আব্দুল হাদীর জন্মদিনে তরুণ শিল্পীদের শ্রদ্ধা

আব্দুল হাদীর জন্মদিনে তরুণ শিল্পীদের শ্রদ্ধা

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  আজ কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর ৮৫তম জন্মদিন। দিনটিতে তাঁকে সম্মান জানিয়েছেন এ সময়ের তিন কণ্ঠশিল্পী, যাঁরা বিভিন্ন সময়ে কণ্ঠে তোলেন এই কিংবদন্তির গান—মিজান মাহমুদ রাজীব, মুহিন খান ও অপু আমান। অনুলিখন করেছেন সুদীপ কুমার দীপ।

এখনো তিনি ফিট || মিজান মাহমুদ রাজীব

হাদী চাচা আমাদের আদর্শ।
প্রতিনিয়ত তাঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হই। আমি সাধারণত স্টেজে এন্ড্রু কিশোর দাদার গান বেশি গাই। তবে ২০০৫ সালে প্রথম যখন ‘ক্লোজআপ ওয়ান—তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’-এ অংশ নিই, হাদী চাচার গান গেয়েছিলাম। ‘চোখের নজর এমনি কইরা’ গানটি গেয়ে ‘ইয়েস’ কার্ডও পেয়েছিলাম।
স্মৃতিটা এখনো চোখের সামনে ভাসে। খেয়াল করেছেন বোধহয়, আমাদের দেশের শিল্পীরা খুব বেশি দিন বাঁচেন না। শেষ বয়সে নানা রোগে ভোগেন। হাদী চাচাকে দেখেন, ৮৫ বছর বয়স।
এখনো তিনি কত ফিট। সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি, তিনি দীর্ঘজীবী হোন। শিল্পীরা বেশি দিন বাঁচেন না এই কথা ভুল প্রমাণ করুন। হাদী চাচার গানগুলো নিয়ে আমি সব সময় ভাবি। তিনি যা গেয়েছেন প্রতিটিই সুন্দর কথার, মিষ্টি সুরের গান।
এমন ভরাট কণ্ঠ, এমন দরাজ ডেলিভারি এই সময়ে কেউ দিতে পারেন বলেও মনে হয় না। দৃষ্টান্ত তৈরি করা এই মহান শিল্পীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

বাংলাদেশের গানে তিনি বাদশা || মুহিন খান

হাদী চাচার গান শুনে বড় হয়েছি। অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল আমার সুরে চাচা গাইবেন। সেই স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। আমার সুরে দুটি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। জামাল হোসেনের লেখা ‘মনের জানালা’ ও ‘এখনো পারিনি’ গান দুটিতে কণ্ঠ দেওয়ার সময় আমাকে অনেক দোয়া করেছিলেন। প্রশংসাও করেছিলেন। এত বড় একজন শিল্পী আমার সুরে না গাইলেও পারতেন। অথচ তিনি সেটা করেননি। হাদী চাচাকে সব সময় দেখেছি তরুণদের পাশে দাঁড়াতে। জুলাই আন্দোলনেও ছাত্র-জনতার পাশে ছিলেন। নতুন দিনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তরুণরা তাঁকে পাশে পেয়ে আরো অনুপ্রাণিত হয়েছিল। এই বয়সেও তিনি গেয়ে চলেছেন। আমি প্রায়ই বলি, বাংলাদেশের গানে হাদী চাচা বাদশা। লিভিং লিজেন্ড এই মানুষটার মধ্যে কখনো অহংকার দেখেনি। দেখেনি অন্যকে ছোট করার কোনো প্রবণতাও। আজকের মতো এমন শুভদিন চাচার জীবনে আরো বহুবার আসুক, এই দোয়া রইল।

একেবারে হাতে ধরে ধরে শেখান তিনি || অপু আমান

হাদী স্যারের সান্নিধ্য পেয়েছি বহুবার। বিটিভি, এনটিভি ও বাংলাভিশনে তিনটি গানের প্রোগ্রাম করতেন তিনি। প্রতিটি প্রোগ্রামেই আমাকে ডেকেছেন। তাঁর সামনে বসে গাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। হাদী স্যার কিন্তু অনেকের শিক্ষক। তিনি সেটা কাউকে বলেন না। একেবারে হাতে ধরে ধরে শেখান। একবার বিটিভির একটা অনুষ্ঠানে তাঁর প্রথম দিকের গান ‘চাতুরী জানে না মোর বঁধুয়া’ গেয়েছিলাম। গানটি শুনে উনি আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন। আমার কাছে জিজ্ঞেস করেছিলেন, এই গান কোথায় পেলাম আর এত সুন্দর করে তুললামই বা কী করে! অনেক দিন আমরা হাদী স্যারের কণ্ঠে দেশের গান পাইনি। বিশিষ্ট কবি, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ স্যারের লেখা একটি গানের সুর করেছি। ‘এই মাটিতে জন্ম নিলাম এই মাটিতেই মরণ যেন হয়’ শিরোনামের গানটি হাদী স্যারকে দিয়ে গাওয়াতে চাই। শিল্পীরা বার্ধক্যের কারণে একটা সময় আর গাইতে পারেন না। হাদী স্যার এখনো গেয়ে চলেছেন। তিনি শতায়ু হোন, এই প্রার্থনা রইল।