শুধু পটল-ঢেঁড়স মেলে ৫০ টাকায়, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রায় এক যুগ ধরে রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুর ঝিলপাড় এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন হান্নান শেখ।

শুধু পটল-ঢেঁড়স মেলে ৫০ টাকায়, বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: প্রায় এক যুগ ধরে রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুর ঝিলপাড় এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন হান্নান শেখ। স্ত্রী আর দুই মেয়ে নিয়ে সংসার তার। রিকশাচালক হান্নানের আয় দিয়েই চলে সন্তানদের লেখাপড়া আর সংসার খরচ। হান্নানের পেশাগত জীবনে এসেছে কিছুটা পরিবর্তন। একসময় প্যাডেল চালিত রিকশা চালালেও এখন চালান ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। তবে আয়ের দিক থেকে মোটেও পরিবর্তন নেই। বিপরীতে খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রতিদিন যা আয় করেন তার প্রায় পুরোটাই চলে যায় নিত্যপণ্যের খরচ জোগাতে। মাংস কেনার কথা এখন ভাবতেও পারেন না।

হান্নান শেখের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, একসময় রিকশা চালিয়ে পরিবারের খরচ মিটিয়েও কিছু টাকা জমতো। এখন মাসের শেষ দিকে ধার-দেনা করে চলতে হয়। সন্তানদের পড়ালেখার খরচও বেড়েছে। সবকিছু সামাল দিতে গিয়ে এখন বাজারে গেলে মোটা চাল আর পটল, ঢেঁড়স কিনতে হয়। প্রতিদিন একই সবজি খেতে সবাই বিরক্ত হয়, নিজেও বিরক্ত হই। তবে তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় এসব সবজিতেই চলছে দিন। এভাবে কষ্ট করে চলেও কোনো সঞ্চয় করতে পারি না।

খিলগাঁও বাজারে টেইলার্সের কাজ করেন হাইজুল ইসলাম। নিত্যপণ্যের নাভিশ্বাসে সংসার চালানোই এখন বড় কষ্ট। জাগো নিউজকে হাইজুল বলেন, নিত্যপণ্যের যেভাবে দাম বেড়েছে, সে তুলনায় আয় হয় না। চাল-ডালের দাম কম হলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেত। এই আয়ে এখন আর পারছি না। কোরবানির ঈদে পরিবার গ্রামে রেখে আসবো। আমাদের সুখ আর থাকলো না এই শহরে...।

আজ রোববার (৪ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচা, শান্তিনগর, ফকিরাপুল, মালিবাগ বাজার, মালিবাগ রেলগেট বাজার, খিলগাঁও বাজার এবং এসব এলাকার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব বাজারে পটল-ঢেঁড়সের দাম কিছুটা কমেছে। কেজিতে ৫-১০ টাকা কমে এখন পটল ও ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা দরে। বিগত বেশ কিছুদিন ধরে দেশে বয়ে যাচ্ছে তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমের কারণে বেড়েছে লাউয়ের চাহিদা। তবে বাজারে সরবরাহ ভালো থাকায় লাউয়ের দাম ১০ টাকা কমে এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুইদিন আগে প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। এছাড়া জালি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা প্রতি পিস।

এসব বাজারে করলা, বরবটি, কচুর লতি ও দেশি টমেটো এখনো ৭০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে রয়েছে। সজনে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। বেগুন, পেঁপে, ঝিঙে, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। তবে আলু গত এক মাস ধরেই ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রেতা সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, কাঁচামালের দাম সবসময় ওঠা-নামা করে। এখন বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম। এ কারণে ঘাটে (পাইকার বাজার) দাম বেশি, যার প্রভাব পড়েছে খুচরায়।

বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার এখন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়। এছাড়া প্রতি হালি ডিম এখনো বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। পাশাপাশি আগের চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ।