কুষ্টিয়ায় মৃত জসিম উদ্দিনকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে সুদসহ লাখ টাকা ফেরত চায় কৃষি ব্যাংক! 

কুষ্টিয়ায় মৃত জসিম উদ্দিনকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে সুদসহ লাখ টাকা ফেরত চায় কৃষি ব্যাংক! 
প্রথম নিউ্রজ, কুষ্টিয়া: বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা কুষ্টিয়ার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে মৃত ব্যক্তির নামে ২০১৪ সালে ঋণ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার অনুসন্ধানে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। সেই সাথে মৃত ব্যক্তির নামে ঋণ প্রদান কান্ডে কৃষি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার তৎকালীন পরিদর্শক আবু তালেব ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী নায়েব আলী (ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী) এবং সরোয়ার নামের দুই ব্যাক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। 
ঘটনার বরাত দিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের মহিসাডাঙ্গা গ্রামের মৃত বদর উদ্দিন মন্ডলের ছেলে জসিম উদ্দিন মন্ডল। ২০০৭ সালের অক্টোবরের ১০ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন জসিম উদ্দিন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ প্রদত্ত জসিম উদ্দিনের মৃত্যুসনদে মৃত্যুর তারিখ ২০০৭ সালের ১০ অক্টোবর উল্লেখ রয়েছে। এই জসিম উদ্দিনের নাম ও পিতার নাম মৃত বদর উদ্দিন মন্ডল ব্যবহার করে ঠিকানা ঠিক রেখে মাতার নামের স্থানে প্রতিবেশী নায়েবের মাতার নাম, জন্ম তারিখ ও পরিচয়পত্র নম্বরের স্থানে নায়েবের জন্ম তারিখ ও পরিচয়পত্র নম্বর, ছবির স্থানে নায়েবের ভাগ্নে হালিমের ছবি ব্যবহার করে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির মাধ্যমে ২০১৪ সালের ৫ই মে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। 
প্রয়োজনীয় নথিপত্র যাচাই করে জানা যায়, জসিম উদ্দিন মন্ডল মারা যাওয়ার সময় দেশে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রচলন শুরু হয়নি। ২০১৪ সালে জসিম উদ্দিনের নামে জাল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়েছে। এই জাল পরিচয়পত্রে জসিম উদ্দিন মন্ডল ও তার বাবার নাম ঠিক রাখা হয়েছে। পরিচয়পত্রে জসিম উদ্দিনের মায়ের নামের স্থানে সুলভী নেছা, জন্মতারিখ ১৫ই আগষ্ট ১৯৭৫ ইং সাল, ঠিকানা মহিসাডাঙ্গা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দেওয়া হয়েছে ৫০১৭৯৯৪৪০৬৬৭৩। যেগুলো প্রতিবেশী নায়েব আলীর মাতার নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা ও পরিচয়পত্র নম্বরের হুবহু নকল। তাছাড়া ঐ পরিচয়পত্রে জসিম উদ্দিন মন্ডলের যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেই ছবিটি নায়েবের ভাগ্নে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ এলাকার হালিমের বলে নিশ্চিত হয়েছে প্রতিবেদক দল। 
আরো জানা যায়, মৃত জসিম উদ্দিনের নামে ঋণ প্রদানের আগে ব্যাকডেটে ২০১০ সালের ১১ই অক্টোবর কৃষি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখায় একটি একাউন্ট খোলা হয়। যেই একাউন্টের নম্বর- ১১০১.২৬০১১। এই একাউন্টটিতে ২০১৪ সালের ১১ই মে ঋণের ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। টাকাটি একাউন্ট থেকেও উত্তোলন করে নেন নকল জসিম উদ্দিন। ঋণের বিপরীতে ২০২২ সালের জুন ৩০ তারিখ পর্যন্ত সুদ সহ ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ১লক্ষ ২ হাজার ৩শ ২০ টাকা। নকল জসিম উদ্দিন ঋণের টাকা গ্রহণ করলে কিস্তি ও সুদ কোনটিই পরিশোধ করেননি। এই ঋণ গ্রহীতার সনাক্তকারী ছিলেন উজানগ্রাম এলাকার সরোয়ার ওরফে সরো।ব্যাংকের এই টাকা হরিলুট হয়ে গেলেও ঘটনাগুলো অন্ধকারেই থেকে যেত কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণের টাকা আদায়ে গেলে শুরু হয় বিপত্তি। মৃত জসিম উদ্দিনের নামে দেওয়া ঋণের টাকা আদায় করতে ডাকা হয় তার ছেলেকে। বেরিয়ে আসতে শুরু করে থলের বিড়াল। 
মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে এমেচ আলী প্রতিবেদককে জানান, গত কিছুদিন আগে কৃষি ব্যাংক থেকে তাকে ডাকা হয়েছিল। ব্যাংকে যাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন তার মৃত ব্যক্তির নামে কে বা কারা ব্যাংক থেকে ঋণ করে টাকা নিয়েছে। ঋণের টাকা সুদ সহ ফেরত দেওয়ার জন্য ব্যাংক থেকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। অন্যায়ভাবে যারা প্রতারণা করে ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা যারাই হোক তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি। 
এদিকে উজানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু সনদের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, ইউনিয়নের অন্তর্গত মহিষাডাঙ্গা গ্রামের জসিম উদ্দিন ১০ অক্টোবর ২০০৭ ইং সালে মৃত্যুবরণ করেন। ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু রেজিষ্টার এর ২ নং বহির ৬৬ নং পাতার ০৩ নং ক্রমিকে মৃত ব্যক্তির নাম লিপিবন্ধ করা আছে। 
অনুসন্ধানে জানা যায়, কৃষি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা‌ কুষ্টিয়ার তৎকালীন পরিদর্শক আবু তালেব এর সরাসরি যোগসাজশে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী নায়েব আলী, সরোয়ার ওরফে সরো ও তার সহযোগীরা এরকম ১শ এর অধিক ঋণ অনুমোদন করেছেন। জাল সনদ ব্যবহার করে অনুমোদন করা এই সব ঋণগুলোর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা। 
তবে এই ব্যাপারে অভিযুক্ত নায়েব আলীর মুঠোফোন নম্বরে বার বার ফোন দেওয়া হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। 
আরেক অভিযুক্ত ঋণ গ্রহীতা মৃত জসিম উদ্দিন মন্ডলের সনাক্তকারী সরোয়ার ওরফে সরোর মুঠোফোনে ফোন দিয়ে সালাম উওর দেওয়ার পর ফোন কেটে দেন তিনি। পরবর্তীতে একাধিক বার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি সরোয়ার। 
কৃষি ব্যাংক কুষ্টিয়া সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক এলাহী বিশ্বাস জানান, ততকালীন পরিদর্শক আবু তালেবের বিরুদ্ধে এরকম বেশ কিছু অভিযোগে তার পেনশন বন্ধ করে রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে প্রায় ১কোটি টাকা ব্যাংককে পরিশোধ করার পর গত কয়েকমাস পূর্বে তার পেনশন চালু হয়েছে। আবু তালেব এখন খুব অসুস্থ, তার কথা বলার মতো ক্ষমতা নেই। তিনি শয্যাশয়ী। খোকসা নিশ্চিতবাড়ীয়া গ্রামের বাড়িতে থাকেন। 
এই সিবিএ নেতার দেওয়া তথ্যানুযায়ী খোকসার নিশ্চিত বাড়ীয়া এলাকায় গেলেও কৃষি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা‌ কুষ্টিয়ার তৎকালীন পরিদর্শক আবু তালেব এর গ্রামের বাড়ির সন্ধান মেলেনি। তাকে কেউ চিনেন না বলেও জানান স্থানীয়রা। 
কৃষি ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা‌ কুষ্টিয়ার বর্তমান ব্যবস্থাপক নাফিস শাহারিয়ার মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি একটা মিটিংয়ে আছি।এভাবে ফোনেতো সব বলা সম্ভব না। আগামীকাল ব্রাঞ্চে আসেন কথা হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: