স্বাস্থ্যের নিয়োগ জালিয়াতি: ঢাবি শিক্ষকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭(ক) ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

স্বাস্থ্যের নিয়োগ জালিয়াতি: ঢাবি শিক্ষকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক হাসান ইমাম, ঢাবির ফলিত গণিত বিজ্ঞানের বর্তমান চেয়ারম্যান শওকাত আলীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৫ জুন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেছেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ। দুদকের জনসংযোগ দপ্তর মঙ্গলবার (২০ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭(ক) ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শেখ মোহাম্মদ হাসান ইমাম, সাবেক উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আ ফ ম আখতার হোসেন, খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান শওকাত আলী।

আসামির যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে খাতা প্রণয়ন ও খাঁটি হিসেবে ব্যবহার এবং অপরাধমূলক অসদাচরণ করে নিয়োগ পরীক্ষায় অফিসিয়ালি সরবরাহকৃত উত্তরপত্র বর্তমানে থাকা উত্তরপত্র দ্বারা কোনো এক পর্যায়ে প্রতিস্থাপিত করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার এজহারে বলা হয়, কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদে ২৭৯৮টি শূন্যপদে জনবল নিয়োগের জন্য ২৩ জুলাই ২০২০ তারিখে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়। এসব পদে মোট ৭২,৬১৫ জন প্রার্থী আবেদন করেন। আবেদনকারী ২৩,৫২২ জনের অনুকূলে অনলাইনে টেলিটকের মাধ্যমে প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়।

লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের জন্য লিথোকোড সম্বলিত খাতা প্রণয়নের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক নিয়োগ কমিটির নিকট খাতা প্রেরণ করা হয়। এজাহারে আরও বলা হয়, পরীক্ষা শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কেন্দ্র থেকে খাতা, লিথোকোডের ছেঁড়া অংশ এবং প্রশ্ন বুঝে নিয়ে বাহন মারফত অধিদপ্তরে নিয়ে আসেন এবং নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব উপ-পরিচালক আ.খ.ম. আক্তার হোসেন এর নিকট জমা প্রদান করেন।

সদস্য সচিব খাতা বুঝে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান (অন্যান্য) পদের লিখিত খাতা মূল্যায়নের জন্য খিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. হারুনুর রশিদের নিকট প্রদান করেন। এজাহারে বলা হয়, লিখিত পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর রাতে পুনরায় নতুন খাতায় প্রশ্ন উত্তর লিখে মো. হারুনুর রশিদ ও মো. শাওকত আলীর সহোযোগিতায় অফিসিয়ালি সরবরাহকৃত কিছু কিছু উত্তরপত্র বর্তমানে থাকা উত্তরপত্র দ্বারা প্রতিস্থাপন করেন।

টেকনেশিয়ান ও টেকনোলজিস্ট পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৪৪৫৩টি খাতা, টেবুলেশন শিট ও অন্যান্য ডকুমেন্টস পরীক্ষান্তে ২৪১১টি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ২৫৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮০০ জন পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত লক্ষ্য করা গেছে। ২৪১১টি উত্তরপত্রে একাধিক স্ট্যাপলিংয়ের ছিদ্র ও পেন্সিলে লেখা বিভিন্ন প্রকারের সংকেত সংক্রান্তে চাকরি প্রার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোনো সঠিক তথ্য প্রদান করেননি।

তবে দুদকে গোপনীয় অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কর্মরত বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ১৫-২০ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ প্রদানের শর্তে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়।