যেখানেই ভোট, সেখানেই আওয়ামী ভোট ডাকাত: রিজভী
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রথম নিউজ, ঢাকা: যেখানেই ভোট, সেখানেই আওয়ামী ভোট ডাকাত বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, রাজসিংহাসন দখলে রেখে অনন্তকাল অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার অসৎ অভিপ্রায়ে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠান, আইন আদালত, পুলিশ, সিভিল প্রশাসন সবকিছু মুঠোই পুরে দুমড়ে মুচড়ে ফেলেছে। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে পাঠিয়েছে কবরে। যেখানেই ভোট, সেখানেই আওয়ামী ভোট ডাকাত—সেখানেই সন্ত্রাস! দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সংগঠনও তাদের কালো থাবায় বিপর্যস্ত। এভাবে চলতে থাকলে দেশকে ভয়ানক গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় রয়েছে ধ্বংসের শক্তি। লন্ডভন্ড নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পেশী—শক্তির উন্মত্ততার হিং¯্র প্রতিফলন দেশের জনগণ অবলোকন করলো সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনেও। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখতে আওয়ামী লীগ যে সকল কুটকৌশল অবলম্বন করছে তার সব কিছুই তারা সদ্য সমাপ্ত সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে প্রয়োগ করেছে। গত ০৬ এবং ০৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতি, কারচুপি, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে যুবলীগের কামড়া—কামড়ি, হাঙ্গামা, সংঘর্ষ, অস্ত্রের মুখে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথিকে সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা, পরে আবার শেখ হাসিনা ও মেয়র তাপসের প্রার্থীকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আইনাঙ্গনের আইনজীবীদের মর্যাদা ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছে। ওরা হিংসা—প্রতিহিংসার পথে দেশের রাজনীতিকে উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। এই ভোট জালিয়াতি ও নিজেদের অপকর্মের ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের জনপ্রিয় সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত মিথ্যা সাজানো মামলায় গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ফলাফল গণনা নাটকের নামে জালিয়াতি করে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে হারিয়ে শেখ হাসিনা ও যুবলীগের চেয়ারম্যান পরশের আপন ভাই মেয়র তাপসের প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হককে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে ভোটে যার সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার কথা তাকে পুরা হয়েছে জেলে! আর যার নিশ্চিত পরাজিত হওয়ার কথা তাকে শেখ হাসিনার নির্দেশে বসানো হয়েছে সম্পাদকের চেয়ারে। ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে যে মামলায় আটক করা হয়েছে সেই মামলায় এক নম্বর আসামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা যুথিকে গ্রেফতার তো দুরের কথা তার নাম নিতেও ভয় পাচ্ছে পুলিশ। গতকাল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান বলেছেন, যুথিকে খুঁজে পাচ্ছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ মামলার পর সেই রাতেই বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
আর যুথিকে খুঁজে পাবে কিভাবে ? এ্যাডভোকেট যুথি হয়তে গণভবনেই অবস্থান করছে। পুলিশ শুধু বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার আগেই খুঁজে গ্রেফতার করে। না পেলে বিএনপি নেতাদের মা—বাবা—স্ত্রী—সন্তান পরিবারের সদস্যদের তুলে নিয়ে যায়। ২০ জনের নামে করা এজাহারে যুথি শুধু এক নম্বর আসামী—ই নয়, দৃশ্যমান আক্রমণকারিদের একজন পৃষ্ঠপোষক। নির্বাচন সাব কমিটির কো—অপ্ট সদস্য সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ গত শুক্রবার রাতে দায়েরকৃত এজাহারে বলেছেন, এক নম্বর আসামির (যুথী) নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নিচ তলার শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অস্ত্র হাতে ঢুকে বাদীসহ নির্বাচন সাব—কমিটির অন্য সদস্যদের গালিগালাজ করেন আসামিরা। দুই আসামি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশে মাথায় আঘাত করতে গেলে বাদী বাধা দেন। এতে তিনি বাঁম কানের উপরে মাথার অংশে মারাত্মক জখম হন। অন্য আসামিরা লাঠি ও চেয়ার দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর এবং লাথি দিয়ে বাদীর শরীরে জখম করেন। তার পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়। এজাহারে আরো বলা হয়, “নির্বাচন সাব—কমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে অস্ত্রের মুখে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করতে বাধ্য করেন এক নম্বর আসামি। নির্বাচন সাব—কমিটির সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ঘটনার সবকিছু ধারণ করা আছে।”
অথচ মামলার পরদিন শনিবার গ্রেপ্তার করা হয় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজলকে। পরশ—তাপস দুই ভাইয়ের মারামারি এবং পারিবারিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সামাল দিতে এবং সম্পাদক পদ দখলের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়েছে কাজলকে। এতো সহিংস ঘটলেও বিচারপতিরা নিশ্চুপ। গত ৬ এবং ০৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে ২০২২ ও ২০২৩ সালের সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের কলঙ্কজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা। ব্যাপক জনপ্রিয় ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার হওয়ার কারণে ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে তাদের ভয়।
২০২২ সালে নির্বাচনে সম্পাদক পদে রুহুল কুদ্দুস কাজল বিজয়ী হলেও নির্বাচনের ৪২ দিন পর সমিতির ৩য় তলায় অবস্থিত কনফারেন্স রুম ভেঙ্গে পুলিশ ও বহিরাগতদের সহায়তায় তথাকথিত ভোট পুনঃগণনার নামে সম্পাদক পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় এবং সম্পাদক অফিস জবরদখল করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালের ১৫ ও ১৬ মার্চ নির্বাচনের সময়ও পুলিশ ও বহিরাগতদের দিয়ে বিএনপির প্রার্থী, ভোটার, সাংবাদিকদেরকে বেধড়ক মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে পুনরায় সমিতি নিজেরা জবরদখল করে রাখে। ২০২৩ সালে কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া সত্ত্বেও ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’ নিজেদেরকে বিজয়ী ঘোষণা করে। এ সবই আওয়ামী লীগের অতীত চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের ভোট জালিয়াতি ও ডাকাতির মাধ্যমে সম্পাদকসহ ১০ পদ দখল করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন ও ফল ঘোষণা হলে সবগুলো পদে বিএনপির প্রার্থীরা নিশ্চিত জয় লাভ করতেন।
অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় এই যে, নানা অনিয়ম ও আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য জাল—জালিয়াতির মাধ্যমে ভোট গ্রহণের পর ০৮ মার্চ ভোরবেলা অডিটরিয়ামের ভিতরে ঘটা নৈরাজ্যকর ঘটনা আওয়ামী লীগের দু’জন প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হক ও নাহিদ সুলতানা যুথী’র সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হলেও উক্ত ঘটনায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও আরও তিনজন আইনজীবী নেতাকে আসামী করে শাহবাগ থানায় একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করার পরই তাদের বাড়িতে/চেম্বারে হানা দেওয়া হয়। এমন আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে যে, অনেক আইনজীবী সুপ্রীম কোর্টে যেতে পারছেন না।
এমন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে গত ২০২২ এবং ২০২৩ সালের সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচন ও সদ্য সমাপ্ত ঢাকা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনের ন্যায় নিজেদের পছন্দ মতো ব্যক্তিদের নাম বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। সম্পাদক পদে ভোট গণনা ছাড়াই আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ পরশের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা যুথিকে সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। পরদিন নির্বাচন সাব—কমিটির প্রধান চাপে পড়ে উক্ত ঘোষণা দিয়েছেন মর্মে একটি বিবৃতি দেন। এরপর গণভবনের পাল্টা চাপে তিনি আওয়ামী লীগের অপর প্রার্থীকে মন্জুরুল হককে সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। এরকম মেরুদন্ডহীন ও দলকানা ব্যক্তিদের দ্বারাই আজকে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের ছত্র—ছায়ায় দেশের কোথাও কোন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, জনগণের ভোটারাধিকারে বিশ্বাসী নয়, বিগত ২০১৪, ২০১৮ এবং গত ৭ জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় নির্বাচনে ইতোপূর্বে তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ প্রমাণ সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। এর আগে ঢাকা আইনজীবী সমিতি নির্বাচনেও একই ধরণের প্রহসনের নির্বাচন করা হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, দেশের সাধারণ মানুষের আইনের আশ্রয় নেওয়ার শেষ ভরসাস্থল, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবীদের সমিতিতে তারা নগ্ন হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু আওয়ামী প্রভুত্ববাদের অধীনতা থেকে মুক্তির সন্ধান একদিন মিলবেই।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি’র পক্ষ থেকে ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করছি এবং অবিলম্বে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তথাকথিত নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করতে হবে। আমি দলের পক্ষ থেকে ব্যারিষ্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং ব্যারিষ্টার ওসমান চৌধুরীসহ গ্রেফতারকৃত বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের নিঃশর্ত মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রিমান্ড বাতিলের জোর আহবান জানাচ্ছি।