রবিবার-সোমবার ফের অবরোধের ডাক
আগামী রোববার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হবে। তবে প্রথমদফা অবরোধের শেষদিনেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা জোটের নেতাকর্মীরা।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, গুলি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যদিয়ে শেষ হয়েছে সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিরোধী জোটের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ। আগামী রোববার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হবে। তবে প্রথমদফা অবরোধের শেষদিনেও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা জোটের নেতাকর্মীরা। এ সময় বগুড়া ও রূপগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম, রূপগঞ্জ, বগুড়া, নাটোর, নেত্রকোনায় বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। দেশের প্রতিটি মহাসড়ক ছিল অনেকটা ফাঁকা। অবরোধের প্রভাব ছিল রাজধানীতে। আগের দু’দিনের তুলনায় গণপরিবহন কিছুটা বাড়লেও ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল ছিল কম। নৌপথে লঞ্চ চলাচল না করলেও ট্রেন চলাচল করেছে শিডিউল অনুযায়ী। মোতায়েন ছিল পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি’র সদস্যরা।
নাটোর-বগুড়া এবং রাজশাহী মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়ার চেষ্টা করে অবরোধকারীরা। সকালে বগুড়ায় ট্রাকে আগুন ও চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যানবাহন ভাঙচুর, হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এপিসিসহ শটগান থেকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে তিন বিএনপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এছাড়া ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অন্তত দুইটি সিএনজি ও আটটি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়। দুপুরে সদরে মহাসড়কের বারপুরে একটি ট্রাক পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। রূপগঞ্জে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় দু’টি ট্রাকে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ধাওয়া করলে বিক্ষোভকারীরা পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৪ ছাত্রদল কর্মীকে আটক করা হয়। সকালে অবরোধের সমর্থনে টায়ার জ্বালিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জে একাধিক স্থানে বিক্ষোভ করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এদিকে গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন থানার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেছেন। মহানগর দক্ষিণের সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, ধানমণ্ডি, কদমতলী, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, ওয়ারী, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, কলাবাগান থানাসহ বিভিন্ন থানায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করলে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালায়। হামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩০ জন নেতাকর্মী আহত এবং ৪১ জন গ্রেপ্তার হন বলে মহানগর সূত্র থেকে জানা গেছে। সূত্রাপুর- গেণ্ডারিয়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বেগমগঞ্জ নূর মসজিদের সামনে থেকে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে। সেøøাগানমুখর মিছিলটি দয়াগঞ্জ হয়ে শহীদ ফারুক সড়কের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ হামলা করে। এখান থেকে ৪০ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি মাহবুবূর রহমান সহ কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ। ধানমণ্ডি-কলাবাগান থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে ল্যাবএইড হাসপাতালের পাশ থেকে অবরোধের সমর্থনে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হলে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ যৌথভাবে হামলা চালায়।
হামলায় বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হন। এ সময় পুলিশ কলাবাগান থানা বিএনপি’র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ কিবরিয়া লাকিসহ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। শ্যামপুর-কদমতলী থানা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সকালে জুরাইন-দয়াগঞ্জ নতুন সড়কে অবরোধের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে দয়াগঞ্জ নামাপাড়া এলাকাতে পুলিশের হামলার শিকার হয়। এতে হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপি নেতা জাকির হোসেন, তোফায়েল, হিমেলসহ বেশক’জন নেতাকর্মী। এখান থেকে গ্রেপ্তার করে কদমতলী থানাধীন ৫৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র নেতা মো. মোকসেদ মিয়া, কোষাধ্যক্ষ ৫৮ নং ওয়ার্ড বিএনপি, মো. আফজাল হোসেন মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক ৬ নং ইউনিট বিএনপি রাজাবাড়ী, যুববিষয়ক সম্পাদক ৫৮ নং ওয়ার্ড বিএনপিসহ বেশক’জনকে। শ্যামপুর থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা নগরীর ধোলাই পাড় মীরহাজীরবাগ থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি দয়াগঞ্জ রেল সেতুর কাছাকাছি এলে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলার শিকার হয়। হামলায় বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলামসহ বেশক’জন আহত হন। পুলিশ এখান থেকে বিএনপি নেতা কামাল, পিন্টু, রাজু ও লালনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এছাড়া নগরীর বিভিন্নস্থান থেকে আটক করা হয় বিএনপি নেতা কামরুল হাসান (ভুট্টু পাঠান) ৫১ নং ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি আমিনুলসহ ৫ জন, যাত্রাবাড়ী থানার ৫০ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র নেতা আনিসুর রহমান জিতু এবং তার ভাই সুমনকে ধোলাইপাড় থেকে ডিবি গ্রেপ্তার করেছে। আটক করা হয় ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানাসহ ৪ জন ছাত্রদল নেতাকর্মীকে আটক করা হয় ৭০ নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ সাইদুলকে।
এদিকে সন্ধ্যায় ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৪৫৫৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলা দায়ের হয়েছে ৯৬টি। আহত হয়েছেন ৩৪৭৬ জন নেতাকর্মী। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের হামলায় মারা গেছেন একজন সাংবাদিকসহ বিএনপি’র ৯ জন নেতাকর্মী।