মুন্সীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত অর্ধ শতাধিক
শুক্রবার বিকালে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার লঞ্চঘাটে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রথম নিউজ, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের দুইপক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকালে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার লঞ্চঘাটে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতের অধিকাংশের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় বলে জানা গেছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং আহত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শুক্রবার দুপুরে গজারিয়া উপজেলা থেকে ৭৫টি ট্রলারে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সদর উপজেলার উদ্দেশ্যে রওনা হন। বিকাল ৫টার দিকে ট্রলারগুলো মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার লঞ্চঘাট এলাকায় পৌঁছালে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের ভাই মনির হোসেনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় লাঠিসোটা নিয়ে উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সময় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের অধিকাংশই গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর সমর্থক বলে জানা গেছে।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, হামলার ঘটনার পর অনেকে গজারিয়াতে ফিরে এসেছেন। আহতদের মধ্যে ৩৩ জন গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এখনো হাসপাতালে রোগী আসছে। ১১ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং ৪ জনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল ও কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিকেও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকবুল হোসেনের ভাই মনির হোসেন ও তার লোকজন পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের ইমেজ নষ্ট করতে চেয়েছে। তাদের হামলায় অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচার চাই।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকবুল হোসেন বলেন, ট্রলারে করে গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিন্নাহর লোকজন শহরের হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার লঞ্চঘাটের অদূরে বেড়িবাঁধে আসে। সেখানে আমার ছোট ভাইয়ের পায়ে ধাক্কা লাগে জিন্নাহর লোকজনের। এরপর তারা মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার পথে পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা আমার বড় ভাই মনির হোসেনকে ও তার কয়েকজন সমর্থককে বেধড়ক মারধর করে। সব দোষ জিন্নাহ সমর্থকদের।
বিষয়টি সম্পর্কে সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে। এ সময় উভয়পক্ষের লোকজন সরে পড়ে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। এদিকে শহরের পিটিআই মোরে মুন্সীগঞ্জ পৌর মেয়র আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও কেক কাটা হয়। জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলস্থল জনসমুদ্রে রূপ নেয়। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধুর চিফ সিকিউরিটি অফিসার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
মুন্সীগঞ্জ পৌর মেয়র মো. ফয়সাল বিপ্লবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সোহানা তাহমিনা, গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সোহেল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির মাস্টার, চরকেওয়ার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান জীবন, শিলই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. পারভেজ মৃধা, মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রিপন পাটোয়ারী, বজ্রযোগেনী ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলামসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।