লবণাক্ততার আগ্রাসনে উপকূলে বাড়ছে বাল্যবিয়ে: নাগরিক সংলাপে বক্তারা
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ‘বাল্যবিবাহের শিকার উপকূলের শিশু ও করণীয়’ শীর্ষক এক অনলাইন সংলাপে এসব কথা বলেন তারা।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: নানামুখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও উপকূলে কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না বাল্যবিয়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ও লবণাক্ততার আগ্রাসনে উপকূলে বাল্যবিয়ে বাড়ছে বলে মনে করেন নাগরিক সমাজের নেতারা।
তারা বলছেন, ‘সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর নানামুখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও উপকূলে বাল্যবিয়ে কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না। কারণ সেখানে লবণাক্ততা ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে মানুষ কর্মসংস্থান হারাচ্ছে। সুপেয় পানির সংকট বাড়ছে। সচেতনতার অভাব রয়েছে। ফলে অভিভাবকরা মেয়েদের স্কুলে না পাঠিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে।’
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) ‘বাল্যবিবাহের শিকার উপকূলের শিশু ও করণীয়’ শীর্ষক এক অনলাইন সংলাপে এসব কথা বলেন তারা।
বাল্যবিয়ে বন্ধে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে উন্নয়ন সংস্থা ‘ফেইথ ইন একশন’, নাগরিক সংগঠন ‘সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলন’ এবং পার্লামেন্ট-নিউজ আয়োজিত সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র।
আলোচনায় অংশ নেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প কর্মকর্তা হালিমা খানম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, টিম অ্যাসোসিয়েটসের টিম লিডার পুলক রাহা, সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাকিলা পারভীন, স্ক্যান সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল, ফেইথ ইন একশনের নির্বাহী পরিচালক নৃপেন বৈদ্য, ইনসিডিন বাংলাদেশের কো-অর্ডিনেটর মো. রফিকুল আলম, অনির্বাণ লাইব্রেরির সভাপতি প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার শম্পা, ফ্যামিলি টাইস ফর উইমেন ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক খুজিস্তা বেগম জোনাকি, মহিলা পরিষদের জ্যোৎস্না দত্ত, নাগরিক উদ্যোগের সাকিল আহমেদ, ফেইথ ইন একশনের জ্যাকব টিটো প্রমুখ।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, পরিবারের বোঝা কমাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েদের বাল্যবিয়ে দিয়ে অভিভাবকরা সন্তানের জীবনকে বিপদের মধ্যে ফেলছে। তাই অভিভাবকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। একই সঙ্গে মেয়েদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের প্রকল্প কর্মকর্তা হালিমা খানম বলেন, প্রতিটি জেলার জেলা প্রশাসকেরা বাল্যবিয়ে নজরদারি করছেন। একেবারে ইউনিয়ন থেকে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে এ নজরদারি চলছে। সরকারের হেল্পলাইন নম্বরে (১০৯) আসা কলের সংখ্যা বাড়লেও বাল্যবিয়ে বেড়েছে এমন তথ্য নেই। তিনি বাল্যবিয়ে বন্ধে সরকারের কার্যক্রমে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
বাল্যবিয়ের জন্য অর্থাভাব ও সচেতনতার অভাবকে দায়ী করে সংলাপে বলা হয়, পরিবারের লোকজন শিশুদের লুকিয়ে, এমনকি আত্মীয়-বাড়ি নিয়ে গিয়ে বিয়ের আয়োজন করে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাবও বাল্যবিয়ে বন্ধের পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, লাবণাক্ততার আগ্রাসন রোধ, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আইনের যথাযথ তথ্য প্রয়োগ নিশ্চিত এবং সচেতনতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয় সংলাপে।