স্ত্রী সামিরার সঙ্গে যেমন ছিলো সালমানের পাঁচটি জন্মদিন

স্ত্রী সামিরার সঙ্গে যেমন ছিলো সালমানের পাঁচটি জন্মদিন

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : চোখের দেখায় তিনি নেই। তিনি আছেন কোটি দর্শকের অন্তরে। সময় যতো গড়িয়েছে ততোই যেন তার আবেদন বেড়ে চলেছে। তিনি সবার প্রিয় নায়ক সালমান শাহ। রোমান্টিকতা, স্টাইলের জন্য এদেশের সিনেমায় কালজয়ী নায়ক তিনি। মৃত্যুর ২৫ বছর পেরিয়েও তার আবেদন বা গ্রহণযোগ্যতায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। বরং সেটা বেড়েছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।

আজ ১৯ সেপ্টেম্বর সালমানের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে এবার ৫০ বছরে পা রাখতেন। হয়তো অনেক আয়োজন হতো তাকে ঘিরে। চারদিকে তার ঘিরে থাকতো রঙিন দুনিয়ার মানুষেরা। ভক্তদের নানা আয়োজনে আপ্লুত হতেন। প্রিয়তমা স্ত্রী সামিরার কাছ থেকেও পেতেন নতুন কোনো সারপ্রাইজ।

কিন্তু সবই শুধু ‘হয়তো’র মধ্যে বন্দি আজ। সালমান চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ভক্ত ও অনুরাগীরা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তাকে স্মরণ করছেন জন্মদিনে। আর সামিরা নতুন করে ঘর বেঁধেছেন অন্য কারো সঙ্গে।

তবে সালমানকে আজও তিনি হৃদয়ে রাখেন প্রথম প্রেমের প্রথম পূজার দেবতা হিসেবে। সামিরা ডাকেন ইমন বলে। তিনি জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গেল বছর জানিয়েছিলেন সালমান শাহ’র সঙ্গে কাটানো তার পাঁচটি জন্মদিনের নানা কথা। সালমান ভক্তদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

সামিরার ভাষ্য, ‘ইমনের (সালমানের পারিবারিক নাম) সঙ্গে আমার পরিচয় ১৯৯০ সালে। সে মারা যায় ১৯৯৬ সালে। জন্মদিনের ১৩ দিন আগে। সেবারের জন্মদিনটা তো পাইনি। তার পাঁচটি জন্মদিন আমার সঙ্গে কেটেছে। কত আয়োজন থাকতো তার জন্মদিন ঘিরে। কার্ড আর চিঠি দেয়ানেয়া হতো দুজনের মধ্যে। ও খুবই রোমান্টিক। ও খুব ইন্টিলিজেন্টও। সহজেই চমকে দেয়া যেত না। তবুও কীভাবে তাকে চমকে দেয়া যায় ভাবতাম সারাক্ষণ। সেইসব স্মৃতি আজ শুধুই বেদনার।’

‘একবার ওকে চমকে দিতে পেরেছিলাম। তখন ইস্কাটনের বাসায় থাকি আমরা। ইমনের ছোট ভাই বিল্টুও থাকে আমাদের সঙ্গে। ও গেস্ট রুমে থাকতো। ডাইনিং রুমের পাশে। বিল্টু আর আমি মিলে গেস্ট রুমে বেলুন দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিলাম সাজিয়ে। সুন্দর একটা কেক রাখা ছিলো। কিছু মোমবাতি। ইমন বাসায় ফিরে আয়োজন দেখে চমকে গিয়েছিলো। ওর চোখে মুখে ভিষণ আনন্দ দেখেছিলাম সেদিন’- যোগ করেন সামিরা।

তিনি আরও বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে ওর চেয়ে আমার জন্মদিনেই আয়োজন হতো বেশি। আমি তো মেয়ে মানুষ। খুব একটা বাইরে যাওয়া হতো না। যা ইচ্ছে তাই কিনতে পারতাম না, আনতে পারতাম না ওকে চমকে দেবো বলে। সাধারণত আমি ওর জন্য কাপড়, ফ্যাশনের বিভিন্ন জিনিসপত্রই আনতাম। আমি তো জানতাম সিনেমার জন্য ওর কোন জিনিসটা কাজে লাগবে। কিন্তু আমার জন্মদিনগুলোতে ও যখন বাসায় ফিরতো দারুণ সব গিফট আনতো। চমকে যেতাম একেবারে। সেসবের সঙ্গে থাকতো চমৎকার রোমান্টিক সব লেখা।

একবার মনে আছে। আমার জন্মদিনে চোখ বন্ধ করিয়ে বাসার নিচে নিয়ে গেল। তারপর বললো চোখ খুলতে। চোখ খুলে দেখি গাড়ি। সেটা পুরোটাই রঙিন কাগজে মুড়ানো। আনন্দে চোখে জল এসেছিলো। ভালোবাসায় ভরা ওর পাগলামিগুলো খুব মিস করি।’

সালমান শাহ’র জন্মদিনে ভক্তদের নানা আয়োজন ও পাগলামি নিয়ে সামিরা বলেন, ‘ওরাই তো ইমনকে বাঁচিয়ে রেখেছে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায়। ইমন হয়তো হিট নায়ক ছিলো, জনপ্রিয় ছিলো। কিন্তু মৃত্যুর এত এত বছর পরও ওর যে আবেদন পৃথিবীর আর কোন দেশের কোনো নায়কের বেলায় এমনটি ঘটেছে? এটা শুধুমাত্র ইমনের ভক্তদের জন্যই সম্ভব হয়েছে। তারা আজও ইমনের জন্য কাঁদে। ওর মৃত্যুটাকে মেনে নিতে পারে না। ওর মৃত্যুর রহস্যের তদন্তের জন্য ব্ছরের পর বছর আন্দোলন করে যাচ্ছে। ওর জন্মদিনে নিজেদের পয়সায় মিলাদ পড়াচ্ছে, কেক কাটছে।

ইমন যদি আজ বেঁচে থাকতো ভক্তদের এই পাগলামিগুলো কীভাবে গ্রহণ করতো সেইটা দেখতে আমার খুব লোভ হয়। ও যা ভালোবাসার কাঙ্গাল ছিলো, আবেগী ছিলো। ভক্তদের নিয়ে নিশ্চয়ই দেখতেন এমন কিছু করে বসতো যা কেউ ভাবতেও পারতো না।’