যমুনার ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পূর্বপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনের তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

যমুনার ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

প্রথম নিউজ, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পূর্বপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনের তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অসময়ে এমন ভাঙনে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। 

এদিকে যমুনা নদী থেকে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলন ও নদীর পাড়ে খাল বানিয়ে বালুর স্তূপ তৈরি করায় ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, নিকরাইল ইউনিয়নের কোনাবাড়ির একাংশ, পাতিতাপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ভাঙন আতঙ্কে রাত পাড় করছে নদী পাড়ের শত শত পরিবার। রাতে ভাঙন হয় বেশি। এতে মানুষজন তাদের ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে পারেন না। ফলে ঘরবাড়িসহ আসবাবপত্র নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। 

এদিকে ব্যক্তি উদ্যোগে চিতুলিয়াপাড়া ও ভালকুটিয়া গ্রামের মানুষজন তাদে পৈতৃক বসতভিটা যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা করতে মাটি ভরাট করে ব্যাগ ফেলেছেন। তবে তাদের এই উদ্যোগও কোনো কাজে আসছে না। প্রমত্তা যমুনা নদী রাত-দিন ভেঙে যাচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি। এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদীপাড়ের এই পুরাতন জনপদের গ্রামগুলো মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

চিতুলিপাড়া গ্রামের নান্নু ও ফজল বলেন, কয়েকদিনের ভাঙনে শত শত বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও নেই। বাড়িঘর ও জমি রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণেও ভেঙেছে নদীর পাড়। এছাড়া নদী পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলন, বালু পরিবহনের জন্য দানবের মতো ট্রলার চলাচল করায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যমুনা নদীতে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হলেও প্রতিবাদ করা যায় না। শুষ্ক মৌসুমে এসব বালু খেকোরা যমুনার জেগে উঠা চর কেটে বিক্রি করা শুরু করবে। অনেক জমির মালিক কিছু টাকার লোভে বালু ব্যবসায়ীদের কাছে জমি ইজারা দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। আবার কেউ জমি না দিলে জোরপূবর্ক জমি দখল করে বালুর ব্যবসা করছে। প্রতিবছরই যমুনার পানি বৃদ্ধি ও কমতে থাকার সময় ভাঙন শুরু হয়। প্রশাসনও বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

জানা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নে বৈধ ও অবৈধ বালুর ঘাটগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানরা। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও রয়েছেন। এই দুই ইউনিয়নে প্রায় ২৫টি বালুর ঘাট রয়েছে। কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে এসব বালুর ঘাট পরিচালনা হয়ে আসছে। ঘাটপ্রতি মাসে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় ঘাট মালিকদের। এসব টাকা ব্যয় ধরা হয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলের জন্য। এই কনসোর্টিয়ামের কমিটিতে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনে ইতোমধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে নদী পাড়ের মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছে। আরও শতাধিক পরিবার ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। ভাঙন এখনো অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছু অংশে জিও ব্যাগ ফেলেছিল ভাঙন রোধে। যেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে, সেখানে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এছাড়া ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। অতিদ্রুতই তাদের আর্থিক সহায়তা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইশরাত জাহান বলেন, যমুনা নদীতে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনরোধের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ বালু ঘাটের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে ভাঙনের বিষয়টি জানা নেই। সেখানে ভাঙন শুরু হলে সেটি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom