মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাইলে আগে তিস্তার পানি দেন, ভারতকে মির্জা ফখরুল

মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাইলে আগে তিস্তার পানি দেন, ভারতকে মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, লালমনিরহাট : ভারতকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষদের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব রাখতে চান তবে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা দেন। সীমান্তে হত্যা বন্ধ করে, বড় দাদাদের মতো ব্যবহার বাদ দেন। আমরাও আপনাদের সঙ্গে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করতে চাই। তবে সেটি নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায় করেই। গতকাল তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের দু’দিন ব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনকালে রংপুর অঞ্চলের লালমনিরহাট তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ১৫ বছর লড়াই করেছি। আমাদের ছেলেদের ৩৬ দিনের লড়াইয়ের মাধ্যমে হাসিনা ভারতে পালিয়েছে। একদিকে তো আমাদের পানি দিচ্ছেন না, অন্যদিকে আমাদের শত্রুকে রাজার হালে বসিয়ে রেখেছেন দিল্লীতে। তিনি (হাসিনা) আবার সেখান থেকে আওয়ামী লীগের হুকুম জারি করছেন। দেশে কি আর আওয়ামী লীগ বলতে কিছু আছে। সবাই পালিয়েছে দেশ ছেড়ে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, কথায়, কথায় তো বলেন আপনারা নিরপেক্ষ। এই জায়গায় (তিস্তা ইস্যু) নিরপেক্ষ থাকলে চলবে না। মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। আপনারা যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, তাই দ্রুত নির্বাচন দিন এবং জনগণের সরকারের কাছে ক্ষমতা দেন। তিস্তা আমাদের বাঁচা-মরার সংগ্রাম। এই সংগ্রাম বন্ধ হবে না। আমরা এই সংগ্রাম বন্ধ হতে দেব না।

বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, আমরা নাকি শুধু শুধু নির্বাচন নির্বাচন করছি। কিন্তু বারবার নির্বাচন কেনো চাইছি সেটা তো কেউ জানতে চাইলো না। আমরা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকারকে সংসদে পাঠাতে চাই। কারণ দেশের উন্নয়ন জনগণের সরকার ছাড়া সম্ভব না। গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন না দিয়ে দেশের মানুষদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। এ দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়, এজন্য আমরা নির্বাচন চাইছি। তিনি বলেন, বহুদিন থেকে আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। পাকিস্তান আমলে পাকিস্তানের নেতারা গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা চেয়েছিল, কিন্তু পায়নি। বাংলাদেশ হওয়ার পর আমরা দাবি জানিয়েছি, কিন্তু পাইনি। যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলো তখন দেশের মানুষ ভাবলো, ভারতের সাথে যেহেতু আওয়ামী লীগের সুসম্পর্ক তাই হয়তো এবার তিস্তার পানি পাওয়া যাবে। কিন্তু পেলাম আমরা লবডঙ্কা! ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ভারতের কাছে পুরো বাংলাদেশকে বেচে দিয়েছে কিন্তু এক ফোটা পানি আনতে পারে নাই। শুধু যে তিস্তা তা নয়, ভারত থেকে আসা ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ।

তিনি আরো বলেন, তিস্তার পাড়ে আমরা যারা বসবাস করি, তাদের তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী, বিএনপি নেতা দুলু ভাই জাগিয়ে তুলেছেন। মানুষ স্লোগান দিচ্ছে জাগো বাহে কোনঠে সবায়, দুলু ভাই ডাক দিয়েছে আইসো সবায় তিস্তা বাঁচাই। মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীও গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। আজ দুলু ভাই একইভাবে দাঁড়িয়ে তিস্তার ১১টি পয়েন্টে হাজার হাজার মানুষ জড়ো করে ডাক দিয়েছেন জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই। এটি শুধু স্লোগান নয়, এর মাধ্যমে তিস্তাপাড়ের মানুষদের বাঁচার তাগিদ, বাঁচার আহাজারি বেরিয়ে এসেছে। তাই তো পুঁটলি বেধে দূরদূরান্ত থেকে চলে এসেছেন মানুষরা।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পী বেবি নাজনীন, জেপির সভাপতি মোস্তফা জামান হায়দার, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক প্রমুখ।