সিলেটে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দঃ  "দেশ গণতন্ত্র বিপন্ন, মানবতা লাঞ্চিত" 

সিলেটে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন,দেশে গণতন্ত্র নাই, আইনের শাসন নাই, ভোটের অধিকার নাই, মানুষের কথা বলার অধিকার নাই, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও নাই,মানুষের জান,মাল,ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট,গুম,খুনের কথা যাতে মানুষ জানতে না পারে সেজন্য  গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। মানবাধিকার আজ ভুলুন্ঠিত। শুধু ঢাকায় প্রতিদিন ১৬ জন নাগরিক নিখোঁজ হচ্ছে। এদের কারো লাশ পাওয়া যায়, আবার কারো পাওয়া যায় না।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নাগরিকরা জীবন হারাচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশকে মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য করে ফেলেছে শাসকগোষ্ঠী। গণতন্ত্র আজ বিপন্ন।মানবতা আজ লাঞ্ছিত।এ অবস্থায় বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাড়াবে-এ মুহূর্তে এটাই আমাদের সকলের ভাবনা। আলোচনা সভায় বক্তারা প্রথম আলোর কারাঅন্তরীণ সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তি দাবি  করে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য এক মুর্তিমান আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

সিলেটে পেশাজীবী নেতৃবৃন্দঃ  "দেশ গণতন্ত্র বিপন্ন, মানবতা লাঞ্চিত" 
সিলেটে বক্তব্য রাখছেন ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন-সংগৃহীত

প্রথম নিউজ, সিলেট:সিলেটে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন,দেশে গণতন্ত্র নাই, আইনের শাসন নাই, ভোটের অধিকার নাই, মানুষের কথা বলার অধিকার নাই, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও নাই,মানুষের জান,মাল,ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই, স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট,গুম,খুনের কথা যাতে মানুষ জানতে না পারে সেজন্য  গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে। মানবাধিকার আজ ভুলুন্ঠিত। শুধু ঢাকায় প্রতিদিন ১৬ জন নাগরিক নিখোঁজ হচ্ছে। এদের কারো লাশ পাওয়া যায়, আবার কারো পাওয়া যায় না।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নাগরিকরা জীবন হারাচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশকে মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য করে ফেলেছে শাসকগোষ্ঠী। গণতন্ত্র আজ বিপন্ন।মানবতা আজ লাঞ্ছিত।এ অবস্থায় বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাড়াবে-এ মুহূর্তে এটাই আমাদের সকলের ভাবনা। আলোচনা সভায় বক্তারা প্রথম আলোর কারাঅন্তরীণ সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তি দাবি  করে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য এক মুর্তিমান আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে।  

আজ ১ এপ্রিল, শনিবার বিকেলে স্থানীয়  হোটেল "গ্র‍্যান্ড মোস্তফার" সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, সিলেট এর আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে পেশাজীবী নেতারা একথা বলেন। 

সিলেট বিএসপিপির সভাপতি প্রফেসর ডা. শামীমুর রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রফেসর ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইউম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, এডভোকেট এটিএম ফয়েজ , প্রফেসর ড. সাজেদুল করিম,কৃষিবিদ প্রফেসর ড.মো. মোজাম্মেল হক, কৃষিবিদ প্রফেসর ড. আতোয়ার রহমান,প্রফেসর শাহ মুহাম্মদ আতিকুল হক সাংবাদিক খালেদ আহমদ, প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ ইকবাল, এডভোকেট আশিক উদ্দিন, এডভোকেট বদরুল আহমদ চৌধুরী, এডভোকেট আতিকুর রহমান সাবু, ডাক্তার শিব্বির আহমদ শিবলী, ডা. মাসুকুর রহমান চৌধুরী, প্রফেসর ডা. আকতার উদ্দিন, শিক্ষক নেতা লে. মনিরুল ইসলাম, ফরিদ আহমেদ প্রমূখ।
 
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন,এ দেশকে স্বাধীন করার জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তিতে জাতির প্রত্যাশা ছিল আমরা আমাদের সব অর্জন দেশে বিদেশে প্রতিফলিত করবো, দেশে বিদেশে সমাদৃত হবো। কিন্তু আজকে দুঃখের বিষয় আমরা যখন স্বাধীনতার ৫২বছর পালন করছি, তখন বাংলাদেশ একটি অগণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত হলো। মানবাধিকার লংঘনের জন্য বাংলাদেশের একটি সংস্থা আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত হলো, ওই সংস্থার কিছু  কর্মকর্তা যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পদে আছেন, তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো, এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার।
ডা. জাহিদ বলেন, আপনারা জানেন দেশ একটা গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে। বিশ্ব জরিপের মূল্যায়ন হচ্ছে বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং সেখানে এখন গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদন্ড পর্যন্ত মানা হচ্ছে না। সম্প্রতি আমেরিকায় যে গণতান্ত্রিক সম্মেলন হয় ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পর্যন্ত পায় নি। কেননা তারা বাংলাদেশকে মনে করে এটা গণতান্ত্রিক দেশ নয়।
তিনি বলেন, আমরা বার বার বলেছি দেড় দশক ধরে এ দেশের গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে একটি দল গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকায় আজকে সারাবিশ্বে ভাবমূর্তি ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। তাই আজকের এ দিনে আমাদের প্রত্যয় এই যে- আমাদের যে গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে, সেটি পুনরুদ্ধার করা। আমাদের দেশনেত্রী মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়াকে  মুক্ত করা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিবেশ সৃষ্টি করা। জনগণ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের সরকার গঠন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাবো।
 পেশাজীবীদের এ নেতা বলেন,বাংলাদেশসহ বিশ্বের সবাই জানে যে বর্তমান সরকার একনায়কতন্ত্রের সরকার। এক ব্যক্তির ইশরায় বাংলাদেশের সরকার চলে। কি প্রশাসন,কি নির্বাচন কমিশন, কি বিচার বিভাগ, কি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সব কিছু চলছে দলীয় বিবেচনায়।সরকারের হুকুম পুরাপুরি তামিল না করার কারণে সুপ্রীম কোর্টের একজন প্রধান বিচারপতিকে কিভাবে গলাধাক্কা দিয়ে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তা আমরা দেখেছি। গত নির্বাচনে আমরা দেখেছি প্রশাসন এবং বিভিন্ন সংস্থাকে কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।           

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সরকার দেশে নিকৃষ্টতম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। কথায় কথায় মানুষ হত্যা, গুম এখন নিত্যকার ঘটনা। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। সাংবাদিক নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। 
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে সরকারের মধ্যে অস্থিরতা ততই বাড়ছে। বিরোধীদের মোকাবিলায় রাজনৈতিক কৌশলের দিক থেকে তারা এক ধরনের আত্মঘাতী পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করছে। তাই ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
পেশাজীবীদের এ নেতা বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম চরম দুর্দিন অতিক্রম করছে। সরকার, সরকারি দল, আমলাতন্ত্র এবং প্রভাবশালী মহল গণমাধ্যমের কন্ঠরোধে যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। সাংবাদিক নির্যাতন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা ,হামলা, গ্রেফতার ,সাংবাদিক হত্যা, ঠুনকো অজুহাতে গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া এখন নিত্য দিনের ঘটনা। বর্তমান সরকারের সময় অন্তত: ৫৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেত কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন,সাংবাদিক নির্যাতনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ভিন্নমত ও সরকারের সমালোচনা দমনে এই আইনের নজিরবিহীন অপপ্রয়োগ চলছে। এই আইনে অভিযুক্তরা যখন আদালতে যাচ্ছেন,তখন তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। এই আইনের ১৪টি ধারাই যেহেতু জামিন অযোগ্য,তাই এটা একটা সাংঘাতিক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে।