শেখ হাসিনা প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের জানাযা দেখতে ভালবাসেন: রিজভী
প্রথম নিউজ, নিজস্ব প্রতিবেদক: শুধুমাত্র দুর্নীতির কারণে দেশের স্বাস্থ্যখাত ভেঙ্গে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ডেঙ্গুজ্বরে সারাদেশ কাঁপছে, প্রতিদিন লাশের সারি দীর্ঘায়িত হলেও এ বিষয়ে সরকারের কোন মাথাব্যথা নেই। অথচ এই রোগ শতকরা একশত ভাগ প্রতিরোধযোগ্য। সরকারের অবহেলা এবং উদাসীনতায় এটি এখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। প্রায় সারাদেশেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে একদিনে হাসপাতালে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ও সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তিনি আরও বলেন,আসলে শেখ হাসিনা প্রতিদিন দেশের অসংখ্য মানুষের জানাযা দেখতেই ভালবাসেন। আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, মশক নিধনে সিটি কর্পোরেশনের বাজেট লুটে খাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। মাঝে মাঝে ড্রোন এবং ফগার মেশিন দিয়ে ফটোসেশন করা হচ্ছে। মূলত: মশক নিধনে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ডেঙ্গু জ¦র হলে দ্রুত যে ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেটিও নিতে পারেনি সরকার।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন মানুষের ভোটাধিকার, বাক—ব্যক্তি স্বাধীনতাসহ বহুমাত্রিক গণতন্ত্র পুণপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন নির্দলীয়—নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং অবৈধ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল পল্টনে স্মরণকালের বৃহত্তম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশকেও বাধাগ্রস্ত করতে সরকার তার স্বভাবসূলভ চন্ডনীতির কোন ব্যতিক্রম করেনি। রাস্তায় রাস্তায় আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশের বাধা, গ্রেফতার, পাড়ায়—মহল্লায় ককটেল বিস্ফোরণসহ সহিংস আক্রমণ কোন কিছুরই কমতি ছিল না। নেতাকর্মীদের বাড়ীতে অবরুদ্ধ করাসহ গাবতলী, আমিনবাজার, গাজীপুর—ধামরাই—টঙ্গী—কালিগঞ্জ সড়ক, ঢাকা—চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা, মাওয়া—কেরানীগঞ্জ মহাসড়কে ঢাকার প্রবেশদ্বারে তল্লাশী চৌকি বসানো হয়। এসব এলাকা থেকে অসংখ্য যানবাহন আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নেতাকর্মীরা ঢাকায় ঢোকার সময় গ্রেফতার করা হয়। এতে শুধু বিএনপি নেতাকর্মীই নয়, রোগীসহ সাধারণ মানুষও চরম হয়রানীর শিকার হয়। এরপরও জনতার পল্টনমূখী প্রবল স্রোতকে প্রতিহত করতে পারেনি সরকার।
বিএনপি নেতাকর্মীদের আক্রান্ত করা হলেও তাদের উদ্যমে দমাতে পারেনি অবৈধ সরকারের চ্যালা—চামুন্ডারা। সুকৌশলে বাস—মিনিবাস—গণপরিবহন বন্ধ করেও পল্টনের দিকে ছুটে আসা মানুষকে আটকানো যায়নি। শুধু তাই নয়, সমাবেশকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করেই ক্ষান্ত হয়নি, এটির প্রচারে সরকার মারাত্মক হস্তক্ষেপ করেছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোটা পল্টন এরিয়ায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়, মোবাইল নেটওয়ার্ক এর ফ্রিকোয়েন্সি ছিল না বললেই চলে। টেলিভিশনে সমাবেশের সংবাদ লাইভ প্রচার করতে নিষেধ করা হয়। এরপরেও উত্তাল জনসমূদ্রের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হলো—দেশের নোটিশবোর্ডে জনগণের পক্ষ থেকে ‘সতর্ক বার্তা’।
সরকারী শত বাধা বিপত্তি, আওয়ামী পান্ডাদের সন্ত্রাসী হামলা, পুলিশী গ্রেফতার ও ঝড়—বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশ সফল করায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে জনগণ, সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং গণমাধ্যমের সাংবাদিকসহ সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। বিএনপি নেতা বলেন, গণতন্ত্রের প্রতি এক ধরণের ক্রোধ থেকে শেখ হাসিনার মনে প্রত্যহ জন্ম নেয় প্রতিহিংসা। তিনি রাষ্ট্রযন্ত্রকে বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর ব্যবহার করেও শেষ রক্ষা করতে পারবেন না। কারণ আইন—আদালত—প্রশাসন—আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সবকিছুকে হাতের মুঠোয় নিয়েও গণতন্ত্রকামী জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি। গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের অঙ্গিকার কখনওই নিস্ফল হয়নি।
নানা কালাকানুন প্রনয়ন করেও জনগণকে বন্দী করে রাখা যায় না। যদিও এখনও চলছে কালাকানুন প্রনয়নের খেলা। সর্বশেষ অত্যাবশকীয় পরিষেবা বিল পাশ করার অপচেষ্টার দ্বারা শ্রমিকদের ধর্মঘটের অধিকার হরণের চক্রান্ত চলছে। তবে জনস্বার্থ নয়, স্বৈরশাহীর একমাত্র আরাধ্য হচ্ছে বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকা। আর সেজন্য এরা বিশ^াস করে অশান্তি, হিংসা আর হানাহানী। এ সময় তিনি গত কয়েকদিনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপর হামলা ও গ্রেফতারের তালিকা তোলে ধরেন।
তিনি বলেন, সমাবেশে আসার পথে টাঙ্গাইল জেলাধীন ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম মহব্বত, বিএনপি নেতা মোঃ শরীফ হোসেন, ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলাম, বিজয় সরকার, অন্তর হাসান, সাইফুল ইসলাম সুমন, মামুন খান, রাকিবুল হাসান, ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ এম এ আজিজুর রহমান এর ছেলে মির্জা হাবিব হাসান, মুশুদ্দি ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি স্বাধীন, বীরতারা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সোহান হাসানকে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দে্যশে হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে। বিএনপির সমাবেশে আসার পথে টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরে শিমলা বাজার এলাকায় বিএনপির নেতাকমীর্দের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নেক্কারজনক হামলা চালায়। এ সময় টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম মোহাব্বত, যুবদল নেতা হাবিব মির্জা, উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক এবং সদস্য সচিবসহ ১২ জন নেতাকমীর্ মারাত্মকভাবে আহত হয়।
বিএনপি সমাবেশে আসার পথে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার পুলিশ ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩জন ও সাভারের গুলাইল এলাকায় ঠিকানা পরিবহনের একটি বাস থেকে যুবদলের ৭০জন নেতাকমীর্কে সাভার থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। বিএনপি সমাবেশে আসার পথে কালীগঞ্জে বিএনপি নেতাকমীর্ ও তাদের গাড়ী বহরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। হামলায় বিএনপি নেতা মোঃ হুমায়ুন কবির, বিএনপি নেতা মোঃ ফারুক হোসেন আহত হয়। গাজীপুরের কাপাসিয়া মোড়ে মোক্তারপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গাড়ী ভাংচুর করে। নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি মোঃ শাহীন শরীফ, সাবেক সহ সভাপতি কামরুল হাসান মাসুদ, মহানগর ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল কাদির, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আরিফ খান, যুবদল নেতা মোঃ সেলিম ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক সাহেদ আহমেদকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
গতকাল রাজবাড়ী জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক আরিফুর রহমান রোমানসহ ২৫জন নেতাকমীর্কে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসার পথে যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সামসুর রহমান, যুবদলের সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমানসহ ৮জন নেতাকমীর্কে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার পুলিশ গ্রেফতার করে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আহমদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমুজ্জামান সেলিম, আসাদুল করিম শাহীন, আমিনুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।