সরকারি জমি বন্ধক রেখে ১৫ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ

সম্প্রতি একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি গ্রেফতার করে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)।

সরকারি জমি বন্ধক রেখে ১৫ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকারি জমি বন্ধক রেখে একটি ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দুই দফায় ঋণ হিসেবে ১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।। তবে সেটি ধরা পড়ার পর আবার সংশোধন দলিল করেন। এবার আগের বন্ধককৃত জমির দাগ নম্বর পরিবর্তন করে ব্যাংকে জমা দেন। সংশোধিত দলিলের জমিতে বন্ধকি সম্পত্তির সাইনবোর্ড স্থাপনের চেষ্টা করলে ব্যাংক জানতে পারে সেটিও ভুয়া।

সম্প্রতি একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি গ্রেফতার করে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)।

যে জমির দলিল দিয়ে ব্যাংক ঋণ নেওয়া হয় সেই জমির প্রকৃত মালিক জামির আলী নামে এক ব্যক্তি। ওই জমি দখল নিতেই জামির আলীর ওপর একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটে, চলে হত্যার চেষ্টা। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। তবে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে র‌্যাব-১-এর একটি দল বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে এসব ঘটনায় অভিযুক্ত গোলাম ফারুক (৫০) ও তার সহযোগী ফিরোজ আল মামুনকে (৩৫) গ্রেফতার করে। তারপরই সামনে আসে এসব ঘটনা।

আজ শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা বলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয় স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।

খন্দকার আল মঈন জানান, ২০০০ সাল থেকে গাড়ি আমদানিকারক হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন গ্রেফতার গোলাম ফারুক। এ সময় তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে বন্ধকি সম্পত্তি ব্যতীত এলসি আবেদন করেন। ওই বেসরকারি ব্যাংকটি আমদানিকৃত গাড়ি বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করার শর্তে তাকে ৭ কোটি টাকা ডিম্যান্ড লোন দেয়। কিন্তু ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক তাকে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার জন্য চাপ দিলে ফারুক মহাসড়কের সরকারি জমি নিজের নামে দেখিয়ে জালিয়াতির পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৯৪৮ সালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরার আজমপুর অংশে অধিগ্রহণ হওয়া জমির প্রকৃত মালিকের ছেলেকে খুঁজে বের করেন ফারুক। পরে তার সাহায্যে ২০০৬ সালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একটি ভুয়া দলিল তৈরি করেন তিনি। যে দলিলে দেখানো হয়, জমির মালিকের ছেলের কাছ থেকে গ্রেফতার ফারুক তার স্ত্রীর নামে ৩০ হাজার টাকায় ওই জমি কিনে নিয়েছেন। যার সাফ কবলা দলিল নম্বর ৮৮৮০।

খন্দকার আল মঈন জানান, জমিটি বেসরকারি ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে আরও ১৫ কোটি টাকা ঋণ নেন ফারুক। কিন্তু ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৩ সালে ব্যাংক অর্থ আদায়ের উদ্দেশ্যে বন্ধকি জমি নিলামে তোলার চেষ্টা করলে দেখা যায়, জমিটি সরকারি সম্পত্তি। এবার ব্যাংকের চাপে আগের দলিলে দাগ নম্বর ভুল হয়েছে দাবি করে ভ্রম সংশোধন দলিল করে আগের বন্ধকি জমির বদলে মামলার বাদীর জমির দাগ নম্বর উল্লেখ করেন। কিন্তু  জমিটিতে সাইনবোর্ড স্থাপন করতে গিয়ে ব্যাংক জানতে পারে জমির এই দলিলও ভুয়া।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে মহাসড়কের জমি ব্যক্তি নামে নিবন্ধন, বিক্রি, ব্যাংকে বন্ধক ও ব্যাংক কর্তৃক নিলামে বিক্রির চেষ্টার ঘটনার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। এ ঘটনায় ভূমি মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি গঠন করলে দেখা যায়, একটি প্রতারক চক্র কয়েকটি সরকারি অফিসের যোগসাজশে মহাসড়কের জমি ব্যক্তিমালিকানায় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। গ্রেফতার ফারুকের বিরুদ্ধে জমিসংক্রান্ত, প্রতারণা, হত্যাচেষ্টা, এনআই অ্যাক্ট, জালিয়াতি ইত্যাদি অপরাধে রাজউকের ১টি, বেসরকারি একটি ব্যাংকের ৪টি ও পাবলিক বাদী হয়ে ৩টিসহ মোট ৮টি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

এদিকে, মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী জামির আলী বলেন, ‘আমার উত্তরার ২৭ শতাংশ জমি গ্রেফতার ফারুক দখল করার জন্য পাঁয়তারা করে আসছিল। তাদের কাছে ওই জমির কোনো দাগ-খতিয়ান নেই। ওই জায়গা বন্ধক দিয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে ১৫ কোটি টাকা লোন নিয়েছে সে। আমার অনুপস্থিতিতে আমার ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে সে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানাকে অভিযোগ করলেও তারা ব্যবস্থা নেয়নি। ফারুক নকল দলিল থানায় দেখিয়েছে। ফারুক আমাকে বলে— প্রশাসন বলেন, পুলিশ বলেন, কোর্ট বলেন–সব খরিদ করেছি। আমার সঙ্গে পারবেন না। হয় ১ কোটি টাকা দেন, না হয় জমির মায়া ছেড়ে দেন।’

জামির আলী বলেন, ‘থানায় অভিযোগ না নিলে আমি বাধ্য হয়ে আদালতে আবেদন করি। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে বাড্ডা থানাকে মামলা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এ ঘটনার তদন্তে নেমে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎকারী এবং হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি গোলাম ফারুক ও ফিরোজ আল মামুনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom