রাজপথে উত্তাল তরঙ্গ সৃষ্টি করতে হবে: মির্জা ফখরুল
উন্নত চিকিতসার অভাবে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে সরকারের প্রত্যেককেই হত্যা মামলার আসামী করা হবে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রথম নিউজ, ঢাকা : উন্নত চিকিতসার অভাবে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে সরকারের প্রত্যেককেই হত্যা মামলার আসামী করা হবে হুশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি আরও বলেন, আগামীতে দেশে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার করা হবে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের অষ্টম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গতকাল বুধবার এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব এসব মন্তব্য করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তারা(সরকার) জেনে শুনেই পূর্বপরিকল্পিতভাবে একটা হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশনেত্রীকে হত্যা করতে চায়।” ‘‘ আমরা পরিস্কার করে বলে দিতে চায়, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিতসার অভাবে যদি কোনো দূর্ঘটনা ঘটে তাহলে তাদের প্রত্যেককেই হত্যার আসামী করে বিচার করা হবে।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ আজকে একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, এই সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চায়, তারা এখন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষ যখন দল মতনির্বিশেষে চাচ্ছে তাকে বিদেশে চিকিতসার জন্য পাঠানো হোক, তখনই শেখ হাসিনার সরকার এবং শেখ হাসিনা তারা অত্যন্ত ভয়াবহভাবে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে(খালেদা জিয়া) বিদেশে চিকিতসার জন্য যেতে দিচ্ছে না।”
‘‘ আজকে দেশনেত্রী অত্যন্ত জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে, তখন চিকিতসকরা তাকে বিদেশে উন্নত চিকিতসার জন্য যাওয়ার জন্য বলছেন, তখন বিদেশে যাওয়ার জন্য কোনো ব্যবস্থাই তারা করছে না। উপরন্তু তারা আইনের কথা বলে তাকে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করছেন। কোনো আইন মানুষের চেয়ে বড় নয়। আজকে দেশের জন্য তার যে অবদান, এদেশের প্রতি, এদেশের গণতন্ত্রের প্রতি, এদেশের উন্নয়নের জন্য তার অবদান সেই অবদানকে স্বীকার তাকে এই মুহুর্তে বিদেশে চিকিতসার জন্য পাঠানো দরকার।”
বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিতসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের যে চিকিতসকরা আছেন, তারা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে চিকিতসা দিয়ে যাচ্ছেন, তারা তাদের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করছেন দেশনেত্রীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। গত পরশুও তার রক্তক্ষরণ হয়েছে।”
‘‘ আমি গতকাল ডাক্তারদের সা্থে কথা বলেছি, তারা বলেছেন, আমাদের যে চিকিতসার সুবিধা আছে, যে কারিগরি সোপোর্ট আছে সেই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা এখন যা করছি তা অত্যন্ত সাময়িক। যেকোনো সময়েই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের আংশকা মারাত্মক হয়ে দেখা দিতে পারে।” খালেদা জিয়াকে সুচিকিতসার জন্য বিদেশে পাঠাতে চলমান আন্দোলনকে আরো জোরদার করতে ‘দূর্বার আন্দোলন’ গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
গত ১৩ নভে¤\^র থেকে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিতসাধীন আ্ছনে। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিতসক অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার চিকিতসায় নিয়োজিত রয়েছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির অষ্টম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সারাদেশে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই প্রতিবাদী মানববন্ধন কর্মসূচি হয়। প্রতিবছর এদিনকে বিএনপি গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। খায়রুল হকের বিচার করা হবে: আগামীতে দেশে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে বিচারপতি খায়রুল হকের বিচার করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘‘ ২০১৪ সালের নির্বাচন কেনো বর্জন করেছিলাম আমরা? বর্জন করেছিলাম এজন্য যে, ইতিপূর্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে, জনগনের দাবির প্রেক্ষাপটে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সময়ে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সংযোজন করেছিলেন এই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে যখন দেখেছে যে, জনগন আর তাদেরকে ভোট দেবে না তখন তারা নির্বাচন ব্যবস্থার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে।”
‘‘ এদের নায়ক ছিলেন কে? তার নায়ক ছিলেন ততকালীন প্রধান বিচারপতি বিচারপতি খায়রুল হক(এবিএম খায়রুল হক)। যদি ভবিষ্যতে কোনোদিন সত্যিকার অর্থে জনগনের সরকার আসে, গণতন্ত্রের সরকার আসে তাহলে বিচারপতি খায়রুল হকেরও বিচার হবে গণতন্ত্রকে হত্যার করার জন্য, বাংলাদেশের সংবিধানকে ধবংস করার জন্য, মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ার জন্য।” আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আন্দোনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালের ২৬ মার্চ খালেদা জিয়ার সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা চালু করতে সংবিধান এয়োদশ সংশোধনী পাস করেন। এই সরকারের অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালে ৩০ জুন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করা হয়। ওই সংশোধনীর পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলই বর্জন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনাদের সকলের মনে থাকার কথা ২০১৪ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল তারা বর্জন করেছিলো এবং এই নির্বাচন যে শুধুমাত্র একটি দলকে, কাউকে ক্ষমতায় নিয়ে আসার জন্য পাতানো নির্বাচন হচ্ছে সেইদাবিতে ভোটাররাও সেদিন ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হননি। সেইদিনকার পত্র-পত্রিকাগুলো নির্বাচনের পরের দিন যে পরিবেশ থাকার কথা ছিলো ভোট কেন্দ্রগুলোতে, সেই ভোট কেন্দ্রে দেখা গেছে শুধুমাত্র কুকুরেরা শুয়ে আছে ভোটকেন্দ্রগুলোতে।সেই কারণে আমাদের সংগ্রামী বীর নেতা জাগপার নেতা শফিউল আলম প্রধান(প্রয়াত) তিনি সেটাকে বলেছিলেন যে, কুত্তা মার্কা নির্বাচন হয়েছে।”
‘‘ আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে জনগনের সঙ্গে প্রতারণা করে ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের পরিকল্পিতভাবে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলো ১৯৭৫ সালে এবং এখন আবারো ভিন্ন কায়দায় একই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করে দিয়েছে।” এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সকলকে দূর্বার আন্দোলনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘‘ আমাদের সামনে কঠিন পথ, বন্ধুর পথ। এই পথ আমাদেরকে পাড়ি দিতে হবে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলতার মধ্য দিয়ে।আমাদের অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তরুন নেতা তারেক রহমানের দুরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের মাধ্যমে আজকে সমগ্র বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী শক্তি ও বিএনপি সংগঠিত হচ্ছে। জনগনের উত্তাল তরঙ্গের মধ্য দিয়ে, দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটানো হবে।”
মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় মানববন্ধনে মহানগর দক্ষিনের আহবায়ক চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, নাজিম উদ্দিন আলম,শামীমুর রহমান শামীম, কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু, যুব দলের মোরতাজুল করীম বাদরু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহানগর বিএনপির নবী উল্লাহ নবী, ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি, শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, মতস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, ছাত্র দলের ইকবাল হোসেন শ্যামলসহ মহানগর ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: