শেয়ারবাজারে কারসাজি: শিবলীসহ ৮ জনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত
মঙ্গলবার আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যাংকগুলো এ নির্দেশ দিয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও তার ছেলে জুহায়ের সারার ইসলাম, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, শেয়ারবাজারের আলোচিত কারসাজিকারক মো. আবুল খায়ের হিরু, জাভেদ এ মতিন, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি সিডব্লিউটির মনিজা চৌধুরীসহ আটজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যাংকগুলো এ নির্দেশ দিয়েছে। ব্যাংক হিসাব স্থগিতের এ তালিকায় থাকা অন্য দুজন হলেন মো. দেলোয়ার হোসাইন ও শরিফুল ইসলাম।
বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, উল্লিখিত ব্যক্তি ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অতীতে ও বর্তমানে কোনো হিসাব থাকলে তা ৩০ দিনের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হলো। পাশাপাশি এসব হিসাবের বিস্তারিত তথ্য ৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউর কাছে জমা দিতে বলা হয়। বিএফআইইউ বলেছে, আগামী ৩০ দিন এসব ব্যক্তি ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হিসাবে কোনো লেনদেন করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তের প্রয়োজনে ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত রাখার সময় বাড়ানো হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্থগিত করা সব ব্যাংক হিসাবের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল, যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী প্রভৃতি তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে ৪ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউর কাছে পাঠাবে।
শেয়ারবাজারে গত কয়েক বছরে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে যেসব ব্যক্তি বিপুল অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম জাভেদ এ মতিন, আবুল খায়ের ও ছায়েদুর রহমান অন্যতম। শেয়ারবাজারে কারসাজি এবং অর্থ আত্মসাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ ১০ জনের নাম উঠে এসেছে। সম্প্রতি এদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি রিপোর্ট দিয়েছিল সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন লঙ্ঘন করে সালমান এফ রহমানকে বন্ডের অনুমোদন দেওয়ায় দ্বিতীয়বার বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসাবে পুনঃনিয়োগ পান শিবলী রুবাইয়াত। এছাড়াও প্রতিবেদনে সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরু, তার প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ, হিরুর বাবা আবুল কালাম মাদবর, আলোচিত কারসাজিকারক আব্দুল কাইয়ুম, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস, ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ-সদস্য সাকিব আল হাসান, বহু বিতর্কিত ও যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকা নিষিদ্ধ ব্যবসায়ী জাবেদ এ মতিন এবং বিএমবিএর সাবেক প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমানের নাম উঠে এসেছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও গেল ২৮ মে শিবলী রুবাইয়াতকে ৪ বছরের জন্য পুনঃনিয়োগ দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে ২০২০ সালের ১৭ মে তাকে প্রথমবার বিএসইসির চেয়ারম্যান করা হয়। প্রথম মেয়াদের নিয়োগে নানাভাবে বিতর্কিত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক। আলোচ্য সময়ে বিভিন্ন অপরাধ করার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বেপরোয়া। শেয়ারবাজারে কারসাজিসহ থেকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিয়ে দেশে ও দেশের বাইরে তিনি গড়েন সম্পদের পাহাড়। অপরাধের জন্য কারসাজির চক্রকে সঙ্গে নিয়ে বিশাল অসাধু সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটে কমিশনের ভেতরের কর্মকর্তা, স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গ্যাম্বলার, ব্যবসায়ী, প্রভাবশালী আমলা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা এবং গণমাধ্যমের লোকজনও রয়েছেন।