মোবাইল রেডিয়েশন কি, আপনার ফোনের রেডিয়েশন কীভাবে চেক করবেন

মোবাইল রেডিয়েশন ব্রেইন ক্যান্সার, চোখের সমস্যা, মানসিক চাপ বৃদ্ধি, নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার, হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে

মোবাইল রেডিয়েশন কি, আপনার ফোনের রেডিয়েশন কীভাবে চেক করবেন
মোবাইল রেডিয়েশন কি, আপনার ফোনের রেডিয়েশন কীভাবে চেক করবেন

প্রথম নিউজ, ডেস্ক : এখনকার দিনে স্মার্টফোন আমাদের প্রত্যেকের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ তথা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এই জিনিসটা ছাড়া বর্তমানে এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা কার্যত অসম্ভব বললেই চলে। ছোট্ট এই ইলেকট্রনিক গ্যাজেটটির গুরুত্ব এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, মানুষ খাবার না খেয়েও দিনকয়েক বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু মোবাইল ডেটা কিংবা ব্যাটারি শেষ হয়ে গেলে ইউজারদের রীতিমতো প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়! উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে নির্মিত এই ডিভাইসটির ভালো এবং মন্দ দুটি দিকই রয়েছে। কিন্তু প্রচুর সংখ্যক ভালো গুণ থাকার জন্য কিছু মন্দ দিক সম্পূর্ণভাবে মানুষের নজর এড়িয়ে যায়, যার মধ্যে অন্যতম একটি হল মোবাইল রেডিয়েশন (Mobile Radiation)। স্মার্টফোন কিনতে গিয়ে সাধারণত ক্যামেরা কত মেগাপিক্সেলের, ইন্টারনাল মেমোরি কত জিবি, কিংবা ব্যাটারি ব্যাকআপ কত ঘণ্টার – এই সমস্ত তথ্য জানতেই ক্রেতারা বেশি আগ্রহী হয়ে থাকেন। কিন্তু ফোনের রেডিয়েশন লেভেল কত, তা জানার কথা অধিকাংশ মানুষের মাথাতেই আসে না। যদিও ভালো স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার যে রেডিয়েশন লেভেল, একথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যদিও দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন যে মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন মারাত্মক স্বাস্থ্যসমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু তা জানা সত্ত্বেও বিষয়টিকে বিন্দুমাত্র গুরুত্ব না দিয়ে ক্রমশ মানুষ মোবাইলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে চলতি সময়ে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত এবং নিরাপদে থাকতে গেলে এই বিষয়টি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা কিন্তু একান্ত আবশ্যক৷ তাই এই প্রতিবেদনে আমরা মোবাইল রেডিয়েশন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আপনাদেরকে জানাতে চলেছি।

মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশন কী?

যেকোনো ডিভাইসের একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি নেটওয়ার্কের প্রয়োজন হয়। মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য। তাই স্মার্টফোনের নেটওয়ার্কের জন্য টেলিকম সংস্থাগুলি প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় টাওয়ার বসায়। আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি যে, নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে বিকিরণ অর্থাৎ রেডিয়েশন দুই ধরনের হয় – প্রথমটি টাওয়ারের রেডিয়েশন এবং দ্বিতীয়টি মোবাইলের রেডিয়েশন। এক্ষেত্রে টাওয়ারের রেডিয়েশন চেক না করা গেলেও আপনি আপনার মোবাইলের রেডিয়েশন কিন্তু খুব সহজেই চেক করতে পারেন। আর-একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, টাওয়ারের রেডিয়েশনের সঙ্গে আমাদের শরীরের সরাসরি কোনো যোগাযোগ হয় না, তাই এর বিশেষ কোনো প্রভাব আমাদের উপর পড়ে না। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা হাতে ফোন থাকার দরুন মোবাইল রেডিয়েশন আমাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে। আমরা যে মোবাইল ফোনগুলি ব্যবহার করি, সেগুলি থেকে একটি বিশেষ ধরনের তরঙ্গ (ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন) নির্গত হয়, যা মানবশরীরের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এই মোবাইল রেডিয়েশন মানসিক অবসাদের মতো বেশ কিছু মারণ রোগের কারণ হতে পারে। তাই আপনি যে মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছেন, সেটির রেডিয়েশনের মাত্রা আপনার জেনে রাখা খুবই জরুরি। এর জন্য আপনাকে আপনার ফোন থেকে *#০৭# ডায়াল করতে হবে। এই নম্বরে ডায়াল করলেই মোবাইলের স্ক্রিনে চলে আসবে রেডিয়েশন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য। এটি দুটি উপায়ে বিকিরণের মাত্রা দেখায় – একটি ‘হেড’ এবং অন্যটি ‘বডি’। ‘হেড’ অর্থাৎ ফোনে ইন্টার‌্যাক্ট করার (কথা বলার) সময় মোবাইল রেডিয়েশনের মাত্রা কত এবং ‘বডি’ অর্থাৎ সাধারণভাবে মোবাইল ব্যবহার কিংবা পকেটে রাখলে সেটি থেকে কী পরিমাণ রেডিয়েশন নির্গত হয়।

মোবাইল রেডিয়েশনের ফলে কী কী ক্ষতি হতে পারে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইল রেডিয়েশন ব্রেইন ক্যান্সার, চোখের সমস্যা, মানসিক চাপ বৃদ্ধি, নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার, হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে। এইমস (AIIMS) এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (ICMR) একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, মোবাইল রেডিয়েশনের কারণে একজন ব্যক্তি বধির হয়ে যেতে পারে, এমনকি নপুংসক হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। যদিও এখনও পর্যন্ত এর কোনো অকাট্য প্রমাণ জনসাধারণের সামনে প্রকাশিত হয়নি।

মোবাইলের রেডিয়েশন কত হওয়া উচিত?

আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি যে, ‘এসএআর ভ্যালু’ (SAR অর্থাৎ স্পেসিফিক আবসর্পশন রেট) দিয়ে ফোন সহ বিভিন্ন ডিভাইসের রেডিয়েশনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের টেলিমন্ত্রক দফতরের নির্দেশিকা অনুসারে, যে-কোনো স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসের ক্ষেত্রে এই এসএআর ভ্যালু প্রতি কিলোগ্রামে ১.৬ ওয়াটের বেশি হওয়া উচিত নয়। এমনকি, মানবশরীর থেকে কোনো ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের মধ্যে ১০ মিলিমিটার দূরত্বের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে আপনার ব্যবহৃত স্মার্টফোনটি যদি এই সীমা অতিক্রম করে যায়, তবে তা আপনার স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই বিপজ্জনক। এমত পরিস্থিতিতে অবিলম্বে সেটি বদলে নেওয়াই শ্রেয়।

ক্ষতিকর রেডিয়েশন এড়ানোর উপায় কী?

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, মোবাইলের রেডিয়েশন বন্ধ করা যাবে এমন কোনো উপায় এখনও আবিষ্কৃত হয়নি, কিন্তু ইউজাররা চাইলেই কিছু সময়ের জন্য হলেও এই মারাত্মক বিকিরণের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এর জন্য তাদেরকে ছোটোখাটো কয়েকটি কাজ করতে হবে। যেমন – ফোন চার্জে থাকাকালীন অবস্থায় কখনোই কাউকে কল করা উচিত নয়। কারণ চার্জিংয়ের সময় স্মার্টফোনের রেডিয়েশন ১০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, সিগন্যাল কমজোরি হলে কিংবা ব্যাটারির চার্জ কমে আসলে কাউকে ফোন না করাই শ্রেয়, কেননা এই সময়েও ফোনের রেডিয়েশনের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে যদি একান্তই কাউকে ফোন করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তখন হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে শরীরের ওপর রেডিয়েশনের প্রভাব অনেকটাই কম পড়বে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom