আটজনে একজন মানসিক রোগী, চিকিৎসা পায় না ৯১ শতাংশ

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরিপের ভিত্তিতে এমন তথ্য দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন ও সমাজসেবাসমূলক প্রতিষ্ঠান লাইট হাউজ।

আটজনে একজন মানসিক রোগী, চিকিৎসা পায় না ৯১ শতাংশ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশে প্রতি আটজনে একজন মানসিকরোগী। প্রাপ্তবয়স্কদের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং শিশুদের ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। চিকিৎসাসেবায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় মানসিক সমস্যায় ভোগাদের ৯১ শতাংশই চিকিৎসা পায় না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) জরিপের ভিত্তিতে এমন তথ্য দিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন ও সমাজসেবাসমূলক প্রতিষ্ঠান লাইট হাউজ।

সোমবার (৯ অক্টোবর) লাইট হাউজ আয়োজিত মিডিয়া অ্যাডভোকেসি সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ২০২৩ উদযাপনের অংশ হিসেবে এ মিডিয়া অ্যাডভোকেসির আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এ অ্যান্ড আরএইচ) ডা. মো. মনজুর হোসাইন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের সদস্য সচিব ফারুক আহমেদ তালুকদার।

এতে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন আর রশিদ। তিনি জনান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি জরিপ করে। ওই জরিপ অনুযায়ী ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্বের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত এবং ১৮ থেকে ২৯ বছরে বয়সীদের মধ্যে এ হার ১১ শতাংশ। ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে এ হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী ২০ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

তিনি জানান, ডব্লিউএইচও বাংলাদেশে ২০১৯ সালে মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ৫ বছর মেয়াদি স্পেশাল ইনিশিয়েটিভ ব্যবস্থা চালু করে। যার লক্ষ্য হচ্ছে স্নায়ুবিক ও মানসিক রোগে আক্রান্তদের জন্য মানসম্মত পরিষেবা চালু করা। কর্মসূচির লক্ষ্য হলো ২০২৩ সাল নাগাদ ১০ কোটি মানুষের জন্য সেবার পরিধি বাড়ানো। এ কর্মসূচি গ্রহণকারী ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

তিনি আরও জানান, ২০২০ সালে করা প্রাক-মূল্যায়ন তথ্যানুসারে বাংলাদেশের ১৮ দশমিক ৭০ শতংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১২ দশমিক শিশু মানসিক রোগে আক্রান্ত। কোভিড-১৯ মহামারির পর এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। তবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা বাজেটের মাত্র দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিষেবাগুলোতে বরাদ্দ রয়েছে। দেশের ৯১ শতাংশ মানসিক রোগী চিকিৎসা পায় না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. মো. মনজুর হোসাইন বলেন, আগে আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বেশি গুরুত্ব দেওয়া হতো না। এখন এর গুরুত্ব বাড়ছে। দিন দিন মানসিক সমস্যার সংখ্যক বাড়ছে। তবে, আমাদের দেশে মনোবিজ্ঞানীর সংখ্যা বেশ কম। মাত্র ২৭০ জন মনোবিজ্ঞানী আছেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে কতজন মানসিক রোগী আছেন, তার সঠিক তথ্য নেই। ২০১৯ সালের পর দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি। তবে ডব্লিউএইচও, তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের আটজনের একজন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বাংলাদেশেও হারটি এমনই হবে। খুব বেশি হেরফের হবে না।

প্রতি বছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৪ সালে প্রথম বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। সে সময় দিবসটির যে থিম ছিল তার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘সারা বিশ্বের মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার মান উন্নত করা’। আর এবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মানসিক স্বাস্থ্য একটি সার্বজনীন মানবাধিকার’।