৪৫৭) চেয়ারম্যান ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সিন্ধা ওভারসিজ স্বত্বাধিকারী (আরএল ১১৪৬) নিজাম উদ্দিন হাজারী, আহমেদ ইন্টান্যাশনালের (আরএল ১৫৫১) স্বত্বাধিকারী ও সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ, বায়রার সাবেক সভাপতি ও সরকার রিক্রুটিং এজেন্সির (আরএল ২২৬) মোহাম্মদ আবুল বাশার, ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনালের (আর এল ১৩২৭) স্বত্বাধিকারী অবসরপ্রাপ্ত লে. জে. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী (আরএল ২০৭) কাজী মো. মফিজুর রহমান, অনন্য অপূর্ব রিক্রুটিং এজেন্সি এজেন্সির স্বত্বাধিকারী (আরএল ২১০১) মহিউদ্দিন আহমেদ (মহি), আল-রাবেতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী (আরএল ৩৫৪) আবুল বাশার, আদিব এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরসের (আরএল-১০২৪) স্বত্বাধিকারী কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল, আকাশ ভ্রমণের স্বত্বাধিকারী (আরএল ৩৮৪) মনসুর আহমেদ খান, জাহরাত অ্যাসোসিয়েটসের স্বত্বাধিকারী (আরএল ২৮৫) শফিকুল ইসলাম ফিরোজ, আল বোখারি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী (আরএল ৩০১) সাইফুল ইসলাম ভূইয়া, আমিয়াল ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী (আরএল ১৩২৬) শাহ জামাল মোস্তফা, বিনিময় ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী (আরএল ৩৫১) এম এ সোবহান ভূঁইয়া, বিএম ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী (আরএল ১৪২১) শফিকুল ইসলাম, বাদ্রার্স ইন্টারন্যাশনের স্বত্বাধিকারী (আরএল ১৫৭১) রফিকুল ইসলাম, গ্রীনল্যান্ড ওভারসিসের স্বত্বাধিকারী (আরএল ৪০) রেহেনা আরজুমান হাই, ইমিপ্রয়াল রিসোর্সের স্বত্বাধিকারী (আরএল ১৮৭৪) মাহবুবুর রহমান, ইরবিং এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী (আরএল ২১৫) হাফিজুল বারী মোহাম্মদ লুৎফর রহমান, অইছি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী (আরএল ১১৪১) মোস্তাফিজুর রহমান, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী (আরএল ১২৯৮) মাজহারুল ইসলাম, সরকার ইন্টারন্যাশনালের (আরএল ১৭১৫) মোহাম্মদ আলী সরকার, শাহেনা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের রফিকুল ইসলাম, সাউথ পয়েন্ট ওভারসিসের মোহাম্মদ মিজানুর কাদের, ইউনাইটেড ম্যান পাওয়ার কনসালটেন্সির জেড ইউ সাইদ, জাহরাত অ্যাসোসিয়েটের শফিকুল আলম এবং আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টের মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম।
মূলত এরাই পুরো মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটিকে কুক্ষিগত করে রাখেন।
এসব বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘শ্রমবাজার চালু করার পেছনে আবারও সেই পুরনো চক্র ক্রিয়াশীল। আবারও যারা সিন্ডিকেট করেছিলেন তারাই অন্য আবরণে সিন্ডিকেট করতে চাচ্ছেন এবং এটা আমাদের সরকারের ওপর প্রেসার ক্রিয়েট করছে।
সরকার কর্মী পাঠানোর জন্য দোনোমনো করছে এই সিন্ডিকেটেই কর্মী পাঠাবে কি না। সেই জায়গায়টাতেই সুধীসমাজের পক্ষ থেকে আমরা দৃঢ় কণ্ঠে বলেছি, কোনো অবস্থায় কর্মী পাঠানো উচিত হবে না।’