স্কুলে বিষক্রিয়ার শিকার হয়ে হাসপাতালে ৬০ আফগান ছাত্রী
নতুন একাডেমিক বছরের প্রথম দিনে শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত হয়েছে আফগান স্কুলের মেয়েরা
প্রথম নিউজ, ডেস্ক : নতুন একাডেমিক বছরের প্রথম দিনে শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত হয়েছে আফগান স্কুলের মেয়েরা। চলতি বছরের ২৫ মার্চের ছবি
স্কুলে বিষক্রিয়ার শিকার হওয়ার পর প্রায় ৬০ জন আফগান স্কুলছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের একটি স্কুলে এই ঘটনা ঘটেছে। এর আগে প্রতিবেশী দেশ ইরানেও মেয়েদের স্কুলে একই ধরনের বিষাক্ত হামলার ঘটনা ঘটেছিল।
সোমবার (৫ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কুলে বিষক্রিয়ার শিকার হওয়ার পর প্রায় ৬০ আফগান মেয়ে শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে দেশটির পুলিশ সোমবার জানিয়েছে। আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে সার-ই পোল প্রদেশের একটি বালিকা বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে।
সার-ই-পোল প্রদেশের পুলিশের মুখপাত্র দ্বীন মোহাম্মদ নাজারি বলেছেন, ‘কিছু অজ্ঞাত লোক সানচারাক জেলার একটি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ... এবং ক্লাসে বিষ প্রয়োগ করে। পরে যখন মেয়েরা ক্লাসে আসে তখন তারা বিষক্রিয়ার শিকার হয়।’
তিনি এই ঘটনার বিস্তারিত কোনও বিবরণ দেননি। এছাড়া সেখানে কোন ধরনের পদার্থ ব্যবহার করা হয়েছে বা এই ঘটনার পেছনে কারা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে সে বিষয়েও কোনও তথ্য সামনে আনা হয়নি।
নাজারি বলেন, মেয়েদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তারা ‘ভালো অবস্থায় আছে’। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এর আগে প্রতিবেশী ইরানে মেয়েদের স্কুলে বিষক্রিয়ার নানা ঘটনায় গত বছরের নভেম্বর থেকে আনুমানিক ১৩ হাজার শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়া এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই ছাত্রী।
এর আগে আফগানিস্তানের আগের বিদেশি-সমর্থিত সরকারের সময়ও মেয়েদের স্কুলে সন্দেহভাজন গ্যাস হামলাসহ বেশ কয়েকটি বিষক্রিয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তবে তালেবান প্রশাসন ২০২১ সালে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে এই ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও ক্ষমতা দখলের পর বেশিরভাগ নারী ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের হাইস্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে তালেবান।
এদিকে পৃথক এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, উত্তর আফগানিস্তানে দু’টি আলাদা হামলায় প্রায় ৮০ জন স্কুলছাত্রী তাদের প্রাইমারি স্কুলে বিষক্রিয়ার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। স্থানীয় এক শিক্ষা কর্মকর্তা রোববার এই তথ্য জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেছে সংবাদমাধ্যমটি।
ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, বিষ প্রয়োগের জন্য দায়ী ব্যক্তির কোনও ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। গত শনিবার ও রোববার সার-ই-পোল প্রদেশে এসব ঘটনা ঘটে।
প্রাদেশিক শিক্ষা বিভাগের প্রধান মোহাম্মাদ রাহমানি বলেন, সানচারাক জেলায় প্রায় ৮০জন ছাত্রীকে বিষপ্রয়োগ করা হয়। তিনি জানান, ভুক্তভোগী ছাত্রীদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে এবং তারা সবাই এখন ভালো আছে।
২০২১ সালের আগস্টে তালেবান গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসার পর নারী ও কিশোরীদের অধিকার এবং স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা প্রথমবার ঘটল বলে মনে করা হচ্ছে।
অবশ্য তালেবান প্রশাসনের অধীনে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, তালেবান কর্তৃপক্ষ প্রায় ১২ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েদের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রেখেছে। কট্টরপন্থি এই গোষ্ঠীটির দাবি, তারা কিছু শর্তে নারী শিক্ষার পক্ষে।