যে ৭ কারণে চুল পড়ে, সমাধানে যা করবেন
প্রথম নিউজ, লাইফস্টাইল ডেস্ক : অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। আর এ কারণে বাজারচলতি বিভিন্ন প্রসাধনী চুলের যত্নে ব্যবহার করেন। তবে এতে লাভের চেয়ে আরও ক্ষতি হতে পারে। কারণ চুল পড়ার কিছু কারণ আছে, আর কারণ না জেনে একাধিক চুলের তেল, শ্যাম্পু বা সিরাম ব্যবহার করে আরও বিপদে পড়তে হয়।
বংশগত কারণ ছাড়াও পুষ্টির ঘাটতি এমনকি বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও চুল পড়তে পারে। তাই চুল পড়ার সমস্যা সমাধানের আগে জানতে হবে ঠিক কোন কারণে আপনার অতিরিক্ত চুল পড়ছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক চলুন চুল পড়ার ৭ কারণ ও তা সমাধানের উপায়-
জেনেটিক্স (বংশগত চুল পড়া)
চুল পড়ার একটি পারিবারিক ইতিহাস, যা অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়া নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে চুল পড়ার কারণে মাথায় টাক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে পুরুষদের বয়স ২০ বা ৩০ বছর পর থেকেই চুল পড়ার সমস্যা দেখা দয়। আপনার পরিবারে যদি কারও চুল পড়ে মাথায় টাক দেখা দেয় তাহলে আপনি এ সমস্যা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে কিছু ওষুধ যেমন- মিনোক্সিডিল ও ফিনাস্টারাইড ইত্যাদি গ্রহণ করে বংশগত চুল পড়াকে ধীর করতে পারেন।
হরমোনের পরিবর্তন ও চিকিৎসা অবস্থা
নারীর মেনোপজের সময় হরমোনের ওঠানামার কারণে অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে অ্যান্ড্রোজেন বা পুরুষ হরমোনের প্রভাব বেড়ে যায়। ফলে মেনোপজের সময় ও পরে চুলের ফলিকল কমে যায়, চুল পাতলা হতে পারে। এর সমাধান হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, হরমোন নিয়ন্ত্রণ করুন ও সুষম খাদ্য নিশ্চিত করুন।
পুষ্টির ঘাটতি
বায়োটিনের অপর্যাপ্ত মাত্রার কারণে আপনার চুল ভঙ্গুর হয়ে যায়। আপনি যদি পর্যাপ্ত ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল ও শাকসবজি না খান তাহলে শরীরের পক্ষে আয়রন শোষণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আয়রনের ঘাটতি চুল পড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
মানসিক ও শারীরিক চাপ
মানসিক ও শারীরিক চাপ টেলোজেন এফ্লুভিয়াম নামক একটি অবস্থার সৃষ্টি করে। ফলে অতিরিক্ত চুল পড়ে। স্ট্রেসের কারণে টেলোজেন এফ্লুভিয়ামে প্রচুর সংখ্যক চুলের ফলিকলের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে আক্রান্ত চুলগুলো পড়ে যায়।
এ সমস্যার সমাধানে মেডিটেশন, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর কর্ম-জীবনের ভারসাম্য নিশ্চিত করুন। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন।
কিছু ওষুধ ও চিকিৎসা
বিটা-ব্লকার, ব্লাড থিনার, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ, কিছু ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগস ও থাইরয়েড ওষুধ, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা স্টেরয়েডের মতো ওষুধের কারণেও চুল পড়ে। যদিও এটি তুলনামূলকভাবে অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
তবে আপনি যদি সন্দেহ করেন যে কোনো ওষুধ চুলের ক্ষতির কারণ হচ্ছে তাহলে বিকল্প ওষুধ বা সমাধান খুঁজে বের করুন কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চুলে ক্ষতিকর প্রসাধনীর ব্যবহার
স্টাইলিং সরঞ্জামের অত্যধিক ব্যবহার, চুলের চিকিত্সা ও আঁটসাঁট চুল বাঁধার কারণে চুলের ক্ষতি হতে পারে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ চুলগুলো ভঙ্গুর হয়ে ঝরে যায়। ভেঙে যাওয়ার কারণে চুল রুক্ষ্ম হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত চুল ভেঙে পড়তে শুরু হলে শেষ পর্যন্ত মাথায় টাক দেখা দেয় বা চুল পাতলা হয়ে যায়।
এর সমাধানে প্রাকৃতিক উপায়ে চুলের যত্ন নিন ও ক্ষতিকর প্রসাধনীর ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। পাশাপাশি চুলে আয়রান করা বা হিট দিয়ে স্টাইল করার অভ্যাস কমিয়ে দিন, আঁটসাঁট চুলের স্টাইল এড়িয়ে চলুন ও আপনার চুলের ধরন বুঝে উপযুক্ত পণ্য ব্যবহার করুন।
অটোইমিউন রোগ
অ্যালোপেসিয়া অ্যারেটা নামে পরিচিত এই ব্যাধির কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে চুলের ফলিকলে খারাপ প্রভাব পড়ার কারণে অতিরিক্ত চুল পড়ে। ত্বকের চুল-গঠনের কাঠামোকে চুলের ফলিকল বলা হয়। যদিও অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা শরীরের যে কোনো জায়গায় চুল পড়ার কারণ হতে পারে, এটি সাধারণত মাথা ও মুখে দেখা দেয়।
এই সমস্যার সমাধানে কর্টিকোস্টেরয়েড, ইমিউনোথেরাপি বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।