শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি

শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি


নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলায় গ্রেফতার, নির্যাতন বন্ধ,  সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তসহ ১০ দফা দাবিতে আগামী শনিবার ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি। বেলা ২টায় ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে এই কর্মসূচি পালন করবে। বুধবার রাতে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় অনুষ্ঠিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার কঠোর সমালোচনা করেন রিজভী। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আর গ্রীষ্মকালে শীতের হাওয়া বয়ে যাওয়ার মত ব্যাপার। সুতরাং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই কথায় জনগণের মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাচ্ছে যে, শেখ হাসিনার সরকার আরেকটি অস্বচ্ছ ও পাতানো নির্বাচনের গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সকল নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক উপসংহারহীন অবস্থার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আবারও নিঃশব্দ আতঙ্কের পরিবেশে ভোটারবিহীন নির্বাচনের ফন্দি-ফিকির করছেন তিনি। গায়েবী মামলা এই সরকারের রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিএনপি’র মৃত নেতা, অসুস্থ নেতা এবং বিদেশে অবস্থান করছেন এমন নেতাদের বিরুদ্ধেও গায়েবী মামলা দিয়ে দেশে-বিদেশে তামাশার পাত্রে পরিণত হয়েছে আওয়ামী সরকার। এরা বিএনপিসহ বিরোধী দল-মত ও সমালোচকদের দমন করার জন্য মামলা দায়ের করে গায়েবী মামলা সেটিরই প্রমাণ। শুধু দেশেই নয় বিদেশেও এই অবৈধ সরকারের আমলে আইন আদালতের সততা নিয়ে বিশাল প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরা জনগণকে বলে এক কথা, আর ক্ষমতায় এসে করে তার বিপরীত কাজ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে কখনোই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিষয়ে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে কোন কথা নেই, কিন্তু ক্ষমতায় এসে সেটি বাতিল করেছে। এই ঘটনা বিস্ময়কর ও জনগণের প্রতি মারাত্মক অসদাচরণ। 
রিজভী বলেন, সরকারের মানসিকতা শান্তি, সহাবস্থানের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে এরা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। এদের ভাষা ভয়ঙ্কর। সমাজের স্থিতিকে ভেঙ্গে ফেলার সমতুল্য। বর্তমান দানবীয় দুঃশাসনে নিরপেক্ষতা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। দলীয় আনুগত্য সর্বক্ষেত্রে গুরুত্ব পেয়ে থাকে। রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয় ব্যক্তিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সুতরাং সুশাসন নির্বাসিত হওয়ায় টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও ভূমি দখলের মতো অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। এদিকে কর্মসংস্থানের বেহাল অবস্থা, ক্রমহ্রাসমান আয় এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সীমাহীন উর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস উঠলেও নিশিরাতের সরকার বিরোধী দল দমণে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সরকারের মন্ত্রীদের অশালীন কু-কথা, গায়েবী মামলা, নির্বিচারে গ্রেফতার এবং কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের কোন কমতি নেই।
সন্ত্রাস, নির্যাতন আর মৃত্যুর মিছিল বন্ধ করা হোক। এই সরকারী অনাচারের বিরুদ্ধে জনগণ ফুঁসে উঠেছে। অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে এই মূহুর্তে একযোগে মাঠে নামাটা এখন নাগরিক কর্তব্য। গণতন্ত্র মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় অবদান। ‘গণতন্ত্রের প্রতীক, গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের অবিচল নির্ভিক নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে দলমত-পেশা নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আব্দুস সালাম, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহীদুল ইসলাম বাবুল, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন  প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।