লক্ষ্মীপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে মারধর

 লক্ষ্মীপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে মারধর

প্রথম নিউজ, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩ একর জমি দীর্ঘদিন ধরে ১৮/২০টি পরিবার বেদখল করে রেখেছে। এরমধ্যে অধিকাংশ জমিই মীর মোহাম্মদ এলিট নামে এক ব্যক্তির দখলে রয়েছে। ওই জমিতে বৃক্ষরোপণ করতে গেলে পাউবোর রামগতি উপবিভাগীয় কার্যালয়ের কার্যসহকারী আরিফুর রহমান ভূঁইয়কে এলিট মারধর করেন। এরপর থেকেই কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আ ম ম নঈম ও আরিফুর সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছেন। 

রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রামগতির মাছঘাট এলাকায় পাউবোর ৭ দশমিক ৭৮ একর জমি রয়েছে। অনেকগুলো পরিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয় এলাকায় ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। এর আগে তিনবার তাদেরকে নোটিশ দিলেও তারা জমি খালি করেন নি। এরমধ্যে মীর মোহাম্মদ এলিট পাউবোর জমিকে নিজের বলে দাবি করছেন। সেখানে পাউবোর ৩ একর জমি বেদখলে রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় পাউবো কার্যালয় এলাকায় বৃক্ষরোপণ করতে গেলে আরিফুরকে মারধর করেন এলিট। একই দিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আরিফুর তার বিরুদ্ধে রামগতি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ঘটনাটি রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম শান্তুনু চৌধুরীকেও জানানো হয়েছে।

অভিযুক্ত এলিট রামগতি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারার রামগতি উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি মর্জিনার বেগমের ছেলে। প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব) এমএ মান্নান বিকল্পধারার মহাসচিব।

পাউবোর জমিতে অবৈধভাবে বসবাসরত মো. রাব্বি, কবির হোসেন ও আলাউদ্দিন জানায়, নদী ভাঙনে সব হারিয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ২৩টি পরিবার পাউবোর জমিতে ঘর বাঁধেন। এখন ১৮টি পরিবার রয়েছে। এ স্থান থেকে সরে যাওয়ার জন্য পাউবো কয়েকবার তাদেরকে নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু নিঃস্ব হওয়ায় তারা কোথাও যেতে পারছে না। পাউবো জমিতে থাকা একটি পুকুরে এলিট মাছ চাষ করছে। খালি জমিতে কলাগাছ সহ বিভিন্ন গাছ লাগিয়েছিল। ওই কলাগাছ কেটে পাউবোর লোকজন বৃক্ষরোপণ করতে যায়। ৩ ফুট পর পর গাছ লাগানোর জন্য তারা গর্ত করে। কিন্তু এলিট বলছিল ৫ ফুট পর পর গাছ লাগানোর জন্য। এতে রাজি না হওয়ায় পাউবোর কর্মচারী আরিফুরের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থল পুলিশ এসেছিল।

এলিটদের স্বজন পরিচয়ে মো. জাহের বলেন, ৫ ফুট পর পর গাছ লাগালে মাঝখানে এলিট পেঁপে গাছ লাগাবেন বলে পাউবোর কর্মচারীকে জানিয়েছেন। কারণ তিনি চেয়েছিলেন পাউবোর লাগানো গাছগুলো দেখাশোনা করতে। যেন কেউ নষ্ট না করে। পেঁপে গাছ লাগালে দেখাশোনা করতে সহজ হতো।

পাউবোর রামগতি উপজেলার কার্যালয়ের কার্যসহকারী আরিফুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা কার্যালয়ের দিক নির্দেশনায় আমি বৃক্ষরোপণ করতে যায়। এতে মীর মোহাম্মদ এলিট আমাকে বাঁধা দেন। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে কিল ঘুসি মারেন। আমার গেঞ্জি ছিঁড়ে ফেলেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে আমি রামগতি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। কিন্তু থানা পুলিশ এ নিয়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

রামগতি পাউবোর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আ ম ম নঈম এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতা ও ভয়ে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ভয়ে তিনি এলিটের বিরুদ্ধে কথা বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে মীর মোহাম্মদ এলিট বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাউবোর ওই জমিতে একটি পুকুরে মাছ চাষ ও খালি জমিতে গাছপালা লাগিয়ে ব্যবহার করে আসছি। সেখানে আমাদের গাছপালা কেটে তার বৃক্ষরোপণ করতে যায়। এতে আমি তাদেরকে কিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু না মানায় তাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। আমি কাউকে মারধর করিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

রামগতি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, আমার যোগদানের আগে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। ঘটনাটি কেউ আমাকে জানায়নি। যেহেতু জিডি করা হয়েছে, তদন্ত করে দ্রুত এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। এরপর আশা করছি আর কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না। কার্যালয়ে আসতে পাউবোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো ভয় নেই। ঘটনাটি আমি দেখবো।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে আসতে ভয় পাচ্ছেন। এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয়ভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এটি সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া কার্যালয় এলাকায় অবৈধ দখলদারদের দ্রুত উচ্ছেদে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম শান্তুনু চৌধুরী বলেন, পাউবোর কর্মকর্তারা ঘটনাটি আমাকে জানিয়েছেন। তাদেরকে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে রামগতি থানার সাবেক ওসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। নতুন ওসির সঙ্গেও কথা বলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলবো।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, পাউবোর জমি নিজের দাবি করে এলিট নামে এক ব্যক্তি দখল করে রেখেছে। ওই জমিতে গাছ লাগাতে গেলে আমাদের একজনকে মারধর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মারধরকারীর উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। ভয়ে আমাদের কর্মকর্তা কর্মচারীর ওই কার্যালয়ে যেতে রাজি হচ্ছে না। সেখানে না গেলে  আমাদের কাজগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।